নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে শিশুকে যত্নে রাখতেই হবে, কী কী নিয়ম মানবেন অভিভাকেরা? ছবি: ফ্রিপিক।
শীত এসেই গেল প্রায়। মরসুম বদলের এই সময়ে এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে হাওয়ার মধ্যে থাকা জীবাণু মাটির কাছাকাছি চলে আসে বলে এই সময় অসুখবিসুখ বেশি হয়। শীতে যে সব সংক্রামক রোগ হয় তার মধ্যে একটি হল নিউমোনিয়া। ফুসফুসের এই সংক্রামক রোগে প্রতি বছর এ দেশে বহু মানুষ আক্রান্ত হন। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের আক্রান্তের হার বেশি। সাধারণ হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র জ্বর, শ্বাসের সমস্যাও দেখা দেয়। নিউমোনিয়া যদি ‘সিভিয়ার’ হয়ে যায়, তখন তা মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে।
এই বিষয়ে শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল জানাচ্ছেন, নিউমোনিয়া হলে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি অনেকটা বেড়ে যায়। নিউমোনিয়ার প্রধান উপসর্গ হল কাশি এবং রেসপিরেটরি রেট বেড়ে যাওয়া। সাধারণত এক মিনিটে যদি শিশু ৬০ বারের বেশি শ্বাস নেয়, তা হলে তাকে নিউমোনিয়ার লক্ষণ বলে ধরা হয়ে থাকে। এ ছাড়া নিউমোনিয়ার আরও কয়েকটি সাধারণ লক্ষণের মধ্যে থাকে জ্বর, নাসারন্ধ্র ফুলে যাওয়া। কিছু ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া হতেও দেখা যায়। নিউমোনিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শিশুর রক্তপরীক্ষা এবং চেস্ট এক্সরে করানো একান্ত প্রয়োজন। সিটি স্ক্যান করালেও রোগ ধরা পড়ে।
শিশুকে সাবধানে রাখবেন কী ভাবে?
১) জন্মের পরেই শিশুকে বিসিজি প্রতিষেধক দিতে হবে। টিউবারকুলোসিস থেকে হওয়া নিউমোনিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে এই প্রতিষেধক।
২) প্রতি বছর ফ্লু প্রতিষেধক নিতেই হবে। এটি নেওয়া থাকলে যে কোনও সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি প্রতিষেধক এবং নিউমোকক্কাল প্রতিষেধক নেওয়া থাকলেও ভাল।
৩) ধূমপান করলে শিশুর সামনে করবেন না। সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়া শিশুর ফুসফুসে সংক্রমণের কারণ হতে পারে। খুব বেশি ধুলো-ধোঁয়া আছে যেখানে, সেখানে শিশুর না যাওয়াই ভাল।
৪) খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতেই হবে। প্রাকৃতিক ভাবে দইয়ের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়। তাই প্রতি দিনের খাবারে দই রাখতেই হবে। সবুজ শাকসব্জি ও ফল বেশি করে খাওয়াতে হবে। বাইরের কোনও খাবার বা ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম খাওয়া একেবারে চলবে না। ভিটামিন সি-যুক্ত যে কোনও ফলই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যে কোনও ধরনের লেবুতেই যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি মজুত থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লেবু খাওয়াতে পারেন শিশুকে।
৫) নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সার্বিক ভাবে বাড়ে। চেষ্টা করতে হবে শিশুকে খেলাধূলা করানোর। না হলে সাইকেল চালানো, সাঁতার, জগিং— এই ধরনের শারীরিক কসরত করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
৬) পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। খাওয়ার আগে ভাল করে হাত ধুতে হবে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। বাইরে বেরোলে মাস্ক পরতেই হবে।