আপনারও কি এইসব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ছবি: ফ্রিপিক।
জল কম খাওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনই বেশি খেলেও বিপদ। শরীর তরতাজা রাখতে পর্যাপ্ত জল খাওয়ার কথাই বলেন চিকিৎসকেরা। তাই বলে সারাদিন ঢকঢক করে জল খেয়ে যাওয়া কোনও কাজের কথা নয়। শরীরের কলকব্জা ঠিক রাখতে হলে জলের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি নিঃসন্দেহে। তবে ঠিক কোন সময় কতটুকু জল শরীরে দরকার তা-ও জানা উচিত। এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মত, “শরীর হল যন্ত্রের মতো। যাকে চালাতে জল অবশ্যই দরকার। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণে। প্রয়োজনের বেশি জল শরীরে গেলে তখন তা বিগড়ে যাবেই!”
বেশি জল খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানাচ্ছেন, হাত-পা, গোড়ালি ফুলতে শুরু করবে। পেটে জল জমতে থাকবে যা চাপ দেবে যকৃৎ ও পাকস্থলীকে। শরীরের প্রতি কোষেরই নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা থাকে। কিন্তু তার বেশি হয়ে গেলে তখন শরীরে প্রদাহ শুরু হবে। অতিরিক্ত জল শরীরে জমতে থাকলে যে শারীরিক অবস্থা তৈরি হয়, তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘ওভারহাইড্রেশন’। এর জেরে শরীরে জল ও লবণের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। তখন হরমোনের সমস্যাও দেখা দেয়।
অনেক সময়েই শুনবেন লোকজন বলছে যে, শরীরে জল জমে যাচ্ছে। আচমকা ওজন বাড়ছে, হাত-পা ফুলছে। এই সব লক্ষণ দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে।
চিকিৎসকের কথায়, মানুষের শরীরে ৫০-৬০ ভাগ জল থাকে। জল, খনিজ লবণ ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকলেই শরীর সুস্থ ও তরতাজা থাকে। এই ভারসাম্য যদি নষ্ট হয়ে যায়, তখন বিভিন্ন অসুখবিসুখ দেখা দিতে থাকে। জলের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তা হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এর প্রভাব পড়বে হার্টে। তখন বুকে ব্যথা শুরু হবে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হৃৎস্পন্দনের হার ওঠানামা করবে। সেই সঙ্গেই প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ হবে, বুক ধড়ফড় করতে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল কিডনিতে চাপ দেবে।
শরীরে জল জমে আরও বিভিন্ন কারণে
সুবর্ণ বলছেন, কেবল জল খাওয়া নয়। আরও বিভিন্ন কারণে শরীরে জল জমতে পারে। যেমন, ফুসফুস বা কিডনিতে কোনও জটিল রোগ বাসা বেঁধে থাকলে, তার থেকেও জল জমতে পারে। লিভার সিরোসিস হলে প্রথমে পেটে ও পরে পায়ে ও বুকে জল জমে যায়। কিডনির সমস্যা থাকলেও ‘ওভারহাইড্রেশন’ হতে পারে। যদি কিডনি বিকল হতে থাকে, তা হলে পায়ে ও বুকে জল জমে যাবে। ডায়াবিটিসের রোগীরাও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ, ‘ওভারহাইড্রেশন’-এর লক্ষণ বুঝলে, নুন কম খেতে হবে। ঘন ঘন চা বা কফি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অ্যালকোহল ছোঁবেনই না। বেশি করে খেতে হবে সবুজ শাকসব্জি, ফল। পাতে রাখুন টম্যাটো, কলা, শসা, বাঁধাকপি, পালং শাক। হালকা, কম তেলে রান্না খাবার খান ও শরীরচর্চা করুন। তবে রোগ একবার ধরে গেলে কী ধরনের শরীরচর্চা করবেন তা প্রশিক্ষকের থেকে জেনে নেবেন।