লিভার ক্যানসার চেনার যন্ত্র আবিষ্কার দুই ছাত্রের। প্রতীকী ছবি।
বায়োপসি ছাড়াই লিভার ক্যানসার চিহ্নিত করার নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন ছত্তীসগঢ় আরকে সারদা বিদ্যামন্দিরের দুই ছাত্র। আরভ জৈন ও জয় জাডওয়ানি নামে ওই দুই ছাত্র জানিয়েছেন, তাঁদের তৈরি যন্ত্র সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ক্যানসার চিহ্নিত করবে খুব তাড়াতাড়ি। এর জন্য আলাদা করে কোনও জটিল পরীক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজন হবে না। সূত্রের খবর, ছত্তীসগঢ়ের স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে যন্ত্রটিকে পরীক্ষা করা হয়েছে। সাত জন চিকিৎসক ও দু’জন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার যন্ত্রটিকে নিরাপদ বলে দাবি করেছেন।
যকৃতের ক্যানসার মূলত দু’ধরনের। ক্যানসার যখন সরাসরি লিভারে বাসা বাঁধে তাকে বলে ‘প্রাইমারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘হেপাটোসেলুলার (এইচসিসি) ক্যানসার’। যখন শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যানসার হয়, সেখান থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে যকৃতেও। এ ক্ষেত্রে সেটিকে ‘সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘মেটাস্ট্যাটিক লিভার ক্যানসার’ বলা হয়। সাধারণত দ্বিতীয়টিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়। লিভার ক্যানসার চিহ্নিত করা খুবই জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি। নানা রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি বায়োপসি, ইমেজ স্ক্যান করে তবে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত হন যে, যকৃতে কর্কট রোগ বাসা বেঁধেছে। এই সব পরীক্ষার খরচ যথেষ্টই বেশি এবং সময়ও অনেক বেশি লাগে। সেখানে এই যন্ত্রটি কেবল মাত্র সিটি স্ক্যানের মাধ্যমেই খুব কম সময়ে ও খরচে ক্যানসার চিহ্নিত করতে পারবে বলেই দাবি ওই ছাত্রদের। যদিও খরচ কত, তা এখনও জানা যায়নি।
আরভ জানিয়েছেন, হেপাটাইটিস বি বা সি-এর জন্যও যকৃতে সংক্রমণ ঘটে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলেও বাড়তে পারে এই ক্যানসারের আশঙ্কা। তখন সাধারণ ভাবে ক্যানসার কি না, তা বোঝা যায় না। অনেকেই জটিল পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে চান না। ফলে ক্যানসার তলে তলে ডালপালা মেলতে থাকে। লিভারে গভীর ক্ষত বা সিরোসিসকেও ক্যানসার ভেবে ভুল করেন অনেকে। সে ক্ষেত্রেও যন্ত্রটি নির্ভুল ভাবে ক্যানসার ধরতে পারবে বলেই দাবি তাঁর।
ক্যানসার চিহ্নিতকরণের পরে তা নির্মূল করার পদ্ধতি নিয়েও নতুন আবিষ্কারের পথে আরভ ও জয়। তাঁরা জানিয়েছেন, ক্যানসার নির্মূল করার জন্য কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপি করাতে হয় যা যন্ত্রণাদায়ক। তা ছাড়া, রেডিয়োথেরাপির অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তাই তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ হল এমন ছোট ছোট রোবট বা ‘ন্যানোবট’ তৈরি করা যারা শরীরে ঢুকে ক্যানসার কোষগুলিকে নষ্ট করবে। ন্যানোবট নিয়ে গবেষণা অনেক জায়গাতেই হচ্ছে। ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটারের ছোট ছোট রোবট তৈরির চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা, যাদের প্রয়োগ হবে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি ও অস্ত্রোপচারের কাজে। এই ন্যানোবটকে শরীরে ঢুকিয়ে নানা জটিল রোগ নির্মূল করার চেষ্টা হবে বলেই দাবি করা হয়েছে।