Durga Puja 2024

সমাজের বাঁধা গতে ধরা দিতে নারাজ ওঁরা, পুজোর সাজেও দৃপ্ত আভেরী, অরিজিতা, সঙ্ঘশ্রী

দিন হোক বা রাত— রাস্তা শাসন করার অধিকার রয়েছে মেয়েদেরও। শুধু কণ্ঠস্বর নয়, সাজপোশাকেও ফুটে ওঠে সেই দৃঢ়তা। চোখরাঙানোর শিকল ছেঁড়ার সুর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩০
Share:
০১ ১০

মানুষ নয়, ‘মেয়েমানুষ’ ওরা! মাতৃগর্ভে ভ্রূণ নয়, ‘ভ্রূণা’! কবি কবিতা সিংহ তাই মায়ের কাছে জন্মের আগেই প্রার্থনা করেছিলেন ‘আমাদের জন্ম দিস না’। একবার জন্মে গেলে হাজার বিপত্তি। কেমন করে হাসবে, কথা বলবে, কেমন করে হাঁটবে-চলবে, পাশ ফিরবে— সবই নাকি ঠিক করে দেবে অন্য কেউ। কারণ, ওরা ‘মেয়েমানুষ’। কোমল হাতে চুড়ি বাজে রিনিঝিনি, পায়ে পায়জোর। অথচ, সেই হাতই ধরতে পারে কোদাল-শাবল। পায়ের তলার মাটি শক্ত রাখার লড়াই লড়ে যেতে পারে একাই। সঙ্ঘশ্রী, আভেরী আর অরিজিতা তেমনই তিন কন্যা। পুরুষশাসিত সমাজের কালো পিচ রাস্তায় ওঁদের হুল্লোড় মোড় নেয় জীবনের দিকে। সমাজের বেঁধে দেওয়া ৩৬-২৪-৩৬ স্কেলে ঝামা ঘষে দাপিয়ে বেড়ান শহর জুড়ে।

০২ ১০

পোশাক মানে আড়ম্বর নয়। সভ্য সমাজে বাস করার প্রয়োজনীয় এই উপাদানে মিলেমিশে থাকে মানুষের মনের সহজাত শিল্পভাবনা। স্বাচ্ছন্দ্য আর নান্দনিকতায় বোনা হয় সেই আচ্ছাদন। তাই তা যেমন আরামের, তেমনই নয়নাভিরাম। সে ক্ষেত্রে কোনও আপসে রাজি নন অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যে পোশাক আমার আত্মবিশ্বাস টলাবে না, তা-ই আমার কাছে সাহসী পোশাক। সে ক্ষেত্রে বক্ষ বিভাজিকা দেখা গেলে আমার কোনও অসুবিধা নেই, তেমন পোশাক আমি পরি। তবে স্থান কাল পাত্র বুঝে।”

Advertisement
০৩ ১০

নিজের শর্তে পোশাক পরার স্বাধীনতায় আজ পর্যন্ত কেউ বাধা দেয়নি অরিজিতাকে। তিনি বলেন, “আমি যথেষ্ট বুদ্ধি বিবেচনা করেই নিজের পোশাক নির্বাচন করি। তাই কারও কথা শুনে চলার দরকার পড়ে না।” অরিজিতার পরনে উঠল একটি সুতির কো-অর্ডিনেশন। ইন্ডিগো প্রিন্টের গোড়ালি ছোঁয়া স্কার্ট, মানানসই কল্কা ছাপ ক্রপ টপ। এ সাজ যেন সমাজের চেনা গণ্ডির বাইরের, বাঁ কাধে আর ডান কাঁধে তাই কোনও মিল নেই। চোখে চোখ রেখে স্বাধীন ভাবে বাঁচার বিষয়ে প্রত্যয়ী অভিনেত্রী। সেই প্রত্যয়ের দৃপ্ত ছায়া পড়েছে তাঁর ভারী রুপোর গহনায়।

০৪ ১০

আভেরী সিংহরায়, তাঁর ডাগর দুই চোখে জ্বলে স্বপ্নের প্রদীপ। মিতবাক এই অভিনেত্রীর স্মিতহাস্যে ঝরে পড়ে আত্মবিশ্বাস। তাঁর পরিধানে সুতির থ্রি-পিস। এখানেও নীলের ছোঁয়া। তবে তার ছোট ছোট খোপে যেন ফুটে উঠেছে নাগরিক ব্যস্ততা। অভিনয় শিল্পে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার দৃঢ়তা রয়েছে আভেরীর মধ্যে। সেই ছায়াই পড়েছে তাঁর পোশাকে। সামান্য আভরণে আভেরী গলায় পরেছেন একটি পিতলের প্রদীপ। সমকালের প্রতীক।

০৫ ১০

“আমি কখন কোথায় যাব, কেমন পোশাক পরব— তার কৈফিয়ৎ দিতে বাধ্য নই”, সাফ কথা অভিনেত্রী সঙ্ঘশ্রী সিংহের। তাঁর কোমর থেকে কালো ইক্কতের স্কার্ট ঝুলছে হাঁটু পর্যন্ত। একই কাপড়ে তৈরি সুতির জ্যাকেট আর সর্ষে-রঙা টিউব টপে সঙ্ঘশ্রীর প্রতিবাদী সত্তাই ফুটে উঠছে। অভিনেত্রীর খোলা চুল আর জ্বলন্ত দৃষ্টি যেন স্লোগান তোলে—‘না মানে, না’। পোশাক ভাবনার সঙ্গে মানানসই একটি ব়ড় আংটি সঙ্ঘশ্রী পরেছেন হাতের মধ্যমায়। সঙ্ঘশ্রী বলেন, “বডি শেমিং, কালার শেমিং, এজ শেমিং নিয়েই তো আমরা বেঁচে আছি। আমার খুব ইচ্ছে করে হাতা কাটা জামা পরতে, পারি না। বন্ধুরা বলে, হাত না গদা!” সে সব কিছু দূরে ঠেলে সঙ্ঘশ্রী চান নিজের মতো করে বাঁচতে।

০৬ ১০

‘রাত বিরেতে আড্ডা কিসের মেয়ে?’, ‘কেমন করে সরে গেল বুকের আঁচল?’ ‘এত জোরে কেউ হাসে?’— এ সব চোখরাঙানিতে এমনই অভ্যস্ত সমাজ যে, মহিলারাই প্রশ্ন তোলেন অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়ে। এই তিন কন্যারও বাড়ি ফিরতে রাত হয় বইকি! প্রথম দিকে বাড়ির অনেকেই মেনে নিতে চাননি অভিনয়কে পেশা করবেন মেয়ে। আবার বাড়ির লোক মেনে নিলেও বাঁকা চোখে তাকান প্রতিবেশীরা। এ দিকে কর্মক্ষেত্রেও তো শুনতে হয়েছে, “চেহারা তোমার নায়িকাসুলভ নয়।” তবে, পর্দায় নায়িকা হওয়াই তো সব কথা নয়! বরং, নিজের জীবনের রাশ নিজের হাতে রেখে মর্জির মালিক হয়ে ওঠাই আসল কথা।

০৭ ১০

তাই কখনও ইচ্ছে হলে খুব সেজে ফেলেন সঙ্ঘশ্রী। আবার কখনও একেবারে সাধারণ ভাবেই থাকেন। যেমন এই ছবিতে, একটি হাতে বোনা সুতির ডুরে শাড়ি বেছে নিয়েছেন অভিনেত্রী। উত্তরবঙ্গের তাঁতির হাতে বোনা এই শাড়ির বিশেষত্ব আঁচলে। সুতির শাড়ি হলেও সঙ্ঘশ্রীর সাজ একেবারে অন্য রকম। রুপোর জমকালো হাত-পদ্ম, ভারী ঝাপটা দুল আর চুলের ক্লিপে যেন হাজার বাতির রোশনাই।

০৮ ১০

জীবনের মতো সাজের ক্ষেত্রেও কোনও ছক মানতে নারাজ আভেরী। ছোটবেলা থেকেই শুনেছেন, তিনি স্থূলকায়া। তাই অনেক পোশাক নাকি তাঁকে মানায় না। আভেরী বলেন, “সকলের মন জুগিয়ে তো চলতে পারব না! পোশাকের সঙ্গে আরামের একটা বিষয় জড়িয়ে থাকে। তাই নিজের কথা ভেবে পোশাক নির্বাচন করি।” তবে, স্নিগ্ধতা তাঁর মূল মন্ত্র। স্মার্ট থ্রি-পিস ছেড়ে এ বার তাঁর পরনে সাদা সুতির শাড়ি। সরু লাল পাড়ের সঙ্গে কালো ব্লক প্রিন্ট। ছিমছাম সাজে আভেরী বেছে নিয়েছেন রুপোর হালকা দুল এবং ব্রেসলেট।

০৯ ১০

নীলের পর অরিজিতার পরনে লাল। একরঙা সুতির শাড়ির আঁচলে এক বিরাট কাঠঠোকরা। ব্লক প্রিন্টের ক্ষেত্রে এই ছবি একেবারে নতুন বলাই যায়। তবে শুধু আঁচলে নয়, ছোট ছোট এক ঝাঁক হলুদ পাখি রয়েছে জমিতেও। এ শাড়ি যাঁরা বানিয়েছেন, তাঁরা কেউই পেশাদার শিল্পী নন। অঞ্জলি মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি সংগঠন। তাঁরাই তৈরি করেছন কাঠের ব্লক। বানিয়েছেন শাড়ি।

১০ ১০

আসছে পুজো। নারীশক্তির বন্দনায় মুখর হবে বাঙালি। তার আগে সেরে রাখা যাবতীয় প্রস্তুতি। সুরক্ষার দাবি নয়, অঙ্গিকার নিরাপদ, স্বাধীন জীবনের।

পোশাক: সোহাগ, শাড়ি: অঞ্জলি, গহনা: তাহির, শৈলী, জলসাঘর, রূপসজ্জা: সৌরভ দাস, কেশবিন্যাস শুভম: প্রামাণিক পরিকল্পনা: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রয়োগ: পারমিতা মুখোপাধ্যায়, চিত্রগ্রাহক: দেবর্ষি সরকার, লোকেশন: বুনাফাইল ক্যাফে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement