কেমন প্রতিষেধক তৈরি করে নিজের ক্যানসার সারালেন বিজ্ঞানী? ফাইল চিত্র।
নিজের তৈরি প্রতিষেধকেই নিজের স্তন ক্যানসার নির্মূল করেছেন বলে দাবি করলেন এক বিজ্ঞানী। ৫০ বছরের বিয়াটা হ্যালাসে স্তন ক্যানসারে ভুগছিলেন। পর পর দু’বার একই জায়গায় ক্যানসার হয় তাঁর। প্রথম বার কেমোথেরাপিতে কাজ হলেও, দ্বিতীয় বার ক্যানসার একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে যায়। বিয়াটা দাবি করেছেন, অস্ত্রোপচার ও কেমোথেরাপিতে কাজ না হওয়ায় গবেষণাগারে তিনি নিজেই ক্যানসারের উপযোগী প্রতিষেধক বানিয়ে নেন। আর সেই প্রতিষেধক নিজের শরীরে প্রয়োগ করে তিনি এখন ক্যানসার-মুক্ত।
‘ভ্যাকসিন’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় বিয়াটা তাঁর তৈরি করা ক্যানসার প্রতিষেধকের কথা লিখেছেন। বিয়াটা পেশায় একজন ভাইরোলজিস্ট। ক্রোয়েশিয়ার জ়াগরেব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রকম ভাইরাস নিয়ে তিনি গবেষণারত। বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ২০২০ সালে দ্বিতীয় বার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। প্রথম বার যে জায়গায় টিউমার কোষ তৈরি হয়েছিল, দ্বিতীয় বারও একই জায়গায় তৈরি হয়। কিন্তু তেমন কোনও লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় তিনি বুঝতেই পারেননি যে, ফের ক্যানসার হানা দিয়েছে তাঁর শরীরে। যত দিনে পরীক্ষা করান, তত দিনে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছিল অনেকটাই। তৃতীয় পর্যায়ে এসে কেমোথেরাপি তেমন ভাবে কাজ করছিল না। তাই তিনি নিজেই প্রতিষেধক বানানোর কথা ভাবেন।
কী ধরনের প্রতিষেধক বানিয়েছেন বিজ্ঞানী?
হাম বা পক্সের জন্য দায়ী ভাইরাস এবং সর্দি-জ্বরের ভাইরাস— এই দুই ভাইরাসকে মিলিয়ে একটি নতুন প্রতিষেধক তৈরি করেছেন বলে দাবি বিয়াটার। প্রতিষেধকের নাম ‘অনকোলাইটিক ভাইরোথেরাপি’ বা ওভিটি। গবেষণাগারে ওই দুই ভাইরাসের চরিত্র বদলে তাদের দিয়েই তৈরি করেন ক্যানসারের প্রতিষেধক। প্রথমে অল্প ডোজ় নিজের শরীরে প্রয়োগ করে দেখেন যে, কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। পরে ধীরে ধীরে প্রতিষেধকের ডোজ় বাড়ান এবং দেখেন তাঁর স্তনের যে জায়গায় টিউমার জন্মেছিল, সেটি একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। পরে টিউমার নির্মূল হয়ে যায় বলেই দাবি করেন বিয়াটা। গত চার বছর ধরে আর ক্যানসার ফিরে আসেনি তাঁর শরীরে।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিজ্ঞানীর তৈরি প্রতিষেধক কি আদৌ সুরক্ষিত? এই বিষয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী বলেছেন, “কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি থেকে বাঁচতে ক্যানসারের নানা রকম ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়েই। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার বিজ্ঞানী কী নিয়ম মেনে প্রতিষেধকটি তৈরি করেছেন, তা তিনি জানাননি। প্রতিষেধকটির ক্লিনিকাল ট্রায়ালও হয়নি এবং সেটি অনুমোদনপ্রাপ্তও নয়। পুরোপুরিই পরীক্ষামূলক ভাবে তিনি সেটি নিজের শরীরে প্রয়োগ করে দেখেছেন। তাই এমন প্রতিষেধক একেবারেই সুরক্ষিত নয়। বিজ্ঞানীর শরীরে ক্যানসার নির্মূল করেছে মানেই সেটি সকলের শরীরের জন্য নিরাপদ, তা তো নয়। হতেই পারে ওই দুই ভাইরাসের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হল শরীরে। তখন বিপদ বাড়বে বই কমবে না।” চিকিৎসকের কথায়, সঠিক সময়ে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার যেমন সেরে যায়, তেমনই সুস্থ হওয়ার পাঁচ-সাত বছর পর তা আবার ফিরেও আসতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট’ বলা হয়। ক্যানসার ফিরে আসতে পারে তিন ভাবে—
১) যে জায়গায় প্রথম টিউমার হয়েছিল সেখানেই।
২) যে জায়গায় প্রথম ক্যানসার ধরা পড়েছিল তার সংলগ্ন এলাকায়।
৩) উৎপত্তিস্থলেই ফের টিউমার কোষ তৈরি হয়ে তা রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে।
এমনটা হতে পারে জেনেই ক্যানসার রোগীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়। তাই ক্রোয়েশিয়ার বিজ্ঞানী যে পদ্ধতির প্রয়োগ করেছেন, তা কতটা সফল হয়েছে, সেটা বুঝতে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। ক্যানসার যে আবার ফিরে আসবে না, তা একেবারেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।