বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে। মেয়ে প্রথমে এলেন মডেলিং, তারপর অভিনয়ে। নামে ও কাজে, দু’দিকেই তিনি চিত্রাঙ্গদা। ইন্ডাস্ট্রি ও জীবন, শাসন করেছেন নিজের শর্তে।
চিত্রাঙ্গদার জন্ম ১৯৭৬ সালের ৩০ অগস্ট রাজস্থানের যোধপুর শহরে। বাবা নিরঞ্জন সিংহ ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্নেল।বাবা সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন শহরে কেটেছে শৈশব।
রাজস্থানের কোটা, উত্তরপ্রদেশের বরেলী, মেরঠে চিত্রাঙ্গদা ছোটবেলার বেশ কিছুটা অংশ কাটিয়েছেন।মেরঠের সোফিয়া গার্লস স্কুলের পরে চিত্রাঙ্গাদার পড়াশোনা দিল্লির লেডি আরউইন কলেজে। তাঁর বিষয় ছিল হোম সায়েন্স।
কলেজের পরে চিত্রাঙ্গদার প্রবেশ মডেলিং-এ। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি তিনি নজর কাড়েন গুলজার এবং অভিজিতের মিউজিক ভিডিয়োতে। প্রথম সিনেমা ২০০৩ সালে। সুধীর মিশ্রের ‘হাজারো খোয়াইশে অ্যায়সি’।
দেড় দশকের কেরিয়ারে ছবির সংখ্যা অবশ্য বেশ কম। চিত্রাঙ্গদা অভিনয় করেন বেছে বেছে। ‘সরি ভাই’, ‘দেশি বয়েজ’, ‘জোকার’, ‘ইনকার’, ‘গব্বর ইজ ব্যাক’, ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার থ্রি’ সিনেমায় তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
চিত্রাঙ্গদার ভাই দিগ্বিজয় সিংহ চাহাল পেশায় গল্ফার। পরে চিত্রাঙ্গাদর জীবনও জড়িয়ে যায় এক গল্ফারের সঙ্গেই। তবে তাঁর সঙ্গে আলাপ বাবার কর্মসূত্রে।
চিত্রাঙ্গদা সিংহ এবং জ্যোতি রণধাওয়ারের বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর একই রেজিমেন্টে। সেই সূত্রে চিত্রাঙ্গদা-জ্যোতির স্কুলজীবনেই প্রথম আলাপ। তবে প্রেমের সূত্রপাত আরও পরে। পাঁচ বছর প্রেমের পরে গাঁটছড়া ২০০১-এ।
তেরো বছরের দাম্পত্য ভেঙে যায় ২০১৪ সালে। একমাত্র ছেলে জোরাওয়রের কাস্টডি পান চিত্রাঙ্গদা। জ্যোতি-চিত্রাঙ্গদা পরিচিত ছিলেন হিট জুটি হিসেবেই। তাঁদের বিচ্ছেদে হতবাক হয়ে যায় ইন্ডাস্ট্রি।
অভিনেত্রী স্ত্রী এবং গল্ফার স্বামী, কেউ-ই বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে গুঞ্জন শোনা যায়, একে অন্যকে সময় দিতে পারছিলেন না তাঁরা। বিয়ের পরেই সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন চিত্রাঙ্গদা। কিন্তু পরের দিকে তাঁর ব্যস্ততাই দূরত্ব তৈরি করে বলে শোনা যায়। জ্যোতি নিজেও ব্যস্ত থাকতেন বিভিন্ন টুরে।
পরিচালক সুধীর মিশ্রের সঙ্গে চিত্রাঙ্গদার ঘনিষ্ঠতাও বিচ্ছেদের কারণ বলে মনে করে অনেকে। তাঁদের একসঙ্গে অনেক জায়গায় দেখাও গিয়েছে। কিন্তু পরে সেই ঘনিষ্ঠতাও ভেঙে যায়।
আবার এরকমও শোনা যায়, এক বান্ধবীর সঙ্গে জ্যোতির অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারেননি চিত্রাঙ্গদা। তাই তিনি সম্পর্ক থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
বিচ্ছেদ যে কারণেই হোক না কেন, ছেলের স্বার্থে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন প্রাক্তন তারকা জুটি। এমনকি, বিচ্ছেদের পরে জ্যোতিকে এও বলতে শোনা গিয়েছে, চিত্রাঙ্গদা ছাড়া তাঁর বাড়িতে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কিন্তু সম্পর্ক জোড়া লাগবার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
গল্ফার হওয়ার পাশাপাশি জ্যোতি একজন দক্ষ শিকারিও। গত বছর উত্তরপ্রদেশের কাতারনিয়াঘাট অভয়ারণ্যে তাঁর বিরুদ্ধে চোরাশিকারের অভিযোগও ওঠে।
২০১৮-র অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে মানুষখেকো বাঘিনী অবনীকে হত্যা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছিল। অবনীকে শিকার করার পর্বেও বড় ভূমিকা ছিল জ্যোতি রণধওয়ারের।
কাব্যের মতো বাস্তবের এই চিত্রাঙ্গদাকেও একাই বড় করতে হচ্ছে ছেলেকে। সিঙ্গল পেরেন্ট হওয়া সহজ নয়, এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছিলেন চিত্রাঙ্গদা সিংহ। তবে তিনি ছেলের জন্য সেই কঠিন কাজেই সফল হবেন। এই প্রত্যয়ও আছে তাঁর।