—প্রতীকী ছবি।
ভিটামিন ডি-র ঘাটতি হয়েছে কি না তা জানতে বিশেষ এক রকম রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। এই পরীক্ষা পদ্ধতির নাম ২৫-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি টেস্ট বা ২৫-ওএইচ ভিটামিন ডি টেস্ট। কলকাতা শহরেও এই পরীক্ষা করা হয়। ভিটামিন ডি-র অভাব জানতে যে সব স্ক্রিনিং টেস্ট রয়েছে, তার মধ্যে ২৫-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এই পরীক্ষা পদ্ধতিকে মান্যতা দিয়েছে। রক্তের এই বিশেষ পরীক্ষা করালে কী কী জানতে পারা যায়? পরীক্ষার খরচই বা কত, বিশদে জানালেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।
শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব হচ্ছে কি না, তা বোঝা যায় না অনেক সময়েই। সে কারণেই ২৫-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি টেস্ট জরুরি। এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মত, “বয়সকালে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা হলে অনেকেই ভাবেন যে বাতের ব্যথা। আবার যদি খিদে কমে যায়, ত্বকে জ্বালা ভাব থাকে, চুল ঝরতে শুরু করে, নখ ভেঙে যেতে থাকে, তা হলে অন্য অসুখ ভেবে এড়িয়ে যান অনেকেই। এমন সব উপসর্গ দেখলেই আমরা ভিটামিন ডি স্ক্রিনিং করিয়ে নিতে বলি। যদি সমস্যা গভীরে হয়, তা হলে রোগীর অবস্থা দেখে হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি টেস্ট করতে বলা হয়।” চিকিৎসক জানালেন, এই পরীক্ষা করলে অনেক গভীরে গিয়ে বোঝা যায়, ভিটামিন ডি-র ঘাটতি কতটা হচ্ছে। হাড় দুর্বল হয়ে পড়ছে কি না বা হাড়ের ঘনত্ব কমে যাচ্ছে কি না। শরীরে পুষ্টির ঘাটতিও বোঝা যায় এই টেস্ট করালে।
কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিগুলিতে ভিটামিন ডি স্ক্রিনিং টেস্ট এবং ভিটামিন ডি হাইড্রক্সি টেস্ট করানো হয়। শরীরে ভিটামিন ডি-র স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে ২০ থেকে ২৫ ন্যানোগ্রাম। এর কম বা বেশি হলেই মুশকিল। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের বক্তব্য, “ভিটামিন ডি হাইড্রক্সি টেস্টের খরচ খুব কম নয়। শহরের বেশির ভাগ বড় হাসপাতালেই এই পরীক্ষা হয়। সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার খরচ ১৪০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। কোন হাসপাতালে পরীক্ষা করাবেন, তার উপর খরচ নির্ভর করবে।”
পরীক্ষার খরচ কত? কী কী ধরা পড়ে?
সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মতোই এই টেস্ট। শিরা থেকে রক্ত নেওয়া হয়। ফলাফল এক দিনেই এসে যায়। ২৫-হাইড্রক্সি পরীক্ষায় ভিটামিন ডি-এর মাত্রা ন্যালোমোল প্রতি লিটারে মাপা হয়।
স্বাভাবিক মাত্রা ৫০ থেকে ১২৫ ন্যানোমোল প্রতি লিটারে। যদি মাত্রা ৩০-এর কম হয়, তা হলে বুঝতে হবে ভিটামিন ডি-র ভাল রকম ঘাটতি হয়েছে।
৩০ থেকে ৫০ এর মধ্যে হলে বুঝতে হবে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমতির দিকে। যদি ১২৫ ছাড়িয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে ভিটামিন ডি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ কিছু ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট খেলে এমন হতে পারে।
চিকিৎসক জানালেন, হাইড্রক্সি ভিটামিন-ডি টেস্ট থেকে রিকেট ও অস্টিয়োপোরেসিস আছে কি না তা বোঝা যাবে। বয়স বাড়লে বিভিন্ন কারণে হাড়ের ক্যালশিয়াম-সহ অন্যান্য উপাদান কমে গেলে হাড় পলকা হয়ে যায়, ফলে সামান্য চোট-আঘাতে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই অবস্থাকে বলা হয় অস্টিয়োপোরাসিস। ঋতুবন্ধের পর মহিলাদের পোস্ট মেনোপজ়াল অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। ভিটামিন ডি হাইড্রক্সি টেস্ট করালে সবটাই ধরা পড়ে। তখন হাড় কী কারণে দুর্বল হচ্ছে, কেন শরীরে ক্যালশিয়াম বা ফসফরাস কমছে, তা বোঝা যাবে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনও অসুখের কারণে নিয়ম করে কর্টিকোস্টেরয়েড খেতে হয় অনেককে। তাঁদের হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এমন রোগীদের ২৫-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি টেস্ট করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পরীক্ষার খরচের বিষয়ে জানতে কলকাতার ডা. লাল প্যাথ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, সেখান থেকে জানানো হয়, ২৫-হাইড্রক্সি টেস্টের খরচ ১৪০০ টাকা। এর জন্য চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের দরকার নেই। বুক করলে গিয়ে রক্ত নিয়ে আসবেন ল্যাবের কর্মীরা। সকালে রক্ত নিলে সন্ধ্যার মধ্যেই ফলাফল এসে যাবে।
অ্যাজিলাস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবশ্য খরচ একটু বেশি। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, ভিটামিন ডি স্ক্রিনিং টেস্ট বা কেবল ২৫-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি টেস্ট করতে হলে ১৫০০ টাকা খরচ পরবে। রেডক্লিফ ল্যাবরেটরিতে ভিটামিন ডি স্ক্রিনিং টেস্টের জন্য প্যাকেজ দেওয়া হয়। সেখানে খরচ কম করেও ৩২০০ টাকা। অ্যাপোলো ২৪/৭ ক্লিনিকে ২৫-হাইড্রক্সি ভিটামিন ডি (ডি২+ডি৩) পরীক্ষার খরচ ১৭৫০ টাকা।