ফার্নিচারের দোকানে অযত্নে পড়ে ছিল কাঠের আলমারিটা। সাহিবুলের ইচ্ছা ছিল রেজিনাকে আলমারিটা কিনে দেবে, দরদাম করে নিজের টিনের চালের ঘরে নিয়ে এল সাহিবুল। আলমারিতে একটা ছোট্ট ডিম্বাকার আয়না আছে। পেছন দিকটায় আগুনে পোড়ার একটা দাগ আছে। আলমারির ভেতরে একটা গুপ্ত কুঠুরির মধ্যে রেজিনা কতগুলো হলদে হয়ে যাওয়া চিঠি আবিষ্কার করেছে।
প্রিয়তম সুবল,
তোমার পাঠানো উপহারটি পাইয়াছি, ইহা অতিশয় সুন্দর হইয়াছে। ইহার সামনে দাঁড়িয়ে আমি তোমার জন্য সাজি। তাড়াতাড়ি ঢাকা থেকে চলে আসিও। আমার ভালবাসা নিও। তোমার রুকসানা।
পরের চিঠিটা সাহিবুল পড়তে শুরু করল।
প্রিয়তম সুবল,
কলকাতার অবস্থা এখন ভাল নয়, গান্ধীজির কথা কেউ শুনছে না, এখানেও হয়তো দাঙ্গা লাগতে পারে। আমি খুব ভয়ে আছি। আমার ভালবাসা নিও। তোমার রুকসানা।
সাহিবুল পরের চিঠিটা নিয়ে বলে ওঠে, ‘‘এটা রুকসানা লেখে নাই রে, এটা অন্য কেউ লিখেছে।’’
স্নেহের সুবল,
আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, দাঙ্গাবাজরা কিছুই আস্ত রাখেনি। তোমায় একটা দুঃসংবাদ দিই, তোমাদের বাসায় দাঙ্গাবাজরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, তার পর থেকে রুকসানার কোনও খবর নেই। আমাদের আশঙ্কা সত্যি হবে কি না, জানি না। তুমি সত্বর কলকাতার উদ্দেশে রওনা দাও। নন্দলালদা।
রেজিনার চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে। আলমারির পোড়া দাগটার কথা মনে পড়ে যায়। সাহিবুলকে জড়িয়ে ধরে সে, বলতে থাকে আমায় ছেড়ে যাসনি কোনও দিন। আলমারিটা সাক্ষী হয়ে থাকে আর একটি ভালবাসার।