‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ করলে কি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে? ছবি: শাটারস্টক।
শরীরে বাড়তি মেদ নিয়ে চিন্তিত? ওজন ঝরানোর জন্য কেবল শরীরচর্চা করলেই চলবে না, তার সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসেও রাশ টানতে হবে। চটজলদি ওজন ঝরাতে ইদানীং অনেকেই ভরসা রাখছেন ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’-এর উপর। ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’-এ খাবারের ক্ষেত্রে তেমন কড়া বিধি-নিষেধ থাকে না। তবে এ ক্ষেত্রে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে ফেলতে হয়। আর বাকি সময়টা, অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা উপোস করে কাটাতে হয়। এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে রক্তে কোলেস্টেরল হ্রাস পায় এবং শরীরও ভাল থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেলে বিপাকের হার ঠিক থাকে। এতে শরীরে ক্যালোরির প্রবেশও কম হয়। ফলে ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে। তবে যে কোনও ডায়েটই পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়ে করলে হিতে বিপরীত বতে পারে ডায়াবিটিসের রোগী বা প্রি-ডায়াবেটিকদের ক্ষেত্রে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ডায়েট করার আগে সতর্ক থাকতে হবে।
যাঁদের ডায়াবিটিস নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে এই প্রকার খাদ্যাভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবিটিস-আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান কিংবা ইনসুলিন নেন, তাঁরা যদি খাওয়ার পরিমাণ আচমকা কমিয়ে দেন, তা হলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ অনেকখানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি হাইপোগ্লাইসিমিয়ার লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে রোগীর হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম হয়, ঝিমুনি আসে এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে। তা ছাড়া ডায়াবিটিস রোগীদের খুব বেশি ক্ষণ খালি পেটে থাকা মোটেই উচিত নয়। তাতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এটি হাইপারগ্লাইসিমিয়ার লক্ষণ। দীর্ঘ দিন এমন হতে থাকলে স্নায়ু, কিডনির উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও হতে পারে, এমনকি হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে কী ভাবে টাইপ-৩ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়ে?
১) ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এ খাওয়াদাওয়া তেমন কোনও বাঁধানিষেধ থাকে না বলে অনেকেই ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যে অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার, ফ্যাটযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন। এর ফলে কিন্তু ওজন বেড়ে গিয়ে ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও বাড়ে।
২) খুব কড়া ভাবে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে। মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বে়ড়ে যায়। এই হরমোনের কারণে আবার রক্তের শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
৩) সবার শরীরে সব ডায়েট সমান ভাবে কার্যকর হয় না। অনেকের শরীরে যেমন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সত্যিই রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে আবার হিতে বিপরীত হয়। তাই কেবল ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নয়, যে কোনও ডায়েট শুরু করার আগেই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই ভাল।