থাইরয়েড গ্রন্থি থাকে গলার সামনে। ছবি: সংগৃহীত।
গলার সামনের দিকে থাকে থাইরয়েড গ্রন্থি। এটি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে। তখন সেই গ্রন্থি থেকে টি থ্রি এবং টি ফোর নামে দু’টি হরমোন ক্ষরিত হয়। বিপাক হার নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, জনন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা— শরীরের বিভিন্ন তন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই হরমোন। এই হরমোনের নিঃসরণের হার কম-বেশি হলেই নানা সমস্যা দেখা যায়।
ছবি: সংগৃহীত।
থাইরয়েডের কার্যকারণজনিত সমস্যা দু’রকমের— হাইপোথাইরয়েডিজ়ম (রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে যায়) ও হাইপারথাইরয়েডিজ়ম (রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়)। থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতার উৎপত্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অটোইমিউনজনিত কারণে। আবার এর পিছনে গঠনগত সমস্যাও থাকতে পারে, যেখানে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ফুলে যায়, অথচ হরমোনের ক্ষরণ ঠিকঠাক হয় না। চিকিৎসকরা বলছেন, গঠনগত সমস্যার মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রেই থাইরয়েড ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায় বললেন, "রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলেই থাইরয়ে়ড ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে, এমনটা নয়। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও ক্যানসারের হতে পারে।"
উপসর্গ কী?
১) গলার সামনের দিকে কিংবা নীচের দিকে মাংসল পিণ্ড দেখা গেলে।
২) খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক করেও কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া।
৩) হাত পা কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা হাইপারথাইরয়েডিজ়মের লক্ষণ, এই উপসর্গ দেখা দিলেও সতর্ক হোন।
এই সব উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অদ্রিজা বলেন, ‘‘প্রথমিক ভাবে থাইরয়েড গ্রন্থির ইউএসজি করিয়ে যাচাই করা হয় ক্যানসার কোষ আদৌ রয়েছে কি না। কোনও রকম অস্বাভাবিকতা দেখলে আমরা বায়োপসি এবং সূচ ফুটিয়ে একটা পরীক্ষা করাই, সেখানেই ধরা পড়ে, ক্যানসার আছে কি না। থাইরয়েড ক্যানসার অনেক ধরনের হয়। কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার কোষগুলি দ্রুত শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে, আবার কিছু ক্ষেত্রে কোষগুলি খুব ধীরে ধীরে ছড়ায়। কী ধরনের ক্যানসার হয়েছে, তার উপরেই নির্ভর করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে গ্রন্থিটি বাদ দিতে হবে, না কি রেডিয়োথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপি করানো হবে। ক্যানসার কোন পর্যায়ে ধরা পড়েছে, কতটা ছড়িয়েছে, তার উপরেই নির্ভর করবে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা।’’