চিকেন পক্স থেকে কী ভাবে সাবধান থাকবেন। ছবি: ফ্রিপিক।
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টাতেই হাম ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এখন এই সব রোগ হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। জলবায়ু যে ভাবে বদলাচ্ছে, তাতে সংক্রামক রোগগুলি ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। করোনা, ডেঙ্গির প্রকোপ তো ছিলই। চিকেন পক্সে আক্রান্ত হতেও দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু মানুষকে। এই বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বললেন, “চিকেন পক্স নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। মরসুম বদলের সময়ে প্রতি বছরই এই রোগ হানা দেয়। অসুখ একাধিক বারও হতে পারে। তবে ভয়ের যে খুব বেশি কারণ আছে, তা নয়। রোগীকে সাবধানে থাকতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে সঠিক উপায়ে রোগীর যত্নও নিতে হবে।”
‘ভ্যারিসেল্লা জুস্টার’ নামক ভাইরাসের সংক্রমণে ঘটা এই অসুখ ছোঁয়াচে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, রোগীকে সবচেয়ে আগে নিভৃতবাসে রাখতে হবে। বায়ুবাহিত অসুখ হওয়ায় এই রোগকে আটকানোর তেমন কোনও উপায় থাকে না ঠিকই, তবে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। পরিবারে শিশু ও বয়স্কেরা থাকলে, রোগীকে তাঁদের কাছে যেতে দেওয়া চলবে না।
কী ভাবে ছড়ায় চিকেন পক্স?
একসময় বলা হত বসন্ত রোগ। অনেকে জলবসন্তও বলেন। শুধু বসন্তকালে নয়, বছরের যে কোনও সময়েই এই রোগ হতে পারে। তবে বছরের প্রথম ছ’মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে এখন খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্য, সংক্রমিত রোগ যে কোনও সময়েই হানা দিতে পারে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই ভাইরাস ঘটিত রোগ এটি, যা আক্রান্তের থুতু-লালার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। তাই চিকেন পক্সের রোগীকে আলাদা রাখাই ভাল।
লক্ষণ কী কী?
চিকেন পক্স হলে আগে জ্বর হবে। পরের দু’-তিন দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা বাড়তে থাকবে। সেই সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা হবে। ছোট ছোট গুটির মতো র্যাশ বার হবে। খসখসে হয়ে যাবে ত্বক। সারা শরীর, মুখে ফোস্কার মতো দেখা দেবে। সেই জায়গাগুলিতে চুলকানি দেখা দেবে ও ফোস্কার ভিতরের রস ঘন হয়ে পুঁজের মতো হয়ে শুকিয়ে উঠবে।
শরীরে ভাইরাস ঢোকার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ধীরে ধীরে উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে এই রোগের প্রকোপ থেকে রেহাই মেলে। বাচ্চাদের আগে থেকেই তাই পক্সের ভ্যাকসিন দিয়ে রাখা হয়।
রোগীর যত্ন নেবেন কী ভাবে?
১) চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর পরামর্শ, রোগীকে স্যাঁতসেঁতে ঘরে রাখলে চলবে না। খোলামেলা ঘরে রাখতে হবে, যেখানে যথেষ্ট আলো-হাওয়া চলাচল করে।
২) ফোস্কার জন্য সারা শরীরে ব্যথা হবে, জ্বরও থাকবে। তাই প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে রোগীকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও রকম ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
৩) ত্বকের প্রদাহ কমাতে ক্যালামাইন লোশন লাগাতে পারেন।
৪) তেল-মশলা দেওয়া খাবার একেবারেই চলবে না। বেশি করে তেতো খেতে হবে।
৫) স্নানের সময়ে জলে নিমপাতা ফেলে দিতে হবে। নিম-জলে স্নান করাতে হবে রোগীকে। তা হলে শরীরের প্রদাহ, চুলকানি থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে।
৬) সবুজ সব্জি বেশি খেতে হবে। মুসাম্বির রস খাওয়ান রোগীকে। মুসাম্বির ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এই সময়ে প্রোবায়োটিক খাওয়া খুব জরুরি। রোগীকে টক দই দিন। শরীরের টক্সিন দূর করবে টক দই।
৭) চিকেন পক্স হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গও দেখা দিতে পারে। তাই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।