কোন কোন লক্ষণে স্পষ্ট হবে শরীর লম্বা বিশ্রাম চাইছে। ছবি: ফ্রিপিক।
শরীরের নাম যতই ‘মহাশয়’ বলে হাঁকডাক করুন না কেন, তারও সইবার একটা ক্ষমতা রয়েছে। প্রয়োজনের বেশি কাজ, অতিরিক্ত পরিশ্রম আর কম ঘুম, শরীর কিন্তু বেশি দিন সইবে না! যদি দেখেন, ঘুমের আগে ক্লান্তি, ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্তি, সারা দিনই যেন জোর করে নিজেকে ঠেলে নিয়ে যেতে হচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে, শরীর সঙ্কেত দিচ্ছে। তারও একটা লম্বা বিশ্রাম চাই।
অনেকেই মনে করেন, টানা ঘুমোলেই শরীর বিশ্রাম পাবে। তা কিন্তু একেবারেই নয়। দিনভর অনিয়মের বোঝা, উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার পাহাড় ঠেলতে ঠেলতে শরীর ও মন এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে, তার কিছু উপসর্গ ফুটে ওঠে শরীরে। সেগুলি এড়িয়ে গেলে চলবে না।
কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন, আপনার শরীরের বিশ্রামের প্রয়োজন?
১) ক্লান্তি যাবেই না। ঘুমিয়ে ওঠার পরেও মনে হবে শরীর খুব পরিশ্রান্ত। হাঁটাচলা করার ইচ্ছাও থাকবে না। বেশি ক্ষণ বসে থাকতেও ইচ্ছা করবে না।
২) মন বসবে না কাজে। উৎসাহ কমবে। রোজের কাজেও বিস্তর ভুল হবে। ভাবনাচিন্তা গুলিয়ে যেতে থাকবে, ছোট ছোট বিষয়ও ভুলে যাবেন। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হবে। মন ও মস্তিষ্কের এমন পরিস্থিতিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, ‘ব্রেন ফগ’। এই বিষয়ে মনোবিদ শর্মিলা সরকারের মত, “ব্রেন ফগ হল মন ও মস্তিষ্কের এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে ভাবনাচিন্তার গতি শ্লথ হয়ে যায়, স্মৃতি লোপ পেতে পারে, মনোযোগের অভাব হয়। একে মস্তিষ্কের ধোঁয়াশাও বলা হয়। প্রচণ্ড মানসিক ক্লান্তি, কম ঘুম, সঠিক পুষ্টির অভাব, হরমোনের গন্ডগোল থেকে এমন সমস্যা হতে পারে। এই পরিস্থিতি সাধারণত সাময়িক। তবে জীবনধারা না বদলালে এবং শরীর উপযুক্ত বিশ্রাম না পেলে, তা মানসিক অবসাদের কারণও হয়ে উঠতে পারে।”
৩) লাগাতার মাথা যন্ত্রণা হতে থাকবে। বিশ্রামের সময়েও মাথাব্যথা করবে। মাথা ঘোরা, বমি ভাব থাকবে। পছন্দের খাবারও খেতে ইচ্ছে করবে না।
৪) ঘন ঘন বদলে যাবে মেজাজ। বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বেন। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়েও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে অশান্তি হবে। ঘুমোনোর সময়ে হাবিজাবি চিন্তা ঘুরবে মাথায়। যে কোনও বিষয়েই দুশ্চিন্তা বাড়বে।
৫) পেটের গোলমাল লেগেই থাকবে। যা খাবেন, ঠিক মতো হজম হবে না। গ্যাস-অম্বল থাকলে তা আরও বাড়বে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ভোগাতে পারে। মাঝেমধ্যেই পেটে যন্ত্রণা, অস্বস্তি হবে।
৬) আপনি কি ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন? জ্বর, সর্দি-কাশি লেগেই থাকছে। আচমকাই গা, হাত-পায়ের যন্ত্রণা ভোগাচ্ছে। পর্যাপ্ত জল খেলেও শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে। বার বার পিপাসা পাচ্ছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে হবে, বিশ্রামের ঘাটতির কারণেই এমন হচ্ছে।
৭) শরীর যতই ক্লান্ত থাক, ঘুম ঠিকমতো হবেই না। দিনের যে কোনও সময়ে হঠাৎ ঘুম পাবে, শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হবে। ঘুমোনোর সময়ে শরীরে অস্বস্তি, জোরে জোরে নাক ডাকার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। একটানা ঘুম হবে না। বারে বারেই ঘুম ভেঙে যাবে।
এই সব লক্ষণ যদি আপনারও দেখা দিতে থাকে, তা হলে সতর্ক হোন। বিশ্রামের পাশাপাশি শরীর ডিটক্স করা বা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ দূর করাও জরুরি। কোন কোন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ঘাটতি হচ্ছে, তা জানতে চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে হবে।