ওজন কমাতে উষ্ণ পানীয়ে চুমুক দিলেই হবে? ছবি: ফ্রিপিক।
ওজন কমাতে চান? সহজ সমাধান। কম খাও, ঘড়ি ধরে শরীরচর্চা করো। তার সঙ্গে সকালে উঠে হালকা গরম জলে লেবু, মধুর জল খাও।
ওজন কমানো নিয়ে বেশির ভাগের ধারণা এমনটাই। সমাজমাধ্যমে নানা ধরনের টিপ্স থেকে টোটকাও রয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কেউ বলেন, উষ্ণ পানীয়ে চুমুক দিলে মেদ ঝরে। কেউ বলেন, খেতে হবে একেবারে মেপে আর শরীরচর্চা তো অবশ্যই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, বিষয়টি ঠিক এতটাও সরল নয়।
উষ্ণ পানীয়ে চুমুক দিলে মেদ ঝরে, বলেন অনেকেই। কথাটা ভুল নয়, জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী। তবে সতর্ক করছেন উষ্ণ নয়, পানীয় হতে হবে ঈষদুষ্ণ। তিনি বললেন, ‘‘জলের সঙ্গে যে কোনও ধরনের লেবুর রস, আমলকি ভিজিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে বিপাকহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। কিন্তু দিনভর ঈষদুষ্ণ পানীয় খেলেই কাজ হবে, এমন কখনও নয়। এর সঙ্গে যথাযথ ডায়েট জরুরি।’’ আর এক পুষ্টিবিদ তনয়া খান্নার কথায়, দৈনন্দিন জীবনে আরও অনেক বিষয় ওজন বশে রাখতে এবং মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।
ঘুম: সঠিক খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে ঘুমও খুব জরুরি। ভাল ঘুমের সঙ্গে হরমোনের ভারসাম্য, হজম, অনেক কিছুই যুক্ত। ঘুম ঠিক না হলে বিপাকক্রিয়ায় প্রভাব পড়বে, হজমের সমস্যা হবে, হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। তার প্রভাবে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
খাবার: ওজন ঝরাতে প্রোটিন খুব জরুরি। সকালের খাবার ভাল মানের প্রোটিন দিয়ে শুরু করা প্রয়োজন। ডিম, ভেজানো মুগ-কলাই জাতীয় খাবার তালিকায় থাকা জরুরি। পুষ্টিবিদ শম্পা বলছেন, “প্রোটিন জরুরি ঠিকই, কিন্তু সারা দিনের খাবারে ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজের সমন্বয় থাকতেই হবে। প্রতিটি মানুষের ওজন, উচ্চতা, পরিশ্রম অনুযায়ী খাবারের মাপ নির্ধারিত হয়। দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য নির্দিষ্ট ক্যালোরি প্রয়োজন। তার চেয়ে অনেক বেশি খেলেই ওজন বৃদ্ধি পাবে। সে কারণে ব্যালান্সড ডায়েটের সঙ্গে সঠিক পরিমাপ বোঝা জরুরি।”
দৈনন্দিন কাজকর্ম: শরীরচর্চায় যেমন মেদ ঝরে তেমন দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমেও ওজন বশে রাখা যায়। যেমন ফোনে কথা বলতে বলতে হাঁটা, বাগানের কাজ, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা, খাওয়ার পর একটু হেঁটে নেওয়া— এগুলিও ওজন বশে রাখতে সহায়ক।
ছোট্ট থালা, কম খাবার: অনেকেই বলেন, খেতে বসলে মাপ ঠিক রাখা যায় না। বেশি খাওয়া হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ছোট থালায় মাপমতো খাবার নিয়ে বসলে সুবিধা হবে। ছোট থালা এবং বাটিতে অল্প খাবার নিলেও তা ভর্তি থাকবে। তা থেকেই মনে হবে খাবারের পরিমাণ যথেষ্ট। পেট ভরার এই বিষয়টি কিছুটা মানসিক ভাবে পরিচালিত হয়।
জল: শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের জন্য একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের অন্তত ২-৩ লিটার জল খাওয়া জরুরি। ঘুম থেকে উঠে জল খেলে রাতভর বিপাকক্রিয়ায় উৎপন্ন টক্সিন বা দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে এই সময় ডিটক্স পানীয় খাওয়া যেতে পারে। শম্পা বলছেন, ‘‘ঈষদুষ্ণ জলে লেবু খাওয়া যেতে পারে, দারচিনি মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আমলকি, বেরি জাতীয় ফলও খাওয়া যায়।’’ তবে সারা দিন গরম জল খেতে থাকলে শরীরে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।