Oral Thrush in Children

ফাঙ্গাস হইতে সাবধান

ছোটদের ওরাল থ্রাশ নজরে এলেই সতর্ক হতে হবে

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ০৬:৪৩
Share:

‘ওরাল থ্রাশ’ নজরে এলেই সতর্ক হন। প্রতীকী চিত্র।

শিশু জন্ম নেওয়ার কিছু দিন পরেই তাদের জিভে একটা সাদা আস্তরণ পড়ে। দুধ খাওয়ার ফলে এই আস্তরণ, প্রাথমিক ভাবে এমন ধারণা থেকেই নিয়মিত ভিজে কাপড় দিয়ে সন্তানের জিভ পরিষ্কার করেন অনেক মা। তবে তার পরেও ওই আস্তরণ যদি মিলিয়ে না যায়, তবে বুঝতে হবে ওরাল থ্রাশ দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। ক্যানডিডা নামের ফাঙ্গাসই এই সংক্রমণের মূলে, যা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ দিয়েই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

Advertisement

ওরাল ক্যানডিডিয়াসিস কী?

ক্যানডিডা ফাঙ্গাসের কারণে যে সংক্রমণটি হয়ে থাকে, তা-ই ওরাল ক্যানডিডিয়াসিস নামে পরিচিত। এই সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে সাধারণত ক্লোট্রাইমাজ়ল নামে অ্যান্টিফাঙ্গাল ড্রপ দিয়ে বাচ্চাদের জিভের এই সমস্যা সারিয়ে তোলা সম্ভব। মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে ক্লোট্রাইমাজ়ল টপিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা। বাচ্চার জিভের উপরে দু’ফোঁটা করে দিনে তিন বার এই ড্রপটি দিলেই দিন সাতেকের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায়। অনেক সময়ে বাচ্চাদের এর স্বাদ মুখে ভাল লাগে না। তবে সতর্ক থাকতে হবে, ড্রপটি দেওয়ার সময়ে একসঙ্গে যেন অনেকটা জিভের উপরে না পড়ে যায়।’’

Advertisement

কেন হয় ওরাল থ্রাশ?

সাধারণ ভাবে শিশুর ওরাল হাইজিন অর্থাৎ জিভ, মাড়ি ও মুখের ভিতরটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলেই এই ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন এড়ানো সম্ভব। বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে হাত ভাল করে পরিষ্কার করা, বুকের দুধ খাওয়ালে স্তনবৃন্ত পরিষ্কার রাখার মতো প্রাথমিক বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। আরও কিছু বিশেষ কারণে ছোটদের মধ্যে ওরাল ক্যানডিডিয়াসিস দেখা দিতে পারে। যেমন:

  • কোনও শিশু যদি ইমিউনো-কম্প্রোমাইজ়ড হয়, অর্থাৎ কোনও কারণে বাচ্চার অনাক্রম্যতা কম থাকে, তা হলে এই ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।
  • লিউকিমিয়া বা এইচআইভি-র মতো অসুখ থাকলেও এই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে।
  • শিশু যদি দীর্ঘ দিন ধরে কোনও ইমিউনো-সাপ্রেসিভ ওষুধ খায় বা অনেক দিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো হয়, তা হলেও এই ওরাল থ্রাশ দেখা দিতে পারে।
  • কোনও অসুখের ফলে অনেক দিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ার ফলেও হতে পারে ওরাল ক্যানডিডিয়াসিস।

এ সব ক্ষেত্রে সংক্রমণ অনেক সময়ে ইসোফেগাস অবধি পৌঁছে যেতে পারে। এই ইসোফেগিয়াল ক্যানডিডিয়াসিস থেকে সিস্টেমিক ক্যানডিডিয়াসিসও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রক্তে প্রবেশ করে সংক্রমণ। রোগীর দীর্ঘ দিন ধরে জ্বর থাকতে পারে। সিস্টেমিক ক্যানডিডিয়াসিস সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হয়ে যেতে পারে। সে সব ক্ষেত্রে ইনট্রাভেনাস অ্যান্টিফাঙ্গাল এজেন্ট দিতে হতে পারে রোগীকে, জানালেন ডা. রায়চৌধুরী।

যাঁদের কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়েছে, তাঁদের অনেক সময়ে ইমিউনো-সাপ্রেসিভ ওষুধ খেতে হয়। তাঁদের ক্ষেত্রেও ওরাল থ্রাশের সম্ভাবনা দেখা দেয়। মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে ফাঙ্গাল হাইফি নির্ণয় করা যায়। অনেক দিন ধরে হাঁপানিতে ভুগলে ওরাল স্টেরয়েড ইনহেলেশন দেওয়া হয়ে থাকে রোগীকে। এই ইনহেলেশন প্রত্যেক বার নেওয়ার পরে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। না হলে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের সম্ভাবনা থেকে যাবে। শুধু ছোটদের ক্ষেত্রে নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।

সাবধানতা অবলম্বন

মুখের ভিতরটা পরিষ্কার রাখাই এই অসুখ এড়ানোর প্রাথমিক শর্ত। কোনও অসুখ থাকলে বা দীর্ঘ দিন ধরে কোনও চিকিৎসা চললে ঠিক সময়ে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধও প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময়ে জিভের উপরে খাবারের রয়ে যাওয়া অংশের আস্তরণ পড়েছে, নাকি তা ফাঙ্গাল ইনফেকশন, বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। ক্যানডিডিয়াসিসের ক্ষেত্রে নানা উপায়ে জিভ পরিষ্কার করলেও আস্তরণ দূর হবে না। তখনই চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে তা সারিয়ে নেওয়া দরকার।

ঠিক সময়ে ওষুধ পড়লেই সহজে সেরে যায় এই রোগ। তাই ওরাল হাইজিনের খেয়াল রাখাই একমাত্র শর্ত।

সায়নী ঘটক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement