লিভারের অসুখ ঠেকাতে কেবল মদ্যপানে রাশ টানলেই হবে না। ছবি: শাটারস্টক।
জীবনযাবনে অনিয়ম, খাদ্যাভ্যাসে বদল, নিত্য ইঁদুরদৌড়ে শরীরের প্রতি নজর না দেওয়া, দেদার মদ্যপান— এগুলিই যদি আধুনিক জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে, তা হলে তার ফল অবশ্যই ফ্যাটি লিভার বা লিভার সিরোসিসের মতো অসুখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব জুড়েই লিভারের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
লিভারের অসুখের রোগীর বৃদ্ধির হার দেখে চিকিৎসকেরাও শঙ্কিত। তাঁদের মতে, লিভারের অসুখ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের কিছু বদভ্যাস ও ভুলের কারণেই ডেকে আনি আমরা। শিশুদের ক্ষেত্রেও তাদের বাবা-মায়েরা যদি প্রথম থেকেই সচেতন হন, তা হলে জীবনশৈলীর উপর ছোটবেলা থেকেই একটা নিয়ন্ত্রণ তৈরি হবে। বড়দেরও উচিত লিভার ভাল রাখার উপায়গুলি আয়ত্তে আনা।
অনেকেই মনে করেন, কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া এগুলিই বুঝি লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। কথাটা ভুল নয়। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
১. সাপ্লিমেন্ট: রোগা হওয়ার জন্যই হোক কিংবা ত্বকে বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রাখার জন্য কিংবা অন্য কোনও শারীরিক কারণে অনেকেই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া নিজের ইচ্ছে মতো সাপ্লিমেন্ট বেছে নেন। সুন্দর হওয়ার আশায় লিভারের কথা তখন আমরা আর মনে রাখি না। তাই প্রোটিন বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন।
২. বেদনানাশক: বেশ কিছু বেদনানাশক লিভারের উপর সরাসরি কুপ্রভাব ফেলে। তাই একটু মাথাব্যথা হলেই কিংবা ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুঠো মুঠো বেদনানাশক খাওয়া বন্দ করুন।
৩. লো ফ্যাট, কৃত্রিম চিনি এড়ান: সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট বানিয়ে নেন ও মনে করেন ফ্যাট আটকাতে প্যাকেটজাত লো ফ্যাট ফুড ও চিনি এড়াতে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করা উচিত। এই মনোভাব আগে বর্জন করুন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। রোগা তো হচ্ছেনই না, লিভারও শেষ হচ্ছে তিলে তিলে। লিভার সুস্থ রাখতে চাইলে ট্রান্স ফ্যাট, ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪. টক্সিন: শরীর থেকে যতটা টক্সিন বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। দিনে কয়েক বার গরম জলে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই জল খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক। টুকটাক অনিয়ম সামাল দিতে এরাই আপনার সহায়। কোনও কোনও দিন ভারী খাওয়াদাওয়া হলেই ডায়েটে এদের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিন।
৫. মদ্যপান: একটু-আধটু মদ খেলে কিছু হয় না অথবা দামি মদে ক্ষতি নেই— এ সব নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। স্রেফ পছন্দ, ভাল লাগা, নেশা থেকে সরতে না চাওয়ার জন্য নিজেরই তৈরি করা আপ্তবাক্য। তাই যত দ্রুত পারেন মদ্যপানের অভ্যাস ছাড়তে হবে। প্রতি দিন নিয়ন্ত্রিত মদ্যপানও কিছুটা ক্ষতি করে লিভারের। লিভারে টক্সিন জমানো, শরীরকে ভিতর শুকনো করে দেওয়া এগুলিকে প্রশ্রয় দেবেন না।