শব্দ জব্দ ২০২৩-এর মঞ্চ (ইনসেটে শ্রেয়া নস্কর)। নিজস্ব চিত্র।
‘‘ বিপুলা এই পৃথিবীর কতুটুকু জানি ’’
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অচেনাকে চেনার এবং অজানাকে জানার জন্য মানুষের মনে অনন্ত আগ্রহ জাগে। আমারও জানার আগ্রহ কিছুটা এমনই ছিল। তাতে ভর করেই ২০২৩-এর ২৭ জুলাই আনন্দবাজার অনলাইন আয়োজিত ‘শব্দ জব্দ’-এর চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তার আগেই অবশ্য জানা হয়ে গিয়েছিল, এই প্রতিযোগিতা আসলে কিসের।
আমাদের মাতৃভাষার মাধুর্যকে সংরক্ষণ করতে প্রতি বছর ‘শব্দ জব্দ’ নামে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২০২৩-এ মোট ১৫৩টি স্কুলের ৪০ হাজারের বেশি পড়ুয়া বাংলা শব্দ নিয়ে নানা মজার খেলায় মেতেছিল। রাজ্যের ১০টি জেলার ৪২টি শহরের মধ্যে বেধেছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
এই লড়াইয়ে সামিল হতে এবং নিজের মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য আমি ও আমার সহপাঠী সায়ন্তনী দে এবং দ্বাদশ শ্রেণির সুপর্ণা দিদি (সুপর্ণা মণ্ডল)— আমরা তিন জন কামরাবাদ গার্লস হাইস্কুলের তরফে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। প্রতিযোগিতাটি রবীন্দ্র সদনে আয়োজিত হয়েছিল। যেহেতু এর আগে আমি কখনও এ রকম কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করিনি, তাই ওই দিন মনের মধ্যে এক চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। স্কুলের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকতে পেরে খুব আনন্দও হচ্ছিল।
এর পর খেলার প্রথম পর্বে ১৫৩টি স্কুলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার লড়াই শুরু।পরের পর্বে সেরা ৫০টি স্কুলের তালিকায় যখন আমাদের নাম ঘোষণা করা হল, তখন ভাল খেলার উৎসাহটা আরও বেড়ে গেল। প্রথম পর্বের প্রশ্নপত্র সহজ হলেও দ্বিতীয় পর্বের প্রশ্ন একটু কঠিন ছিল। তাই দ্বিতীয় পর্বের শেষে সেরা ৬টি স্কুলের মধ্যে নিজেরা জায়গা করে নিতে পারব কি না, তা নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
সেই সময় সায়ন্তনী ভরসা দিল, আমরা পারব। সেই ভরসাকেই সঙ্গী করে আমরা নিজের সেরাটা দিয়ে খেললাম। এর পর অন্তিম পর্বে প্রতিযোগী হিসাবে যখন আমাদের স্কুলের নাম ঘোষণা করা হল, তখন আনন্দের সীমা ছিল না। শেষ পর্যায়ের লড়াইটা খুবই কঠিন ছিল। লায়ন্স ক্যালকাটা বিদ্যামন্দির ৩৫৫ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম স্থানে জায়গা করে নিল। এ দিকে আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম কিছুটা।
কিন্তু হাল ছাড়িনি। তাই শেষ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে ২৮৫ পয়েন্ট পেলাম আর দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলাম। লড়াইটা সহজ তো ছিলই না, কিন্তু নিজেদের শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে না পারলে হয়তো আরও কঠিন হয়ে যেতো। আমরা পিছিয়ে পড়িনি, এটাই আমাদের এত বড় একটা প্রতিযোগিতায় এত ভাল ফল করার সুযোগ দিয়েছে।
এই লড়াইয়ের কথা নিজের বাবা-মা তো বটেই, স্কুলের শিক্ষিকাদের বলতে পেরেও খুব গর্ব বোধ করেছি। ‘শব্দ জব্দ ২০২৩’ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে এত আনন্দ পেয়েছি, এটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। তার উপর স্বয়ং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়াটা আমার কাছে ভীষণ গর্বের একটা মুহূর্ত।
মাতৃভাষার চর্চা, অভ্যাস করার মাধ্যমে তার সংরক্ষণের চেষ্টার ছবি ‘শব্দ জব্দ’-এর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতি, আমাকে এমন একটা প্রয়াসে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি আবারও এমন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চাইব।