‘স্বয়ম্বর— মিকা দি ভোটি’-র চূড়ান্ত পর্বে কলকাতার মেয়ে প্রান্তিকা দাস। পঞ্জাবি গায়কের সেরা পছন্দ হয়ে ওঠার মুখে দাঁড়িয়ে কেমন লাগল গোটা সফর? চূড়ান্ত পর্বের আগে জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।
প্রশ্ন: বাংলার মানুষ কি পঞ্জাবি জামাই পেতে চলেছে?
প্রান্তিকা: (হাসি) হতেই পারে। কে বলতে পারে! এখন আমি টপ থ্রি তে আছি। চূড়ান্ত পর্বে তিন জনের মধ্যে আকাক্ষা ও নীত দু’জনেই পঞ্জাবি। একমাত্র আমিই বাঙালি।
প্রশ্ন: বাঙালি বলে কি মিকার কাছে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছেন?
প্রান্তিকা: আমার ও মিকাজির মধ্যে বয়সের ফারাক অনেকটাই। আমাদের সংস্কৃতিও আলাদা, এই নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।
প্রশ্ন: কী রকম সমালোচনা?
প্রান্তিকা: অনেকেই বলেছেন, আমি টাকার লোভে ও গানের জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে মিকার জীবনসঙ্গিনী হতে চাইছি। মিকাজিকেও অনেকে প্রশ্ন করেছেন, পঞ্জাবি মেয়ে থাকতে তিনি কেন বাঙালি মেয়ের পিছনে দৌড়চ্ছেন? কড়া উত্তর দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন: কী ভাবে পৌঁছলেন ‘স্বয়ম্বর— মিকা দি ভোটি’-তে?
প্রান্তিকা: টিভি চ্যানেলই আমায় এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি মিকা সিংহর অনুরাগী, এটা আসলে অনেকেই জানেন। মাকে বিষয়টা বলতে মা-ও অনুমতি দিলেন। কলকাতা থেকে ৫০-৬০ জন প্রতিযোগীর নাম যায়। দু’-তিন জনকে বেছে নেয় ওরা। আমি আর চন্দ্রাণী প্রথম রাউন্ডে অংশ নিই।
প্রশ্ন: চন্দ্রাণী বাদ পড়লেন কেন? আপনার কী মনে হয়?
প্রান্তিকা: ও খুব ইমেজ কনসাস। অনেক ভুল ব্যাপারকে ও প্রশ্রয় দিয়েছে বা মুখের ওপর সত্যি কথা বলতে পারেনি। আলাপ-পর্বে ও বলেছিল, ‘‘মিকা সিংহ কে আমি জানি না। আমার ম্যানেজার বলেছে, তাই এসেছি।’’ ওর এই কথাটা মিকাজিরও ভাল লাগেনি।
প্রশ্ন: আপনি তো ভাল গান করেন, কী গান শোনালেন মিকা কে?
প্রান্তিকা: অনেক গান শুনিয়েছি। প্রথমেই ‘দিলবর মেরে কব তক মুঝে অ্যায়সে হি তড়পাওগে’।
প্রশ্ন: কলকাতায় হবু জামাইয়ের জন্য আপ্যায়নের আয়োজন কেমন ছিল?
প্রান্তিকা: বাংলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের পরিচয় যাতে উনি পান, সেই ভাবনাতেই পুরো ব্যবস্থা করাছিলাম। একটা বাংলোকে নিজের মনের মতো করে সাজিয়েছিলাম। মিকাজি এসেছিলেন ক্রুজে। মা বরণডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শাঁখ, উলুধ্বনি, ধান-দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করে জামাইয়ের মতোই বরণ করা হয় মিকাজিকে। কলকাতার মিষ্টি, দই, ফুচকা, ফিস কবিরাজি ছিল। কাঁসার থালায় খাবার পরিবেশন করেছিলাম। মা তো বলেই ফেললেন, ‘আজই আমি জামাইষষ্ঠী পালন করব!’
প্রশ্ন: জামাইষষ্ঠী কী মিকা জানেন?
প্রান্তিকা: হ্যাঁ, মায়ের কাছেই শুনেছেন পুরো ব্যাপারটা।
প্রশ্ন: মিকার পরিবারের আপনাকে কেমন লাগল?
প্রান্তিকা: ওঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম কত? বলতে পারিনি। বাজার করা আমি শিখে নেব বলেছি। তবে আমার মতো মেয়েকেই ওদের পছন্দ, এমনটা বলেছেন ওঁরা।
প্রশ্ন: ফাইনালে পৌঁছে কেমন লাগছে?
প্রান্তিকা: অনেকেই বলছেন, এটা আমার ইনফ্যাচুয়েশন। আমার যদি যোগ্যতা না থাকত, ফাইনালে পৌঁছতে পারতাম না। আমিও আমার ভালবাসার জোরেই মিকাজির মন জয় করব। আমাদের কেমিস্ট্রি সবার চেয়ে আলাদা। আমিই মিকাজির ‘ভোটি’ হব।
প্রশ্ন: আপনাদের রসায়ন ঠিক কেমন?
প্রান্তিকা: মিকাজি আমার সঙ্গে একদম ছেলেমানুষ হয়ে যান। অন্য প্রতিযোগীদের সঙ্গে উনি এতটা স্বচ্ছন্দ নন। কেমিস্ট্রি রাউন্ডে আমিই জিতেছি। সে দিন মিকাজি ‘খোয়াব হো তুম ইয়া কোই হকিকত’ গেয়ে আমাকে প্রোপোজ করেছিলেন। আমায় ‘মিষ্টি রসগোল্লা’ বলে গাল টিপে আদর করেন। বাকিরা তাই আমায় হিংসে করে।
প্রশ্ন: আকাঙ্ক্ষা আর নীতের কথা বলছেন?
প্রান্তিকা: আকাঙ্ক্ষা খুব জটিল। আর নীত সব সময় বলে ‘‘আমি মিকার অনেক দিনের পরিচিত, আমিই মিকার ভোটি হব।’’ কিন্তু যখন ওকে মিকার সম্পর্কে অজানা কিছু বলতে বলা হয়েছিল, নীত উত্তর দিতে পারেনি।
প্রশ্ন: আকাঙ্ক্ষা বা নীতের সঙ্গে মিকার অনেক দিনের পরিচয়, ওরা অনেকটাই এগিয়ে আছেন?
প্রান্তিকা: লড়াইটা কঠিন। তবে প্রথম দিনের তুলনায় অনেক সহজ। ওরা আগে থেকে মিকাজিকে চেনে বলেই যে এগিয়ে আছে, এটা আমি মনে করি না। ওরা যদি সত্যিই ওঁকে ভালবাসত, এত দিনে বলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। সেটা বলতে মিকাজির স্বয়ম্বরে আসার দরকার ছিল না।
প্রশ্ন: নিজের সম্পর্কে কী বললেন মিকা?
প্রান্তিকা: বলেছিলেন, ওঁর প্রথম ভালবাসা গান। যিনি ওঁর স্ত্রী হবেন, তিনি দ্বিতীয় স্থানে থাকবেন। আর ওঁর উপার্জনের অনেকটাই দুঃস্থদের সাহায্যে খরচ করেন।
প্রশ্ন: ডেটে গিয়ে ‘শাওন মে লাগ গয়ি আগ’ গায়কের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ হলেন?
প্রান্তিকা: অনেকটাই। আমাদের কেমিস্ট্রি দর্শকও পছন্দ করছেন। সবচেয়ে বেশি সমর্থন আমাদের জুটিই পাচ্ছে।
প্রশ্ন: অনস্ক্রিন তো অনেক বার চুম্বন করতে দেখা গিয়েছে আপনাদের। একান্তে?
প্রান্তিকা: না না, সেই সুযোগ এখনও পাইনি।
প্রশ্ন: কেমন জীবনসঙ্গী হবেন মিকা? কী বুঝলেন?
প্রান্তিকা: ওঁকে সবাই বাইরে থেকে দেখে বিচার করে। ‘ব্যাড বয়’ লুক নিয়ে চললেও আসলে খুবই নরম মনের মানুষ। একেবারে বাচ্চাদের মতো।
প্রশ্ন: অনেক রটনা রয়েছে মিকার নামে। বিতর্কেও জড়িয়েছেন বহু বার। এমন কাউকে স্বামী হিসেবে কেন পেতে চান?
প্রান্তিকা: যাঁরা বিখ্যাত, তাঁদের নামে বিতর্ক থাকবেই। অনেকেই হিংসা করে ওঁকে বদনাম করে।
প্রশ্ন: এমনই এক স্বয়ম্বরে কলকাতার মেয়ে ডিম্পি গঙ্গোপাধ্যায়ের রাহুল মহাজনের বিয়ে হয়, কিন্তু সেই বিয়ের পরিণতি সুখের ছিল না।
প্রান্তিকা: আমার মনে হয় ওঁদের পরস্পরকে আরও চিনে নেওয়া উচিত ছিল। সেটা ওঁরা করেননি। ফাইনালের দিন পর্দায় বিয়ে হলেও আমরা দু’জনেই কিছুটা সময় নেব।
প্রশ্ন: বিয়ের আগে মানসিক বা শারীরিক সব দিক থেকেই সঙ্গীকে বুঝে নিতে চান অনেকে, আপনি কি সেটাই চান?
প্রান্তিকা: অতটা ঘনিষ্ঠতা এখনও হয়নি। একসঙ্গে থাকার আগে আমিও চাই মিকাজিকে আরও বুঝে নিতে।
প্রশ্ন: শো ছাড়াও মিকার সঙ্গে যোগাযোগ থাকে?
প্রান্তিকা: ফোন, মেসেজে সব সময়ে আমাদের যোগাযোগ থাকে।
প্রশ্ন: তা হলে আপনিই মিকার জীবনসঙ্গিনী হতে চলেছেন?
প্রান্তিকা: সেটা জানতে তো আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। এটা প্রেমের লড়াই। এখানে হার-জিত টা বড় নয়, আমি এখানে পৌঁছেছি তার পিছনে কোথাও ঈশ্বরের ইচ্ছেও রয়েছে। আমি যদি বোঝাতে পারি আমি ওকে কতটা ভালবাসি, উনি যদি আমার সঙ্গে স্বচ্ছন্দ হন, আমি মিকাজিকে পাবই।
প্রশ্ন: আপনাকে কেন জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নেবেন মিকা?
প্রান্তিকা: আমার প্রতি ওঁর ভালবাসা কতটা, সারা পৃথিবী জানে। আমি ওঁর সামনে এলেই ওঁর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমার জন্য ওঁর ভালবাসা চোখে ফুটে ওঠে।