এই রোগের জন্য দায়ী ব্যাসিলাস সেরেয়াস, যা আদতে এতটাও ঘাতক নয়। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রান্না করা খাবার বাইরে ফেলে রেখে তা ভুলে যাওয়ার অভ্যাস ঘরে ঘরে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে তা খেয়াল হতেই আমরা খাবার রেফ্রিজারেটরে রেখে দিই। কখনও আবার বাইরে ফেলে রাখা সেই খাবারই গরম করে খেয়ে নিই। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এমন অভ্যাসের কারণে নানা অসুখ হতে পারে। আর এমনই একটি রোগের কথা সম্প্রতি ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। তার নাম, ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’।
নামের নেপথ্যে
খাবার থেকে বিষক্রিয়া হওয়া এবং তা মারাত্মক পর্যায়ে যাওয়ার কথা প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোমও কিছুটা এমনই।
বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে চিনের বেশ কিছু জায়গায় খাবারে বিষক্রিয়ার কথা সামনে আসে। বিশেষজ্ঞরা দেখেন, অসুস্থ প্রায় সকলেই স্থানীয় কিছু রেস্তরাঁ থেকে ফ্রায়েড রাইস খেয়েছিলেন। পরীক্ষায় দেখা যায় যে, ওই ফ্রায়েড রাইসে এমন কিছু ব্যাক্টিরিয়া ছিল, যা এই রোগের কারণ। একই ধরনের কিছু ঘটনার হদিস মেলে ইউরোপের দেশগুলি থেকেও। তবে এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুধু ফ্রায়েড রাইস নয়, ‘স্টার্চ’ জাতীয় খাবার, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, মাংস থেকেও এই ধরনের বিষক্রিয়া হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ বাইরে ফেলে রাখার ফলে খাবারে জন্ম নেওয়া ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামে এক ধরনের ব্যাক্টিরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী, জানান বিশেষজ্ঞরা। সেই সময় এই ব্যাক্টিরিয়া থেকে বিষক্রিয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছিল চিনে এবং তা হয়েছিল ফ্রায়েড রাইস খাওয়ার ফলে। তাই রোগটির নামও রাখা হয় ‘ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোম’।
সম্প্রতি এই রোগের কথা আবার চর্চায় উঠে এসেছে। নেপথ্যে, ২০০৮ সালে বছর ২০-র এক তরুণের মৃত্যু। বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে জানা গেলেও, কোন খাবার এর জন্য দায়ী তা তখনও জানা যায়নি। পরে গবেষকেরা দেখেন, পাস্তা রাঁধলেও তা রেফ্রিজারেটরে রাখতে ভুলে গিয়েছিলেন ওই তরুণ। পাঁচ দিন পরে সে কথা মনে পড়লে গরম করে খেয়ে নিয়েছিলেন। তার পরেই শুরু হয় প্রবল বমি, পেট খারাপ, মাথা ঘোরার মতো নানা সমস্যা। ক্রমেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
উপসর্গ, উপায়
খাবার থেকে বিষক্রিয়ার ফলে যে ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোমেরও উপসর্গগুলি তেমনই। সাধারণত দেখা যায়,
চিকিৎসক সুবীর মণ্ডল জানাচ্ছেন, এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে যে সব সময় তা ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোমের ইঙ্গিত দেবে, তেমনটা নয়। যে কোনও খাদ্যে বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রেই এমন সমস্যা দেখা দেয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু সহজলভ্য ওষুধ, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া এবং নিয়ন্ত্রিত ডায়েটের সাহায্যে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। এ রোগ ফেলে রাখলে অবশ্য তা মারাত্মক আকার নিতে পারে, হতে পারে মৃত্যুও।
খাবার বুঝে
এই রোগের জন্য দায়ী ব্যাসিলাস সেরেয়াস, যা আদতে এতটাও ঘাতক নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির শিক্ষক সুখেন্দু মণ্ডল বললেন, “ব্যাসিলাস-এর উপপ্রজাতিগুলি আমাদের চারপাশের বাতাসে ভেসে রয়েছে। সব সময় তা ক্ষতিকারকও নয়। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যাক্টিরিয়া প্রোবায়োটিকের কাজও করে। অর্থাৎ আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে, যেমন ল্যাক্টোব্যাসিলাস। দইয়ে এই ব্যাক্টিরিয়া মেলে যা আমাদের জন্য উপকারী।”
তবে যখন কোনও খাবার ভাল ভাবে রান্না করা হয় না বা দীর্ঘক্ষণ ধরে বাইরে ফেলে রাখা হয়, তা হলেই দেখা দেয় বিপত্তি। একই সমস্যা দেখা দেয় সংরক্ষিত বা ‘প্রিজ়ার্ভড’ বা ‘ক্যানড’ খাবারেও। খাবারের পচন প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিছু বিষাক্ত উপাদান বা টক্সিনেরও সৃষ্টি হয়, যা শরীরে গেলে আমরা অসুস্থ হতে বাধ্য। এই প্রক্রিয়ায় যেমন ফ্রায়েড রাইস সিনড্রোমের জন্য দায়ী ব্যাসিলাস সেরেয়াস রয়েছে, তেমনই নানা ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়াও রয়েছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ