এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে রক্তে কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং শরীরও ভাল থাকে। ছবি: সংগৃহীত
শরীরে বাড়তি মেদ ঝরানোর জন্য কেবল শরীরচর্চা করলেই চলবে না। তার সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসেও রাশ টানা ভীষণ জরুরি। চটজলদি ওজন ঝরাতে ইদানীং অনেকেই ভরসা রাখছেন ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’-এর উপর। এই ডায়েটে খাবারের ক্ষেত্রে তেমন কড়া বিধি-নিষেধ থাকে না। তবে এ ক্ষেত্রে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে ফেলতে হয়। আর বাকি সময়, অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা উপোস করে কাটাতে হয়। এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে রক্তে কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং শরীরও ভাল থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেলে বিপাকের হার ঠিক থাকে। এতে শরীরে ক্যালোরির প্রবেশও কম হয়। ফলে ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে।
ডায়াবিটিসের রোগীরা কি ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করতে পারেন?
যাঁদের ডায়াবিটিস নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে এই প্রকার খাদ্যাভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই ডায়েট আদৌ কার্যকর কি না, তা নিয়ে মতভেদ আছে । ডায়াবিটিস-আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান কিংবা ইনসুলিন নেন, তাঁরা যদি খাওয়ার পরিমাণ আচমকা কমিয়ে দেন তা হলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ অনেকখানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি হাইপোগ্লাইসিমিয়ার লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে রোগীর হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম হয়, ঝিমুনি আসে এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে।
প্রতীকী ছবি
তা ছাড়া ডায়াবিটিস রোগীদের খুব বেশি ক্ষণ খালি পেটে থাকা মোটেই উচিত নয়। তাতে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে যেতে পারে। এ্টি হাইপারগ্লাইসিমিয়ার লক্ষণ। দীর্ঘ দিন এমন হতে থাকলে স্নায়ু, কিডনির উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে, এমনকি হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
তবে বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’-এর ফলে যে হেতু ওজন ঝরানো সম্ভব, তাই ডায়াবিটিসের অনেক রোগীই এই ডায়েট করে উপকার পেয়েছেন।
অনেকেই মনে করেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাওয়া সারতে পারলেই বুঝি এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা হয়। এই ডায়েট কিন্তু অনেক ধরনের হয়। এই ডায়েট করার সময় পুষ্টিবিদরা অনেককেই দিনে কেবল এক বার খাওয়ার পরামর্শ দেন। অনেকের ক্ষেত্রে আবার ঠিক কত ঘণ্টা অন্তর কী পরিমাণ খাবার খাবেন তা-ও বেঁধে দেওয়া হয়। তাই ডায়াবিটিস থাকলে আপনার শরীরের জন্য ঠিক কোন প্রকার ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর প্রয়োজন, তা পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই শ্রেয়।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর সময় ডায়াবিটিসের রোগীদের কোন কোন বিষয়ের উপর অবশ্যই নজর রাখতে হবে?
১) যদি আপনি পুষ্টিবিদদের পরামর্শে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু করেন, তা হলে প্রতিদিন আপনার রক্তের শর্করার মাত্রা পরিমাপ করতে হবে।
২) প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কম রাখতে হবে। তার বদলে শাকসব্জি আর প্রোটিন বেশি মাত্রায় খেতে হবে।
৩) এই ডায়েটের করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কখন ওষুধ খাবেন আর কখন ইনসুলিন নেবেন, তা জেনে নেওয়া খুব দরকার।