বিজয় দেবরকোন্ডা। দক্ষিণী ছবির এই সুপারস্টার শুধু অভিনয় দিয়ে মানুষের মন জেতেননি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েও মন জিতে নিয়েছেন। অতিমারি পরিস্থিতি তো বটেই, এ ছাড়াও কেউ বিপদে রয়েছে জানতে পারলেই তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সুনাম রয়েছে তাঁর।
হায়দরাবাদের অভিজাত এলাকায় ১৫ কোটি টাকা খরচ করে নিজের বাংলো বানিয়েছেন তিনি। অথচ জানেন কি বিজয় আদপে এক কৃষক পরিবারের ছেলে। এমনও দিন ছিল যখন তাঁর বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁর জন্য আর টাকা খরচ করা সম্ভব নয়?
বিজয়ের জন্ম তেলঙ্গানার আচামপেটে, এক কৃষক পরিবারে। তাঁর বাবা গোবর্ধন রাও এবং মা মাধবী।
বিজয়ের বাবা অবশ্য পারিবারিক চাষাবাদের দিকে মনযোগ দেননি। বরং তিনিই পরিবারের প্রথম ব্যক্তি যিনি বিনোদন জগতের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন।
অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন গোবর্ধন। পারেননি। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন ছেলে বিজয়।
দক্ষিণী ছবির সুপারস্টার তিনি। বলিউডেও অভিষেক হতে চলেছে তাঁর। বিজয়ের বাবাও ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাতে সাফল্য না পেয়ে তিনি পরিচালনাতে হাত দিয়েছিলেন। সেখানেও ব্যর্থ হন।
কিছু সময় হায়দরাবাদের একটি স্কুলে পড়াশোনার পর বিজয় অনন্তপুরের সত্য সাই উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। এর পর হায়দরাবাদের বাদরুকা কলেজ অব কমার্স থেকে স্নাতক হন।
কলেজে পড়ার সময়ই তাঁর বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বেশি টাকা তিনি খরচ করতে পারবেন না। বিজয় যেন নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই ভেবে নেন।
বিজয় তখনই বাবার কাছে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। নাটকে কাজ করতে শুরু করেন।
২০১১ সালে পরিচালক রবি বাবুর কমেডি ছবি ‘নুভিলা’-তে প্রথম দেখা যায় তাঁকে। বিজয় সেখানে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন না। বিজয় ছাড়া আরও ছ’জন নতুন মুখ নিয়ে শ্যুটিং হয়েছিল এই ফিল্মের।
এর পর শেখর কুমারের ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ নামে একটি ছবিতে ছোট চরিত্রের সুযোগ পান।
টুকটাক অভিনয় করলেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছিলেন না তিনি। তাঁর প্রথম বাণিজ্য সফল ছবি ‘পেল্লি চপুলু’। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। রোম্যান্টিক এই ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর নজরকাড়া অভিনয় ২০১৭ সালের ‘অর্জুন রেড্ডি’। এই ছবির রিমেক হয়েছে বলিউডেও।
তার বলিউড রিমেক ‘কবীর সিংহ’। জানা যায়, এ ছবির জন্যও বিজয়কেই প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একই স্ক্রিপ্টে দু’বার কাজ করতে চাননি বিজয়। সেই প্রস্তাব লুফে নেন শাহিদ কপূর।
শুধু ছবি করেই জনপ্রিয় হননি বিজয়। নানারকম সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন তিনি।
তাঁর নিজের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও রয়েছে। ২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলায় নিহতদের পরিবারকে সাহায্য করেছেন তিনি। গণেশ অম্বারি নামে এক কিকবক্সারকে অর্থ সাহায্য করেছেন।
১ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করে তাঁর সংস্থা ১৭ হাজার পরিবারের দরজায় রেশন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছে।
ছোট থেকেই জেদি এবং নাছোড়বান্দা বিজয়। মা-বাবা যা বলতেন, পছন্দ না হলে ঠিক তার উল্টোটা করতেন। সে জন্য তাঁকে ‘রাউডি’ বলে ডাকতেন পরিবারের লোকজন।
পরিবারের দেওয়া সেই নামটা আজও বয়ে চলেছেন বিজয়। নিজের বাড়ির নাম রেখেছেন রাউডি।