জীবনযাপনে অসংযম ও পরিশ্রমবিমুখতা ওজন বাড়াচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
স্থূলত্বের সমস্যা বেড়েই চলেছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর সমীক্ষা বলছে, প্রায় ২৫ শতাংশ ভারতীয় স্থূলত্ব বা বাড়তি ওজনের সমস্যায় ভুগছেন। এর কারণ হিসাবে আইসিএমআর জানাচ্ছে, বর্তমান জীবনযাপনে অসংযম, শরীরচর্চার অভাব এবং সঠিক ভাবে ডায়েট মেনে না চলা। এখনকার ব্যস্ত জীবনে, বেশির ভাগই সুষম আহারে অভ্যস্ত নন। তা ছাড়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় বসে কাজ, শরীর নড়াচড়াই হয় না বলতে গেলে। এই সবই স্থূলত্বের সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে।
কোনও ব্যক্তির স্থূলতা আছে কি না, তা তাঁর বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) দেখে নির্ধারণ করা হয়। কারও বিএমআই যদি ৩০-এর বেশি হয়, তা হলে তাঁর স্থূলত্ব আছে। বিএমআই ২৫ থেকে ২৯.৯-এর মধ্যে থাকলে এক জন ব্যক্তির ওজন বেশি বলে ধরে নেওয়া হয়।
আইসিএমআর জানাচ্ছে, শুধু শহরাঞ্চল নয়, গ্রামের দিকেও মানুষজনের স্থূলত্ব বাড়ছে। পরিশ্রমবিমুখতা, জীবনযাত্রায় অসংযমই এর কারণ। আগে মানুষজন শারীরিক পরিশ্রম করতেন বেশি, এখন তা খুবই কম হয়। কায়িক পরিশ্রম কম হওয়ায় মেদের আধিক্য বাড়ছে। তা ছাড়া খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, নেশার প্রকোপ তো রয়েছেই।
স্থূলত্ব কমাতে কী কী নিয়ম মানতে বলছে আইসিএমআর?
কী ভাবে ওজন কমাবেন
আইসিএমআরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবারে বেশি ওজন ঝরাতে গেলে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ওজন কমান ধীরে ধীরে, নিয়ম মেনে। চেষ্টা করতে হবে প্রতি সপ্তাহে যেন অন্তত ৫০০ গ্রাম করে ওজন কমে। ধীর গতিতে মেদ ঝরলে আমাদের শরীরও তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু যদি ঝপ করে একবারে বেশি ওজন কমাতে যান, তা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অপুষ্টিজনিত রোগও দেখা দিতে পারে।
দিনে কতটা ক্যালোরি জরুরি
প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত ১০০০ কিলোক্যালোরি রাখতেই হবে। সে জন্য পরিমিত কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন খেতে হবে। শরীরচর্চা যদি বেশি হয়, তা হলে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন মাপ মতো বুঝে খেতে হবে। কম খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। উচ্চতা, ওজন, জীবনযাপনের ধরন, কী ধরনের শরীরচর্চা করছেন, তার উপর নির্ভর করবে সুষম ডায়েট কেমন হবে। সেটা চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নেওয়াই ভাল।
যখন তখন ভাজাভুজি, পিৎজ়া-বার্গার খাওয়ার অভ্যাস শরীরের বারোটা বাজাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
সবুজ শাকসব্জি খেতে হবে বেশি করে
আইসিএমআরের পরামর্শ, সবুজ শাকসব্জি বেশি করে খান। ভাজাভুজি, তেলমশলাদার খাবার, নরম পানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম, যে কোনও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
রান্নার ধরন বুঝুন
কম মশলা দিয়ে তৈরি হালকা খাবার, সিদ্ধ, গ্রিল করা খাবারই বেশি খেতে হবে। রান্নায় যতটা কম তেল দেওয়া যায়, ততই ভাল। বেশি নুন ও চিনি খাওয়া কমাতে হবে।
প্যাকেটে লেখা মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ভুলবেন না
প্রচুর খাবারের প্যাকেটের গায়ে এখন লেখা থাকে, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে এগুলি খেলে। কিন্তু এই কথাটা আদৌ ঠিক নয়। ‘নো সুগার অ্যাডেড’ দেখে হয়তো ভাবছেন এগুলি খেলে ডায়াবিটিস হবে না। আসলে তা নয়। যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে ভাল করে খুঁটিয়ে প্যাকেটে কী লেখা আছে পড়ে নিন। দরকার হলে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই কিনুন।