চকোলেট থেকে অ্যালার্জি কাদের হতে পারে? ছবি: ফ্রিপিক।
চকোলেট ভালবাসেন না, এমন মানুষ কমই আছেন। এক টুকরো খেলেই যেন মন ভাল হয়ে যায়। এই চকোলেট থেকেও কি অ্যালার্জি হতে পারে? শুনলেই অবাক লাগে। কিন্তু, সম্প্রতি তেমনটাই হয়েছে মুম্বইয়ে। বছর চব্বিশের এক মহিলা চকোলেট খাওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর সারা গায়ে র্যাশ বেরিয়েছে, প্রবল মাথাযন্ত্রণা, বমি। এখন কথা হল, চকোলেট থেকে কি সত্যিই অ্যালার্জি হওয়া সম্ভব?
এই বিষয়ে চিকিৎসক সোনালি ঘোষের বক্তব্য, “আমি নিজে চকোলেট খেতে খুব ভালবাসি। আজ পর্যন্ত অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে চকোলেটে যে কোকো পাউডার থাকে, তাতে ক্যাফিনের মাত্রা খুব বেশি। এই ক্যাফিন কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। শরীরে বেশি মাত্রায় কোকো পাউডার গেলে প্রদাহ হতে পারে। তবে তা সকলের হবে, এমন নয়। এই রোগ খুবই বিরল। কম জনেরই হয়েছে।”
কোকো পাউডার শরীরের জন্য ততটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু চকোলেট তৈরির সময়ে কোকোর সঙ্গে দুধ, মাখন, বিভিন্ন রকম বাদাম মিশছে। স্বাদ বাড়ানোর জন্য মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন রকম উপাদান। সেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া অসম্ভব নয়। এমনটাই মত সোনালির। তাঁর কথায়, অ্যালার্জি নানা কারণেই হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে তখন অ্যালার্জিজনিত সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তা ছাড়া ক্যাফিন কতটা শরীরে যাবে, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে। অতিরিক্ত ক্যাফিন শরীরে গেলে তা বুক ধড়ফড়ানির মতো উপসর্গ বাড়িয়ে তুলতে পারে। অনিদ্রার সমস্যা বাড়তে পারে। ক্যাফিন হজম ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। যদি দিনে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিনও শরীরে ঢোকে, তা হলে পাঁচ ঘণ্টা পরেও ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফিনের প্রভাব শরীরে থেকে যায়। ক্যাফিন পুরোপুরি হজম হতে অনেক সময় লেগে যায়।
অ্যালার্জির ফলে অনেক সময়েই বিপজ্জনক উপসর্গও দেখা দেয়। যেমন চকোলেট খেয়ে ত্বকের সংক্রমণ হয়েছে, এমনও শোনা গিয়েছে। তবে তা নির্ভর করে অ্যালার্জেন এবং এর প্রতি আক্রান্ত রোগীর সংবেদনশীলতার উপর। চিকিৎসক বলছেন, অনেক সময়ে দেখা যায় কোষ থেকে হিস্টামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক বার হয়। এই হিস্টামিনই নানা রকম অ্যালার্জি, চোখের প্রদাহ, ত্বকের রোগের জন্য দায়ী। তবে তা শুধু ক্যাফিনের জন্য হবে তা নয়, আরও বিভিন্ন জিনিস থেকে হতে পারে। তখন শ্বাসকষ্ট, শরীরের বিভিন্ন অংশে বা সারা শরীর জুড়ে ফোলাভাব, দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, এমন লক্ষণও দেখা দেয়।
চকোলেটে অ্যালার্জি বিরলের মধ্যে বিরলতম, এটি নিয়ে গবেষণা চলছে বলেই জানালেন পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী। তাঁর মতে, “সাধারণত রোগীর বর্তমান অবস্থা যেমন অ্যালার্জিক অ্যাজ়মা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, মেটোপিক ডার্মাটাইটিস, নির্দিষ্ট কিছু খাবারে অ্যালার্জি ইত্যাদি আগে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। যদি অ্যালার্জির ধাত থাকে, তা হলে ক্যাফিন থেকেও তা হতে পারে। যেমন উইলসন রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় কপার বা তামা থেকে মারাত্মক অ্যালার্জি হচ্ছে। যদি সত্যিই দেখা যায়, কেবল চকোলেট খেলেই অ্যালার্জি হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগীর বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।” কী ধরনের চকোলেট খাচ্ছেন তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। কেনার আগে অবশ্যই উপাদানগুলি দেখে নিতে হবে।