শারীরিক ভাবে ক্লান্তি আসার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েন। প্রতীকী ছবি।
শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে, বিভিন্ন গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে আগেই। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, পুরুষদের চেয়েও বেশি মানসিক অবসাদের শিকার হন মহিলারা। ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়া, সম্পর্কের জটিলতা, বাড়ি আর অফিস দুই-ই সামলাতে গিয়ে শারীরিক ভাবে একটা ক্লান্তি চলে আসে। সেই ক্লান্তি কখনও কখনও হানা দেয় মনেও। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে মানসিক অবসাদের কারণ যে শুধুই ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপটা, তা নয়। শরীরের অন্দরেও এমন অনেক সমস্যা ঘটে, যেগুলির কারণে মানসিক অবসাদ হানা দেয়। সেগুলি নিয়ে খানিক সচেতন থাকা জরুরি। কী কী কারণে মানসিক অবসাদ গ্রাস করে মহিলাদের?
ঋতুবন্ধ
একটি বয়সের পরে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায় মহিলাদের। ঋতুবন্ধের সঙ্গে সঙ্গে নারীশরীরে ক্ষরিত হওয়া ভাল হরমোনগুলির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঋতুবন্ধের পর প্রায় ২০ শতাংশ মহিলা মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই সময়ে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। উপকারী হরমোন নামে পরিচিত সেরাটোনিন ক্ষরণও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শারীরিক ভাবে ক্লান্তি আসার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েন। এই সময়ে মনের যত্ন নিতে চিকিৎসকরা ‘হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’-র পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যা শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
পুরুষদের চেয়েও মানসিক অবসাদের শিকার হন বেশি মহিলারা। প্রতীকী ছবি।
শীতকালীন অবসাদ
শীতকালীন মনখারাপকে অনেকেই ‘উইন্টার ব্লুজ’ নামে চেনেন। সমীক্ষা বলছে, প্রতি ১০০ জনে ছ’জন মহিলা এই শীতকাল এলেই গভীর অবসাদে ডুব দেন। এবং পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যেই ঋতুকালীন অবসাদ বেশি দেখা যায়। মূলত শীতকালে সূর্যালোকের অভাবেই এই সমস্যা হয়ে থাকে। তাই মনোবিদরা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে বেশি করে থাকার কথা বলেন। এতে শরীরে ভিটামিন ডি প্রবেশ করে। অবসাদ কিছুটা হলেও দূরে থাকে।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
সাম্প্রতিক কয়েকটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মহিলা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন। অফিস, কাজের চাপ, সংসারের দায়িত্ব সব কিছু সামলাতে গিয়ে নিজের যত্ন নেওয়া হয় না মহিলাদের। শরীরের প্রতি অবহেলার সবচেয়ে বড় নমুনা হল অপর্যাপ্ত ঘুম। গবেষণা জানাচ্ছে, অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্কের মানসিক অবসাদের অন্যতম কারণ হল ঘুমের অভাব। ব্যস্ততা থাকবে। সেই সঙ্গে কাজের চাপও বাড়বে। কিন্তু সময় বার করেই শরীরের যত্ন নিতে হবে। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। শরীরের ওইটুকু যত্ন প্রাপ্য।
ওজন কমানোয় ব্যর্থ হওয়া
রোগা হওয়া সহজ নয়। এর চটজলদি কোনও উপায়ও নেই। নিয়ম মেনে পরিশ্রম না করলে রোগা হওয়ার বাসনা অধরাই থেকে যায়। অনেক মহিলাই মেদ ঝরাতে পরিশ্রম করেন। কিন্তু সব সময় তা সফল হয় না। পরিশ্রম করেও ব্যর্থতা মানসিক অবসাদ ডেকে আনে। তা ছাড়া ডায়েটের প্রভাব পড়ে মনেও। বিশেষ করে নিজের সিদ্ধাম্তে রোগা হওয়ার পরিশ্রম শুরু করলে এমন হয়। তাই ডায়েট করার আগে অতি অবশ্যই পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
শারীরিক কিছু ক্রনিক সমস্যা
আর্থরাইটিস, কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভোগেন অনেকে মহিলাই। মানসিক অবসাদও জন্ম নেয় এই শারীরিক সমস্যার হাত ধরে। খাবার মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু রোগ বাসা বাঁধলে পছন্দের অনেক কিছুই খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মনেও এর প্রভাব পড়ে। মনখারাপ হয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সে কারণে ডায়াবিটিস বা কোলেস্টেরল যা-ই হোক, এর মাত্রা বাড়তে দেওয়া যাবে না। বরং কী ভাবে বশে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।