স্নানের জল ঠান্ডা হবে না কি গরম, এই নিয়ে তর্কাতর্কি এখন সমাজমাধ্যমেরও আলোচনার বিষয়। ছবি: সংগৃহীত।
ভেবেছিলেন, ঘষা কাচ দিয়ে ঘেরা স্নানঘরে প্রিয়জনের সঙ্গে ধারাজলে অঙ্গ ভেজাবেন। শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে দু’জনে হৃদি ভাসিয়ে দেবেন অলকানন্দা জলে।
কিন্তু কোথায় কী! স্নান করতে গিয়েই তো ঝগড়া। স্নানের জল গরম হবে না কি ঠান্ডা, তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে যে তর্কাতর্কি শুরু হয়েছিল, তা এখন সমাজমাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ পুরুষই দাবি করেছেন, তাঁদের সঙ্গিনীরা গরম জলে স্নান করতেই বেশি পছন্দ করেন। তা নিয়ে তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তাঁদের স্নানের জলের পছন্দের তাপমাত্রা এমনই, যে সেই জল গায়ে পড়লে অন্যদের ছেঁকা লাগার উপক্রম হয়।
নেটপ্রভাবী মিকা জানিয়েছেন, স্ত্রী সারার সঙ্গে একত্রে স্নান করা মানে প্রায় সেদ্ধ হয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, “সারার স্নানের জলের তাপমাত্রা এমনই, যে তার মধ্যে একটি গোটা টার্কিও সেদ্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সারার তাতে কোনও সমস্যাই হয় না। বরং তাঁর আরাম লাগে। ইচ্ছে থাকলেও এই কারণে আমরা কখনও একসঙ্গে স্নান করি না।”
তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, সারার মতো অনেক মহিলাই গরম জলে স্নান করতে পছন্দ করেন। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে, তা পুরুষদের স্নানের জলের তাপমাত্রার তুলনায় অনেকটাই বেশি। তবে এমন গরম জলে স্নান করার ইচ্ছা কিন্তু নেহাত শখের বশে নয়। এর নেপথ্যে শারীরবৃত্তীয় কারণ রয়েছে।
লন্ডনের ‘ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসেস’-এর সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক সরমদ মাজ়হার বলেন, “ঠান্ডা নিয়ে মহিলাদের এই স্পর্শকাতরতার নেপথ্যে রয়েছে ঋতুচক্র এবং হরমোনের খেলা। মহিলাদের দেহের তাপমাত্রা পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। ফলে তাঁদের শরীর ঠান্ডা তাপমাত্রার বিষয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর।”
সরমদের কথায়, ডিম্বস্ফোটন থেকে ঋতুস্রাব শুরু হওয়া পর্যন্ত একটি চক্রে গোটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াটি আবর্তিত হয়। এই চক্রের আবার বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ডিম্বস্ফোটনের সময়ে স্পর্শকাতরতা সবচেয়ে বেশি থাকে। হাত-পায়ে রক্ত চলাচলের মাত্রাও বেড়ে যায়। আবার, ঋতুচক্র শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত সরবরাহ খানিকটা শ্লথ হয়ে আসে। ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকলেও দেহের তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসতে শুরু করে।
এ ছাড়া অনেকেই হয়তো জানেন, মহিলাদের শরীরে পুরুষদের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি বডিফ্যাট থাকে। শরীরের ‘থার্মোজেনিক হিট’ বেড়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ এটি। শুধু স্নানের জলই নয়, শোয়ার ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের তাপমাত্রা বাড়ানো-কমানো নিয়েও এই ধরনের দাম্পত্য অশান্তির কথা প্রায়শই শোনা যায়।