অফিসের চাপ দমবন্ধ হওয়ার অবস্থা? মুশকিল আসান হতে পারে সহজে। দিশা দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক গবেষণা। ছবি:ফ্রিপিক।
সমাজমাধ্যমে কেউ ‘শুভ সকাল’ নিয়ে মজা করে বলেছিলেন, যাঁদের সকালে অফিস যেতে হয়, তাঁদের সকাল কখনও শুভ হয় না। কর্মক্ষেত্র অনেকের কাছে এমনটাই হয়ে উঠেছে এখন। লক্ষ্যপূরণের চাপ, কাঙ্ক্ষিত ফল না মিললে ভৎর্সনার ভয়— সব মিলিয়ে ঘিরে ধরে ক্লান্তি, উদ্বেগ।
দিনের পর দিন কাজের চাপে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় অনেকেরই। কর্মক্ষেত্রে কাজ শুরুর নির্ধারিত সময় থাকলেও তার কোনও শেষ থাকে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই কাজ চলতেই থাকে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, খাওয়া, চা-পানের সময়টুকুও থাকে না। অনেক সময় এর ফলও হয় মারাত্মক। কাজের চাপে আত্মহননের ঘটনাও বিরল নয় এই মুহূর্তে।
কিন্তু দিনের পর দিন এই ভাবে চাপ নিয়ে টানা কাজ করলে কি সত্যি কাজের মান ভাল হয়? কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়? না কি এ ভাবে দিনের পর দিন কাজ করা সম্ভব? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই চাপ কমানোর উপায় আছে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, দু’টি কৌশল এ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
কী সেই কৌশল?
আমেরিকার ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটি, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি এ নিয়ে সমীক্ষা চালায়। তাতেই দেখা গিয়েছে, কাজের ফাঁকে ছোট ছোট বিরতি, ঊর্ধ্বতনের ভাল ব্যবহার বা অধস্তনকে সমর্থন করার মানসিকতা কর্মক্ষেত্রে চাপ, ক্লান্তি কাটাতে অনুঘটকের কাজ করে।
কী ভাবে করা হয়েছিল সমীক্ষা?
ব্যস্ত ৪৪ জন হিসাবরক্ষককে বেছে নেওয়া হয়েছিল এই সমীক্ষার জন্য। তাঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন, কাজের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। ক্লান্ত হয়ে পড়েন চাপ সামলাতে গিয়ে। তবে শুধু ৪৪ জন নয়, সামগ্রিক সমীক্ষাটি করা হয় ১৭৯ জনের উপর। ফলাফলে দেখা যায়, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনের সহযোগিতা, সমর্থন পেয়েছেন এবং কাজের ফাঁকে বিরতি নিয়েছেন তাঁরা অনেকটাই চাপমুক্ত হতে পেরেছেন। বরং বাড়তি উৎসাহ নিয়ে তাঁরা পরের দিনের কাজে হাত দিয়েছেন। দিনান্তে ঘুম ভাল হয়েছে।
ভিএসইউ স্কুল অফ বিজ়নেসের হিসাবরক্ষক লিন্ডসে অ্যান্ডিওলা বলছেন,‘‘কাজের চাপ মারাত্মক হলে ছোট ছোট বিরতি কিন্তু খুবই কাজের হয়। পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা, সমর্থনও ক্লান্তি, চাপ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে সাহায্য করে।’’
সমীক্ষার ফলাফলে গবেষকরা জানিয়েছেন, যে হিসাবরক্ষকদের উপর সমীক্ষা হয়েছিল তাঁরা প্রত্যেকেই দৈনন্দিন কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। অফিসে সময়ে আসা, সঠিক সময়ে কাজ শেষ করার চাপ কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। সাময়িক ভাবে অডিটেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। পাশাপাশি শরীরের উপর ক্লান্তির স্থায়ী ছাপ থেকে যাচ্ছিল। তবে গবেষণায় দেখা দিয়েছে, ছোট ছোট বিরতি এবং ঊর্ধ্বতনের সহযোগিতায় পরিস্থিতির বদল ঘটেছে।
বিরতি কী রকম হতে পারে?
বার বার ছোট বিরতির কথা বলা হচ্ছে। সেটি ঠিক কী রকম হওয়া দরকার? গবেষকরা বলছেন সেটি চা পানের বিরতি হতে পারে, গল্প-আড্ডা হতে পারে আবার সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়ে নেওয়া হতে পারে। তবে সেই বিরতিটুকু জরুরি।