Walking

Walking for staying fit: শুধু হাঁটলেই কি সব রোগ-ব্যাধি থাকবে দূরে? কী ভাবে তা সম্ভব

সব ভুলে যাচ্ছেন? টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? খোলা হাওয়ায় হাঁটুন৷ হাঁপানিতে জেরবার? অল্প অল্প করে হেঁটে হেঁটে ফুসফুসের জোর বাড়ান৷

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৪০
Share:

খোলা হাওয়ায় হাঁটুন৷ ছবি: সংগৃহীত

হাঁটলে সারে না এমন রোগ নেই৷ সে ওজন কমা হোক বা ভুঁড়ি কমানো৷ পেশি গঠন করা হোক বা ফিটনেস বাড়ানো৷ শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোলের ক্ষরণ কমিয়ে আর হ্যাপিনেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে মন ভাল করতে, চোখে ঘুম নিয়ে আসতে তার জুড়ি নেই৷ রক্তচাপ-রক্তে শর্করা মাত্রা-কোলেস্টেরল, এমনকি, হৃদ্‌রোগের প্রকোপ কমাতেও সে অদ্বিতীয়৷

Advertisement

আর পেটের রোগে? সে মহৌষধ৷ বেশি খেয়ে পেট আইঢাই করছে? একটু হেঁটে নিন৷ সমস্যা গায়েব৷ পেট পরিষ্কার হচ্ছে না? দু-গ্লাস গরম জল খেয়ে ১৫ মিনিট হেঁটে দেখুন কী হয়!

Advertisement

সব ভুলে যাচ্ছেন? টেনশনে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? খোলা হাওয়ায় হাঁটুন৷ হাঁপানিতে জেরবার? অল্প অল্প করে হেঁটে হেঁটে ফুসফুসের জোর বাড়ান৷

আথ্র্রাইটিসের ব্যথায় সব ব্যায়াম বারণ হয়ে গেলেও হাঁটা কিন্তু বন্ধ হয় না৷ অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি সমতলে ১০-১৫ মিনিট বা ২০ মিনিট হাঁটতে বলেন চিকিৎসক৷ আস্তে আস্তে৷ যে কোনও অস্ত্রপচারের পর, সে পায়ের হোক বা পেটের, হার্টের হোক বা মস্তিষ্কের, রিহ্যাবিলিটেশনের পর্যায়ে প্রথম ব্যায়ামই হল সাপোর্ট নিয়ে একটু করে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পুরোদস্তুর হাঁটতে শুরু করা৷

আথ্র্রাইটিসের ব্যথায় সব ব্যায়াম বারণ হয়ে গেলেও হাঁটা কিন্তু বন্ধ হয় না৷

গর্ভবতীর ব্যায়ামের প্রধান অঙ্গ হল হাঁটা৷ প্রসবের পরও তাই৷ সদ্যোজাতকে নিয়ে রাতজাগার ক্লান্তি ভুলতে যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়ার পাশাপাশি একটু হাঁটতেও বলেন চিকিৎসক৷ তাতে যেমন তরতাজা লাগে, ওজন কমারও সুরাহা হয়৷

অর্থাৎ হাঁটা হল সর্ব-রোগহর৷

তা হলে এ বারের প্রশ্ন, কী ভাবে হাঁটবেন? ওজন কমাতে, ফিটনেস বাড়াতে যে ভাবে হাঁটতে হবে, রোগে বা শোকে তো সে ভাবে হাঁটলে হবে না৷ পেশি-সন্ধির ব্যথা থাকলে যে ভাবে হাঁটবেন, পেশি গঠন করতে চাইলে হাঁটতে হবে আলাদা ভাবে৷ কম বয়সে যে ভাবে হাঁটবেন, বেশি বয়সে সে ভাবে হাঁটা যাবে না৷ গর্ভবতীকে হাঁটতে হবে অন্য ভাবে৷ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর হাঁটা আবার একেবারে ভিন্ন গ্রহের৷ তা হলে আসুন কোন সমস্যায় কী ভাবে হাঁটতে বলেন চিকিৎসকেরা, তা দেখে নেওয়া যাক৷

কখন, কী ভাবে হাঁটবেন

১। ভূঁড়ি কমাতে চান? সকালে খালিপেটে জোর পায়ে হাঁটুন কম করে ২০-২৫ মিনিট৷ ১২-১৪ ঘণ্টা খালিপেটে থাকলে শরীরে গ্লুকোজের স্টোর তলানিতে চলে যায়৷ তখন হাঁটার এনার্জি দেয় ফ্যাট৷ কাজেই ফ্যাট কমাতে চাইলে খালিপেটে হাঁটার বিকল্প নেই৷ তবে ওজন খুব বেশি হলে ও হাঁটু-কোমরের অবস্থা খারাপ হলে আগে ডায়েট করে ২-৪ কেজি কমিয়ে নিতে হবে৷

২। ক্যালোরি ঝরাতে, ফিটনেস বাড়াতে, উচ্চ রক্তচাপ-রক্তে বেশি শর্করার মাত্রা-কোলেস্টেরলের প্রকোপ কমাতে যে কোনও সময় হাঁটুন৷ জোর কদমে৷ কম করে ২০-২৫ মিনিট৷

৩। শরীর গঠন করতে চাইলে ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ের বিকল্প নেই৷ খালি পেটে করলে ফ্যাটও ঝড়বে৷ ফিটনেস থাকলে দৌড়তে পারেন৷ সবচেয়ে ভাল হয় হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং করলে৷ এতে ওয়ার্ম আপ করার পর দু-পাঁচ মিনিট দৌড়ে এক মিনিট আস্তে হাঁটুন৷ ২৫-৩০ মিনিটের সেশনে বেশ কয়েক বার এ রকম করুন৷ এতে ক্যালোরি বেশি ঝড়ে৷ পেশি ভাল ভাবে গঠিত হয়৷ কারণ হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় পুরো শরীরের ভার নিয়ে ব্যায়াম হয় বলে ওজন নিয়ে ব্যায়ামের মতো সুফল পাওয়া যায়, যাকে বলে বডি ওয়েট ট্রেনিং৷ এর পর কুল ডাউন করবেন আস্তে হেঁটে৷ তার পর হালকা স্ট্রেচিং৷

স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও ভোরের বা সন্ধের হাঁটা খুব কার্যকর৷ তার সঙ্গে নিরাপদ জায়গা দেখে পিছনে হাঁটবেন৷

৪। হৃদ্‌যন্ত্র ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে চাইলে এমন গতিতে টানা ২০-২৫-৩০ মিনিট হাঁটতে হবে যাতে হাঁপিয়ে গেলেও কথা বলা যায়, কিন্তু গান গাওয়া যায় না৷ ঠান্ডার মধ্যেও অল্প ঘাম হয়৷

৫। হার্ট ও ফুসফুসের অসুখ থাকলে যতটুকু রাস্তা, যে গতিতে হাঁটলে কষ্ট হয় না, ততটুকুই স্রেফ হাঁটুন৷ সপ্তাহে কম করে ১৫০ মিনিটের যে টার্গেট সচরাচর থাকে, অর্থাৎ ৫ দিন, ৩০ মিনিট করে, সে টাকে নিজের সুবিধেমতো ভেঙে নিন৷ শরীর বুঝে ৮-১০ মিনিট করে দিনে দু-বার হাঁটুন৷ ৫ দিনের বদলে ৭ দিন হাঁটুন৷ হাঁটু-কোমরের ব্যথা বা অন্য কোনও সমস্যা থাকলেও এক নিয়ম৷

৬। পেশির ব্যথায় হাঁটুন সকালের রোদে৷ ভিটামিন ডি-এর সৌজন্যে কাজ হবে ম্যাজিকের মতো৷

৭। মানসিক চাপ, টেনশন, মাথাব্যথা, অনিদ্রা কমাতে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের মধ্যে হাঁটুন৷ পরিবেশ সুন্দর হলে বেশি ভাল ফল পাবেন৷ মন হালকা করে এমন সুর শুনতে পারেন৷ সন্ধেবেলা বা নৈশভোজের পরও হাঁটতে পারেন৷

৮। স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও ভোরের বা সন্ধের হাঁটা খুব কার্যকর৷ তার সঙ্গে নিরাপদ জায়গা দেখে পিছনে হাঁটবেন৷ পাশেও হাঁটতে পারেন৷ এতে অনভ্যস্ত মস্তিষ্কের নতুন রকমের ট্রেনিং হয় এবং তার কার্যকারিতা বাড়ে৷ স্মৃতিশক্তি কমার হার কমে যায়৷

৯। পিছনে ও পাশে হাঁটলে পায়ের ও হিপের সেই সব পেশির ব্যায়াম হয়, শুধু সামনে হাঁটলে যারা অব্যবহৃত থাকে৷ এতে পেশির কার্যকারিতা বাড়ে, বাড়ে ক্যালোরি খরচের হার৷ ব্যালেন্স বাড়ে৷ বাড়ে সতর্কতা ও সচেতনতা৷ হাঁটু-কোমরে ব্যথা থাকলেও এ ভাবে হাঁটলে উপকার হয়৷

১০। গর্ভবতী ও নতুন মা হোচট খাওয়ার বা পিছলে পড়ার আশঙ্কা নেই এমন জায়গায় মাঝারি গতিতে হাঁটবেন৷ যতটুকু শরীরে দেয়, ততটুকু৷ বয়স্ক ও অসুখ-বিসুখে জর্জরিত মানুষের ক্ষেত্রেও এক নিয়ম

গর্ভবতী ও নতুন মা হোচট খাওয়ার বা পিছলে পড়ার আশঙ্কা নেই এমন জায়গায় মাঝারি গতিতে হাঁটবেন৷

হাঁটার জন্য

১। চাই নিয়মানুবর্তিতা৷ রোজ এক সময় হাঁটলে সপ্তাহ তিনেক পরেই অভ্যাস হয়ে যাবে৷ তখন সেই আপনাকে ঘর থেকে টেনে বার করবে৷

২। ভাল এক জোড়া জুতো চাই৷ রাস্তার খানাখন্দ ও শরীরের ভার ও প্রয়োজন ভাল ভাবে সামলাতে সক্ষম এমন জুতো৷ এখানে কাপর্ন্য করবেন না৷

৩। আরামদায়ক পোশাক পরে হাঁটুন৷ রোদে হাঁটলে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন৷ চোখে রোদচশমা ও মাথায় হ্যাট পরে নিন৷

৪। পাতলা তোয়ালে রাখুন সঙ্গে৷ রাখুন ছোট একটা জলের বোতল৷

৫। সুগারের রোগী কয়েকটা চকলেট রেখে দেবেন সঙ্গে৷ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে মাথা ঘুরতে শুরু করলে কাজে লাগবে৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement