হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে কী কী লক্ষণ দেখা দেবে? ফাইল চিত্র।
মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক উপাদানটিই হল হরমোন। একে জীবনদায়ী বললেও ভুল বলা হবে না। শরীর ও মনের সুস্থতার চাবিকাঠি এরই হাতে। ছোটদের সার্বিক বৃদ্ধি, হাড়ের বৃদ্ধি থেকে ত্বক-চুলের স্বাস্থ্য, প্রজনন ক্ষমতা, এমনকি কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ঠিক থাকার ব্যাপারেও হরমোনের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া মানেই শরীরের ছন্দ বিগড়ে যাওয়া। নানা অসুখবিসুখ লেগেই থাকবে। হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য হলেই তার নানা লক্ষণ ফুটে উঠবে। অনেকেই এই সব লক্ষণ চিনতে পারেন না। ফলে চিকিৎসাও সঠিক সময়ে শুরু হয় না।
কোন কোন লক্ষণ চিনে সাবধান হতে হবে?
এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, হরমোনের তারতম্য হলে ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। পেটের অংশ স্ফীত হতে থাকে, হাত-পা সরু হয়ে যায়। পেটে লালচে, চওড়া স্ট্রেচ মার্কস দেখা দিতে পারে। হাড় দুর্বল হয়। রক্তচাপ আচমকা বেড়ে বা কমে যেতে পারে। পেশি দুর্বল হতে শুরু করে। ঘন ঘন মেজাজ বদলে যেতে পারে। তা ছাড়া হরমোনের তারতম্যের কারণে ঋতুচক্রে বদল আসতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে প্রজনন ক্ষমতার উপরেও।
হরমোনের তারতম্যের প্রভাব সরাসরি পড়ে শিশুদের বৃদ্ধিতে। যদি দেখা যায়, শিশু মোটা হয়ে যাচ্ছে অথচ তাদের উচ্চতা বাড়ছে না, তা হলে বুঝতে হবে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক নেই।
ঋতুচক্রের সময় বদলে যাবে। প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য হলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যাবে। ঋতুস্রাবের ২৮ দিনের নির্দিষ্ট চক্র থাকে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে নির্ধারিত সময়ের থেকে ৭ দিন আগে কিংবা পরে ঋতুস্রাব হলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু যদি দেখা যায়, ঋতুস্রাবের সময় অনেকটাই পিছিয়ে যাচ্ছে তা হলে চিন্তার কারণ আছে। তা ছাড়া হরমোনের তারতম্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম, জরায়ুতে সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য দেখা দিলে অবসাদ, উদ্বেগ কমতেই চাইবে না। মনের নানা অসুখবিসুখও দেখা দিতে পারে।
শরীরে গ্লুকোজ়ের তারতম্যও অনেকাংশে নির্ভর করে হরমোনের মাত্রার উপরে। সেখানে তারতম্য হলে ‘ডায়াবেটোজেনিক এফেক্ট’ দেখা দিতে পারে। হঠাৎ করেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। শরীরে প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
অ্যাড্রিনাল বা পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে টিউমার হলেও হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য হয়। তখন নানা ‘অটোইমিউন ডিজ়িজ়’ দেখা দিতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও। ফলে স্নায়ুর জটিল রোগও দেখা দিতে পারে।