প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ছবি: ফ্রিপিক।
খুচরো খিদে মেটাতে পিৎজা, বার্গার, সসেজ-সালামিকেই বেছে নিচ্ছেন কমবয়সিরা। পুষ্টিকর খাবারের স্বাদ মুখে ঠিক রুচছে না। খিদে পেলেই ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবারের প্রতিই ঝোঁক বাড়ছে। আর তার ফলও হচ্ছে মারাত্মক। প্রক্রিয়াজাত এইসব খাবার যে কেবল স্থূলত্বের কারণ তা নয়, আরও বিভিন্ন জটিল রোগের উৎপত্তিও হচ্ছে। আমেরিকার অ্যালঝাইমার্স অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকেরা প্রায় দেড় লাখ মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দাবি করেছেন, হট ডগ, সসেজ, বেকনের মতো খাবার লাগাতার খেতে শুরু করলে স্মৃতিনাশ, অ্যালঝাইমার্সের মতো অসুখের ঝুঁকি বাড়বে।
গবেষক উহান লি জানাচ্ছেন, হার্টের অসুখ, ডায়াবিটিস হানা দিচ্ছে বয়ঃসন্ধিতেই।কম বয়স থেকেই মেদ জমছে শরীরে। শুধু তাই নয়, মানসিক দিক থেকেও বিভিন্ন জটিল অসুখ দেখা দিচ্ছে যার অন্যতম কারণই হল অতিরিক্ত ‘জাঙ্ক ফুড‘ খাওয়ার প্রবণতা। আমেরিকার অ্যালঝাইমার্স অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা বলছে, নিয়মিত তেলমশলায় ভরা ‘ফাস্ট ফুড’ খেলে অনেকটাই বেড়ে যায় স্মৃতিনাশের ঝুঁকি। ১ লাখ ৩০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। সকলেরই বয়স ছিল ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। দেখা যায়, যাঁরা সপ্তাহে দু’দিন করে রেড মিট বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খেয়েছেন, তাঁদের স্মৃতিনাশের ঝুঁকি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। টাইপ ২ ডায়াবিটিসের লক্ষণও দেখা দিয়েছে।
স্মৃতিনাশ বা ‘ডিমেনশিয়া’-র কারণ অনেক। গবেষক লি-র মতে উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, কায়িক শ্রমের অভাব, অতিরিক্ত মদ্যপান, মস্তিষ্কের আঘাত, বায়ু দূষণ— এগুলি স্মৃতিনাশের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গেই রয়েছে খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস। গবেষণা বলছে, রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কোলস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। তার থেকে লিভারে মেদ জমতে শুরু করে। প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশিখেলে লিভারে কয়েকরকম ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে যারা মাংসের কারনিটিন নামের উপাদান ভেঙে গিয়ে ট্রাইমিথাইল্যামিন নামক যৌগে পরিণত করে। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। হার্টের অসুখের কারণ হতে পারে। তা ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবার সংরক্ষণের জন্য যে ‘প্রিজ়ারভেটিভ’ ব্যবহার করা হয় তা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। দিনের পর দিন এই ধরনের রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে।
নরম পানীয় ও অ্যালকোহলও সমান ক্ষতিকর। প্যাকেটজাত জুস বা নরম পানীয়ে প্রিজ়ারভেটিভস ছাড়াও মেশানো হয় রং এবং ফ্লেভার। বাজারচলতি জুসের প্যাকেটে যে সব রাসায়নিক থাকে তা মস্তিষ্কের সচলতা কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন রকম স্নায়ুর রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। বাড়িতে তৈরি ফলের রস অনেক পাতলা হয়। কিন্তু প্যাকেটবন্দি রসের ঘনত্ব বেশি। রাসায়নিকের মাধ্যমেই তা করা হয়। তাই সেগুলি ক্ষতকির। তাই এইসব প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকেরা।