Lip Surgery

কাটা ঠোঁট জুড়বে নিখুঁত ভাবে, বিশ্বে প্রথম নতুন ধরনের অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন সুইস চিকিৎসকেরা

ক্ষতিগ্রস্ত ঠোঁটের কোষগুলি পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ এক চিকিৎসা পদ্ধতি। সাধারণ প্লাস্টিক সার্জারির থেকে কিন্তু অনেকটাই আলাদা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০০
Share:

প্লাস্টিক সার্জারি নয়, ঠোঁটের অস্ত্রোপচারের নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

জন্মগত ভাবে ঠোঁটে ক্ষত থাকলে, তার নিরাময় সহজে হয় না। কাটা ঠোঁট নিয়ে জন্মায় অনেক শিশুই। চলতি বাংলায় এদের বলে ‘গন্নাকাটা’। উপরের ঠোঁটের গঠন সম্পূর্ণ হয় না। ফলে গভীর এক ক্ষত তৈরি হয় মুখমণ্ডলে। এই ক্ষত মেরামত করতে বহু সময় লেগে যায়। প্লাস্টিক সার্জারির প্রক্রিয়াও হয় দীর্ঘমেয়াদি। তার পরেও ঠোঁটের গঠন নিখুঁত হয় না, কাটা দাগ থেকেই যায়। এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধানের জন্যই নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন সুইৎজ়ারল্যান্ডের চিকিৎসকেরা।

Advertisement

‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সেল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি’ বিজ্ঞানপত্রিকায় ঠোঁটের এই অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি নিয়ে লেখা হয়েছে। সুইৎজ়ারল্যান্ডের বার্ন ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক মার্টিন ডেগান এই গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি জানিয়েছেন, জন্মগত ভাবে ক্ষত হোক অথবা আঘাত লেগে বা দুর্ঘটনায় ক্ষত তৈরি হলে, তার নিরাময়ও সম্ভব এই পদ্ধতিতে। কী সেই পদ্ধতি? মার্টিনের কথায়, ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে সরিয়ে ফেলে, সে জায়গায় নতুন কোষ প্রতিস্থাপিত করা হবে। তার জন্য নতুন এক পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। ঠোঁটের খুঁত বেমালুম ঢেকে দিতে পারবে এই পদ্ধতি, এমনটাই দাবি সুইস চিকিৎসকদের।

সাধারণ ভাবে গর্ভধারণের চার থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে মুখের অংশ তৈরি হয় মানবশিশুর। এই সময়ে ধাপে ধাপে তৈরি হয় ঠোঁট ও টাগরা। বেশ কিছু ক্ষেত্রে টাগরা সঠিক ভাবে না জুড়ে নাকের ডগা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। দু’দিকের ঠোঁট ঠিক ভাবে না জুড়লে নাক ও ঠোঁটের মধ্যে একটা বিশাল ফাঁক তৈরি হয়, যা ক্রমশ বিকৃত আকার ধারণ করে। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন গঠনগত প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে না হলে এই ধরনের বিকৃতি নিয়ে শিশু জন্ম নিতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ক্লেফট প্যালেট’ ।

Advertisement

এই বিকৃতি শুধু যে মুখের তা নয়। এ থেকে অন্য বিপদও হতে পারে। এই ধরনের শিশু জন্মানোর পর থেকেই আর পাঁচটি সদ্যোজাত শিশুর মতো স্তন্যপান করতে পারে না। একটু বড় হলে খাবার খেতেও সমস্যা হয়। কারণ, খাবার তার নাকের মধ্যে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না। খেতে পারে না, হাসতেও পারে না। এই ক্ষত সারাতে গেলে দীর্ঘ দিন ধরে অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়ায় থাকতে হয়। কিন্তু নতুন পদ্ধতি যদি প্রয়োগ করা যায়, তা হলে বার বার অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হবে না। ঠোঁটের প্রতিস্থাপিত কোষ স্বাভাবিক ভাবেই বাড়বে এবং ক্ষতের জায়গা ভরাট করবে।

মার্টিন জানাচ্ছেন, এই অস্ত্রোপচার সাধারণ প্লাস্টিক সার্জারির মতো নয়। লেজ়ার চিকিৎসার মতোও নয়। অনেকটা অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মতো, তবে এর পদ্ধতি ও কৌশল আলাদা। এর জন্য একজন দাতার প্রয়োজন হবে যাঁর ঠোঁটের কোষ নেবেন চিকিৎসকেরা। তবে সরাসরি সেই সব কোষ প্রতিস্থাপিত করে দেওয়া হবে না। দাতার ঠোঁট থেকে নেওয়া কোষে নানা রকম অদলবদল করবেন চিকিৎসকেরা। মূলত জিনগত ভাবেই সেই বদল করা হবে, যাতে কোষগুলি অন্য কারও শরীরে বসলে সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তে পারে। এখানেই আসল কারিগরি করবেন চিকিৎসকেরা যা প্লাস্টিক সার্জারিতে করা সম্ভবই নয়। তার পর সেই জিনগত ভাবে বদলে যাওয়া কোষগুলিকে ক্ষতস্থানে নিপুণ ভাবে প্রতিস্থাপন করে দেওয়া হবে।

সুইস চিকিৎসকদের দাবি, এই অস্ত্রোপচারের পরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। অনেক সময়ে নানা রকম জটিল অসুখের কারণেও ঠোঁটের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সব কোষ থেকে পরবর্তী সময়ে মুখমণ্ডলের ক্যানসারের আশঙ্কাও থেকে যায়। কিন্তু নতুন পদ্ধতির এই অস্ত্রোপচার সেই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে দাবি তাঁদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement