অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যু তদন্তে নতুন তথ্য সামনে আনল বিহার পুলিশ। আজ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অভিনেতা মোবাইল ফোনে যে সব সিমকার্ড ব্যবহার করতেন, সেগুলি তাঁর নামে নথিভুক্ত ছিল না। তদন্তে ফের মুম্বই পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে বিহার পুলিশ। সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে আজ সরব হয়েছেন তাঁর জামাইবাবু বিশাল কীর্তি। নিজের ব্লগে তিনি কাঠগড়ায় তুলেছেন মনোবিদ সুসান ওয়ালকার এবং সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে।
বিহার পুলিশের তরফে আজ জানানো হয়েছে, সুশান্ত যে সিমকার্ডগুলি ব্যবহার করতেন, তার একটিও নিজের নামে নথিভু্ক্ত ছিল না। ওই গুলির মধ্যে একটি নথিভুক্ত ছিল অভিনেতার বন্ধু সিদ্ধার্থ পাঠানির নামে। আজ বিহার পুলিশ বলেছে, ‘‘আমরা সুশান্তের কল ডিটেল রেকর্ডস খতিয়ে দেখছি।’’
সুশান্তের মৃত্যু-তদন্ত ঘিরে বিহার এবং মহারাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব অব্যাহত। বিহার পুলিশের ডিজি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, মুম্বই পুলিশ বিহার পুলিশের তদন্তকারী দলের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করছে না। তিনি বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ-সহ কোনও তথ্যই আমাদের দেয়নি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী আবেদন করেছেন, তদন্তের কাজে যেন বিহার পুলিশকে সহযোগিতা করা হয়।’’ বিহারের মন্ত্রী সঞ্জয় কুমার ঝা গত কালই জানিয়েছিলেন, সুশান্তের পরিবার যদি সিবিআই তদন্ত চায়, তা হলে সে নিয়ে অবশ্য তদ্বির করবেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গুপ্তেশ্বর বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্তের ক্ষমতা ও যোগ্যতা আমাদের রয়েছে। মুম্বই পুলিশ যদি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তা হলে আমরা তদন্ত শেষ করতে পারব।’’
গত ৮ জুন মালাডের একটি বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ান। বিহার পুলিশের পটনা জ়োনের আইজি সঞ্জয় সিংহ আজ বলেন, ‘‘দিশার মৃত্যু নিয়েও ওই দলটি তদন্ত করবে। তাঁর পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলবে পুলিশ।’’ সূত্রের খবর, দিশার পরিজনদের সঙ্গে বিহার পুলিশ যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যোগাযোগ করতে পারেনি।
ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে যেন স্বচ্ছতা থাকে, যেন প্রমাণ নষ্ট না-হয়, সেই আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গত কাল টুইট করেছিলেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা সিংহ কীর্তি। আজ মনোবিদ সুসানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শ্বেতার স্বামী বিশাল। ওই মনোবিদ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সুশান্ত অবসাদ ও বাইপোলার ডিসওর্ডারে ভুগছিলেন। সুসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, রোগ সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলে তিনি এক জন রোগীর গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছেন। বিশাল ব্লগে লিখেছেন, ‘‘কেউ মানসিক রোগে ভুগছেন কিনা, তা নির্নয় করা কঠিন কাজ। বিশেষ করে রোগী বাইপোলারের স্টেজ-১ বা স্টেজ-২-এ রয়েছে কিনা, তা বলা আরও কঠিন। এর জন্য রোগীকে কাছ থেকে দেখতে হবে শুধু তাই নয়, দীর্ঘ সময় (এমনকি, ৬ বছরও লাগতে পারে) ধরে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। তিনি (সুসান) সুশান্তকে দু’মাসের কম সময় দেখে কী করে বলে দিলেন? সুসান কোন অধিকারে সুশান্তের রোগ সম্পর্কে প্রকাশ্যে বললেন?’’
সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বিশাল। ব্লগে তিনি জানিয়েছেন, সুশান্তকে নিয়ে রিয়া সাইকো-থেরাপিস্টের কাছে যেতেন এবং কথোপকথনের সময় রিয়া উপস্থিত থাকতেন। বিশাল লিখেছেন, ‘‘চিকি়ৎসকের সঙ্গে সুশান্তের কোনও গোপনীয়তা ছিল না। সুশান্তের মানসিক অবস্থার উপর নজর রেখে পরবর্তী সময় ব্ল্যাকমেল করার জন্য অথবা তাঁর সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্য ছিল রিয়ার।’’ বিশালের আরও অভিযোগ, সুশান্তকে মানসিক চাপে রেখেছিলেন রিয়াই। সে কথা অভিনেতা চিকিৎসককে জানাতে পারেননি। কারণ, তাঁদের কথোপকথনের সময় রিয়া সবসময় সামনে থাকতেন।
আরও পড়ুন: রিপোর্ট নেগেটিভ কোয়েলের