শরীর ভাল রাখতে কিংবা রোগা হওয়ার জন্য নিয়ম মেনে ডায়েট করছেন? তার মধ্যে লোভে পড়ে কখনও শিঙাড়া, পিৎজ়া বা চকোলেট পেস্ট্রি খেয়ে ফেলার পরই শুরু হয় অপরাধবোধ। কারণ, ৫০০ ক্যালোরি ঝরাতে যে কষ্ট, এই সমস্ত ‘জাঙ্ক ফুড’-খাওয়া মানে নিমেষেই তা ফের শরীরে চলে যাওয়া।
ডায়েটের ফাঁকতালে খেয়ে ফেলা লোভনীয় এই সমস্ত খাবারকেই ‘চিট মিল’ বলা হয়।তবে, এই ‘চিট মিল’-এরও দরকার আছে শরীরে। কারণটা জেনে নিন। তা হলে পরে আর ডায়েটে ‘চিট’ করলে অপরাধবোধে ভুগতে হবে না।
বিপাকের হার
নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাঝে আচমকা বার্গার, পিৎজ়া, মিষ্টি, পেস্ট্রির মতো উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা সাময়িক ভাবে বাড়িয়ে দেয় বিপাকের হার। দীর্ঘ দিন ধরে কম ক্যালোরির খাবারের প্রভাব বিপাকক্রিয়াতেও পড়ে। সে ক্ষেত্রে কমতে বসা বিপাকের হারকে বাড়িয়ে দিতে পারে ‘চিট মিল’।
গ্লাইকোজেন
শরীরচর্চার সময় শক্তির জন্য গ্লাইকোজেনের দরকার হয়। ‘চিট মিল’-এর বিভিন্ন খাবারে সাধারণত প্রচুর কার্বোহাইড্রেট থাকে। কার্বোহাইড্রেট পেশিতে গ্লাইকোজেন সঞ্চয়ে সাহায্য করে। যা শরীরচর্চার গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে।
মানসিক স্বস্তি
দিনের পর দিন কড়া ভাবে ডায়েট অনুসরণ করার পর এক-আধ দিন পছন্দের খাবার মনকেও স্বস্তি দেয়। ভাল- মন্দ খেতে কার না মন চায়! জিভে জল আনা খাবার খাওয়া মানে মনও খুশি থাকা। তা ছাড়া কাজের চাপ সামলাতে যেমন মাঝেমধ্যে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তেমনই মাঝেমধ্যে মনের মতো খাবার দীর্ঘ দিন ডায়েট চালানোর উৎসাহ জোগায়।
লেপটিনের মাত্রা বাড়ায়
খিদে, বিপাকক্রিয়ার হারের ওপর প্রভাব ফেলে লেপটিন হরমোন। ডায়েটে সাধারণত কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার থাকে, যা লেপটিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ‘চিট মিল’-এর ফলে একসঙ্গে অনেকটা ক্যালোরি শরীরে যাওয়ায় লেপটিনের মাত্রাও বেড়ে যায়। যা খিদে ও শক্তিক্ষয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় জরুরি।
মেজাজ ভাল রাখে
পছন্দের খাবার মন ভাল করে দেয়। মুচমুচে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হোক বা ভেটকির পাতুরি, লোভনীয় খাবারের স্বাদ বাড়তি ভাল লাগা নিয়ে আসে। যখন কোনও কিছুই ভাল লাগছে না, তখন যদি পছন্দসই খাবার পাওয়া যায়, মন কিন্তু ভাল হয়ে যায়।
লোভ কমায়
পছন্দের খাবার দেখে না খেতে পারায় মনে যেমন দুঃখ হয়, তেমনই সেই খাবারের প্রতি লোভ বাড়তেই থাকে। এর চেয়ে ভাল, এক দিন সেই খাবারটা খেয়ে নেওয়া। তা হলে সেই খাবারের প্রতি লোভ মিটবে। সারা সপ্তাহ আবার ডায়েটে মন দেওয়া যাবে।
অনুষ্ঠান
পার্টি হোক বা কোনও অনুষ্ঠান, ডায়েট করাকালীন সেখানে গিয়ে না খেলে তা নিয়ে সমালোচনা হতেই পারে। আবার যে অনুষ্ঠানে খাওয়াই মুখ্য, সকলে খাবারেরর স্বাদ নিয়েই চর্চা করছেন, সেখানে গিয়ে ‘চিট ডায়েট’ না করলে ভাল দেখায় কি?
‘চিট মিল’ পরিকল্পনা
কোনও নিমন্ত্রণ বা খাওয়া-দাওয়ার আগাম পরিকল্পনা থাকলে সেই দিনটাই ‘চিট মিল’-এর জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে। না হলে সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে কী কী খাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে, তা খাওয়া যায়। তবে ‘চিট মিল’ মানে পিৎজ়া, বার্গার, আইসক্রিম—সব কিছু একসঙ্গে খেয়ে ফেলা নয়। পছন্দের একটা পদ বেছে নেওয়াই ভাল। তার পরিমাণের দিকটাও মাথায় রাখা দরকার। আর এই ধরনের খাবার খাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ আগে ও পরে প্রচুর জল পান করা উচিত।