চারপাশের আপনজনরা উচ্চশিক্ষিত ও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। নিজেও যথেষ্ট মেধাবী। কিন্তু পড়াশোনার প্রথাগত পথে না গিয়ে পা রেখেছিলেন অন্য পথে। অভিনন্দন ও বিতর্ক এসেছে দুই-ই। ছক ভাঙা পথেই জীবনকে উপভোগ করতে ভালবাসেন মিলিন্দ সোমন।
মিলিন্দের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ নভেম্বর। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। তাঁর বাবা বিজ্ঞানী। মা, বায়োকেমিস্ট। সাত বছর বয়সে বাবা মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ড। আট বছর বয়সে আসেন মুম্বই। তারপর সেখানেই বড় হওয়া।
পড়াশোনা ডক্টর অ্যান্টোনিও দা সিলভা হাই স্কুল এবং জুনিয়র কলেজ অব কমার্সে। পরে বাইকুল্লার এম এইচ সাবু সিদ্দিক পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা।
ইঞ্জিনিয়ার হয়েও মিলিন্দ এলেন মডেলিং-এর পেশায়। আটের দশকের শেষ থেকে নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন মডেলিং। ১৯৮৯ সালে ‘থ্যাকারসে ফ্যাব্রিকস’-এর হয়ে তাঁর প্রথম মডেলিং। পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা।
১৯৯৫ সালে তিনিই আলিশা চিনয়ের মিউজিক অ্যালবামে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’। মডেলিং-এর পাশাপাশি অভিনয় করেছেন সিনেমা এবং টেলিভিশন সিরিজেও। তবে তাঁকে দেখা গিয়েছে বাছাই করা ভূমিকাতেই।
‘এ মাউথফুল অব স্কাই’, ‘মার্গারিটা’, ‘সি হকস’ তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় টিভি সিরিজ। অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তরকিব’, ‘কাঠপুতলি’, ‘রুলস: প্যায়ার কা সুপারহিট ফর্মুলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’ এবং ‘ভেজা ফ্রাই’।
হিন্দি ছাড়াও অভিনয় করেছেন মরাঠি, তামিল ও তেলুগু ছবিতে। তবে কেরিয়ার সাজিয়েছেন নিজের শর্তেই। সাফল্যের পাশাপাশি মেনে নিয়েছেন ব্যর্থতাকে। গ্র্যাভিয়ের শুটিং-এ বাতিল হয়ে গিয়েছিলেন প্রথমেই। আবার ‘জো জিতা ও হি সিকন্দর’ ছবিতে কয়েকটি দৃশ্য অভিনয়ের পরে ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে তাঁর বদলে নেওয়া হয়েছিল দীপক তিজোরিকে।
ভেঙে পড়েননি বিতর্কিত সময়েও। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন বান্ধবী ও প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া মধু সাপ্রের সঙ্গে নুড মডেলিং করেছিলেন বিখ্যাত জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার জন্য। দু’জনের গলায় জড়ানো ছিল অজগর। সে সময় আলোড়ন ফেলেছিল সেই দুঃসাহসী মডেলিং।
২০০৬ সালে ‘ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স’ ছবির সেটে তাঁর সঙ্গে আলাপ ফরাসি অভিনেত্রী মিলেন জাম্পানোই-এর। গোয়ার এক রিসর্টে দু’জনে বিয়ে করেন সে বছরেই। তবে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় ২০০৯-এ।
দ্বিতীয় বিয়ে ২০১৮ সালে। ২৮ বছর বয়সি বান্ধবী অঙ্কিতা কোনওয়ারকে বিয়ে করেন ৫৩ বছরের মিলিন্দ। দু’জনের ঘনিষ্ঠ ছবি শেয়ারও করেন নিয়মিত। সম্প্রতি অনেকে মন্তব্য করেছেন, অঙ্কিতার উচিত মিলিন্দকে ‘পাপা জি’ বলে ডাকা। একটুও না রেগে মিলিন্দ মজা করে উত্তর দিয়েছেন, অঙ্কিতা মাঝে মাঝে সে রকমই সম্বোধন করেন তাঁকে!
দুই স্ত্রী এবং বান্ধবী মধু সাপ্রে ছাড়াও অন্য নারী এসেছেন মিলিন্দের জীবনে। বিভিন্ন সময়ে সাহানা গোস্বামী, দীপান্বিতা শর্মা এবং গুল পনাগের সঙ্গে গুঞ্জরিত হয়েছে তাঁর নাম।
মিলিন্দ এক সময়ে দৈনিক ৩০টা করে সিগারেট খেতেন। নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা। সেখান থেকে তিনি সম্পূর্ণ ধূমপান ছেড়ে দেন। আদ্যন্ত স্পোর্টসম্যান মিলিন্দ সাঁতারের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশকে আন্তর্জাতিক স্তরে পদক এনে দিয়েছেন। বিভিন্ন ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় তিনি অগ্রণী। ৩০ দিনে ১৫০০ কিলোমিটার দৌড়ানোর রেকর্ড রয়েছে তাঁর।
প্রথম প্রয়াসেই মিলিন্দ ‘আয়রনম্যান ট্রায়াথলন’ সম্পূর্ণ করেছেন ১৫ ঘণ্টা ১৯ মিনিট সময়ে। এর মধ্যে থাকে ৩.৮৬ কিমি সাঁতার, ১৮০.২৫ কিমি সাইক্লিং এবং ৪২.২০ কিমি ম্যারাথন।
নিয়মিত শরীরচর্চার পক্ষে সচেতনতা প্রসারে মিলিন্দের ভূমিকা উজ্জ্বল। তাঁর প্রবীণ মা’-ও ছেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শরীরচর্চা করেন। দু’জনে নিয়মিত শেয়ার করেন সেই ছবি ও ভিডিয়ো। তবে এত কিছুর পরেও তাঁর প্রিয় খাবারের মধ্যে আছে গুড় আর ঘি। সে কথা স্বীকার করতেও দ্বিধাহীন সুপারফিট মিলিন্দ সোমন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)