রেটিং চার্টে আবার শীর্ষে ‘রাণী রাসমণি’, কীসের জোরে?

অবাক কাণ্ড! টিআরপি-তে 'রাণী রাসমণী' এক নম্বরে। যেমন অবাক কাণ্ড হতে পারে ’২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-বাম জোট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৩৫
Share:

ধারাবাহিকটির কলাকুশলীরা।

অবাক কাণ্ড! টিআরপি-তে 'রাণী রাসমণী' এক নম্বরে। যেমন অবাক কাণ্ড হতে পারে ’২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-বাম জোট।

Advertisement

বিশ্বাস না করার মতো ঠিক এ রকমই আর একটি ঘটনা ঘটেছে চলতি সপ্তাহে। যে রেটিংয়ের ধাক্কায় বায়োপিক ‘কাদম্বিনী’ আউট অব ট্র্যাক, সেই রেটিংই কয়েক সপ্তাহ পরে ফের শীর্ষে বসিয়েছে জি বাংলার সাড়ে তিন বছর ধরে চলতে থাকা জীবনী ‘রাণী রাসমণি’-কে।

এমন হল কী করে?

Advertisement

সাংসারিক কূটকচালির পাশে যদি ইতিহাসকে যথাযথ ভাবে পরিবেশন করা যায়, দর্শক কি সে দিকেই ঝোঁকেন? নাকি এই ঘুরে দাঁড়ানোর মূলে শুধুই রাসমণির মতো কিংবদন্তী চরিত্র? আনন্দবাজার ডিজিটালকে একাধিক যুক্তি সাজিয়ে দিলেন প্রশ্নের সপক্ষে। রানিমাকে নিয়ে তথ্য অনেক কম। ধারাবাহিকের গবেষক শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, কাজ করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে দারুণ সব গবেষণা।

রানিমা? সামান্য মেয়ের অসামান্য হয়ে ওঠা--- নাড়া দিয়েছে দর্শক মনকে?

সাধারণ মানুষ যা জানতেন না, সেই সব ঘটনা এই ধারাবাহিকের মধ্য দিয়ে জানতে পেরেছেন। সেই ঘটনাগুলো যখন জি বাংলা তুলে ধরল মেগায়, ধারাবাহিক সুপারহিট।

নাটকীয় সংলাপ মেগার দর্শককে বরাবর টেলিভিশনের সামনে এনে হাজির করেছে। মেগার সমস্ত চরিত্রের সংলাপ এমন নাটকীয়তায় মুড়ে দিয়েছেন তাঁরা যে দর্শক পর্দার সামনে বসে থাকতে বাধ্য। এই প্রসঙ্গে ধারাবাহিকের লেখক শাশ্বতী রায়ের বক্তব্য, ‘‘ইতিহাসের গল্প, রামকৃষ্ণের লীলা আর রাসমণির বৈচিত্রময় জীবন যে আমরা তুলে ধরতে পারছি, এটাই সবচেয়ে ভাল লাগার। ব্যক্তিজীবন আর ইতিহাস, দুটো সমানুপাতে মিশেছে বলেই আজও ‘রাণী রাসমণি’ এই জায়গায়।’’

আর রানিমা? সামান্য মেয়ের অসামান্য হয়ে ওঠা--- এটাও নিশ্চয়ই নাড়া দিয়েছে দর্শক মনকে? অবশ্যই, স্বীকার করে নিলেন গবেষক, লেখক উভয়েই। শিবাশিস যোগ করলেন, ‘‘দর্শকদের যে শ্রেণি ধারাবাহিককে জনপ্রিয় করেছেন তাঁরা কিন্তু ইতিহাসের চেয়ে রানিমার সংসার জীবনের প্রতিই বেশি আগ্রহী। দর্শক রাসমণির আধ্যাত্মবাদ, বিধবা হওয়ার পরেও ব্যবসায় সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখতে পছন্দ করেছিলেন। পুত্রসন্তান না হওয়ায় রাসমণি সারা ক্ষণ জামাইদের মুখাপেক্ষী, মেয়ে-জামাইদের থেকে যন্ত্রণা পাচ্ছেন, দর্শক রাসমণি নয়, এই দৃশ্যে ঘরের মেয়েকে খুঁজে পেয়েছেন।

এই সাধারণ মেয়ের ‘মহীয়সী’ হয়ে ওঠার গল্পে যোগ হয়েছে দেবী কালী আর শ্রীরামকৃষ্ণ। সব বাঙালির ‘প্রথম আলো’ বা ‘সেই সময়’ পড়া হয়নি। বাঙালি দর্শকের কাছে রানি রাসমণি আর পাঁচটা বাঙালি বউয়ের চরিত্র হয়ে এল এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে। মানুষ, বিশেষত মেয়েরা নিজেকে খুঁজতে থাকল রানিমার মধ্যে। দেখা যায়, রাসমণির স্বামী রাজচন্দ্র দাস সামাজিক কাজ করছেন, সেই কাজে পর্দানসীন রাসমণির সমর্থন ছিল। ভোগিনী থেকে যোগিনী হওয়ার প্রতিটি ধাপ যেন বড় বেশি রক্তমাংসে গড়া— এত ভাবে রাসমণিকে দেখেছেন দর্শক। এই বই-চিত্র রাসমণির তুমুল জনপ্রিয়তার কারণ।

পাশাপাশি, এই ধারাবাহিক মিউজিক্যাল-ও। সুরকার উপালি চট্টোপাধ্যায় কবিগান, তর্জা, কীর্তন, টপ্পা, রূপচাদ পক্ষ্মী— সব কিছুরই ব্যবহার করেছেন এখানে। ‘‘শ্যামাসঙ্গীতের এমন কোনও পদ নেই যা রাসমণিতে ব্যবহার হয়নি। এই সব উপাদান ঠিকমতো কাজ করতেই রাসমণি হাজারের বেশি পর্ব পরেও হিট। দর্শক কখনওই একঘেয়েমিতে ভোগেননি”, বললেন শিবাশিস।

সাংসারিক কূটকচালির পাশে যদি ইতিহাসকে যথাযথ ভাবে পরিবেশন করা যায়, দর্শক কি সে দিকেই ঝোঁকেন?

সাংসারিক টানাপড়েন, বিধবা বিবাহের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা, শ্রীরামকৃষ্ণ দেব, মা ভবতারিণী, তৎকালীন ধর্ম আর গোঁড়ামি, ইংরেজদের বিরুদ্ধে রানিমার জেহাদ— যে যে উপাদানে একটি মেগা ‘আকর্ষণীয়’ হয়ে ওঠে তার সব ক’টিই ‘রাণী রাসমণি’-তে নিক্তি মেপে আছে, দাবি ‘টিম রাসমণি’র।

এর পরেও মেগা হিট না হয়ে উপায় কী!

ধারাবাহিকের এই উপকরণ, সমস্ত আয়োজন সফল দিতিপ্রিয়া রায়ের দাপুটে অভিনয় গুণে। ১৮ বছরের এক কিশোরী বধূ থেকে রাশভারী বিধবা শাশুড়ি হয়ে চমকে দিলেন ধারাবাহিকের দুনিয়াকে। এমন এক মেয়ে যিনি রানিমার সব বয়সের জীবন দেখিয়ে দিলেন তাঁর সাবলীল অভিনয়ে! শিবাশিসের দাবি, ‘গড গিফ্টেড’ অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া। তাঁর সঙ্গে গাজি আব্দুন নূর, ঠাকুররূপী সৌরভ, মথুরবাবুরূপী গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের সকলের কেমিস্ট্রি অসাধারণ। দর্শক এঁদের থেকে চোখ ফিরিয়ে থাকবেন কী করে?”

দিতিপ্রিয়া নিজে কী বলছেন? ‘‘রাণী রাসমণি কিন্তু ইতিহাসের থেকেও সংসার জীবনের কথা বেশি বলে। গল্পই এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তার কারণ।’’ যদিও এক নারীর জীবনের এতগুলো স্তর, ওঠাপড়া নিজের মধ্যে ধারণ করে তাকে ক্যামেরার সামনে অনায়াসে ফুটিয়ে তোলা প্রচণ্ড পরিশ্রমের। মেনে নিলেন ‘রানিমা’। জানালেন, একটা চরিত্র সাড়ে তিন বছর ধরে করতে করতে একটা সময় সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়। ‘রানিমা’ তাই দিতিপ্রিয়ার খুব প্রিয় একটি অভ্যাস। সেই অভ্যাসের জোরেই রাসমণি কোন পরিস্থিতিতে কী বলতে পারেন, স্ক্রিপ্ট না পড়েই গড়গড়িয়ে বলে দিতে পারেন তিনি!

এমন চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কোনও সংযম...?

থামিয়ে দিলেন সদ্য অষ্টাদশী, ‘‘কোনও সংযম পালন করিনি। সারা ক্ষণ চরিত্রে ডুবেও থাকি না। যখন ক্যামেরার সামনে আসি আপনা থেকেই ‘রানিমা’ হয়ে যাই। কাট বললেই আমি দিতিপ্রিয়া।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement