ছবি সংগৃহীত
ভাইয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে যেন স্বচ্ছতা থাকে, যেন কোনও প্রমাণ নষ্ট না-হয়, এই আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে টুইট করলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের দিদি শ্বেতা সিংহ কীর্তি।
১৪ জুন বান্দ্রায় অভিনেতার ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্তে নামে মুম্বই পুলিশ। সুশান্তের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-বন্ধুরা অভিযোগ করেছিলেন, বলিউডের চাঁইদের স্বজনপোষণের ফলে ঠিকমতো কাজ পাচ্ছিলেন না সুশান্ত। যা থেকে তাঁর অবসাদ ক্রমে বেড়েছিল। এবং যার পরিণতি— আত্মহত্যা।
দেড় মাস ধরে তদন্ত চালাচ্ছে মুম্বই পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কর্ণ জোহর, মহেশ ভট্ট, সঞ্জয় লীলা ভন্সালী-সহ অন্তত ৪০ জনকে। কিন্তু এই মামলায় নতুন মোড় আসে ঠিক এক সপ্তাহ আগে। গত শনিবার ২৫ জুলাই পটনার একটি থানায় সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী এবং আরও ছ’জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় মদত দেওয়ার অভিযোগ এনে এফআইআর করেন সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ। সেই অভিযোগের পরে মুম্বই এসে তদন্ত শুরু করে বিহার পুলিশের একটি টিম। এবং শুরু হয়ে যায় এই মৃত্যু ঘিরে বিহার বনাম মহারাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব।
শনিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে বিহার পুলিশের ডিজি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে জানান, সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখণ্ডে-সহ ছ’জনের বয়ান রেকর্ড করেছেন তাঁরা। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই রিয়া চক্রবর্তীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কালই অবশ্য একটি বেসরকারি চ্যানেলকে পাঠানো ভিডিয়ো বার্তায় রিয়া বলেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। তদন্তের প্রথম দিন থেকে মুম্বই পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সন্ধান মিলছে না রিয়ার, খুঁজে বার করার চেষ্টা চলছে, বলল বিহার পুলিশ
এর মধ্যেই আজ আবার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিহার পুলিশের কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে ভ্যানে উঠিয়ে দিচ্ছেন মুম্বই পুলিশের কয়েক জন কর্মী। বিহার পুলিশ তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। মুম্বই পুলিশের অবশ্য দাবি, ভিড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই বিহারের পুলিশকর্মীদের গাড়িতে তুলে দিচ্ছিল তারা। ডিজি গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে জানিয়েছেন, তাঁরা কোনও হেনস্থার মুখে পড়েননি।
প্রথম থেকেই সুশান্তের পরিবার ও তাঁদের দাবি অনুযায়ী আলাদা তদন্তের দাবিকে সমর্থন করে এসেছে নীতীশ কুমার সরকার। আজ বিহারের এক মন্ত্রী, নীতীশ-ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় কুমার ঝা জানিয়েছেন, সুশান্তের পরিবার যদি সিবিআই তদন্ত চায়, তা হলে সে নিয়ে অবশ্যই তদ্বির করবেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘মুম্বই পুলিশ যেটা করছে, তা তো তদন্ত নয়, বলিউডের তারকাদের সঙ্গে নিজস্বী তোলার অছিলা মাত্র।’’ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের পাল্টা দাবি, ‘‘মুম্বই পুলিশের তদন্তের উপরে আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে।’’
এই টানাপড়েনের মধ্যেই আজ টুইটারে একটি পোস্ট দেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে ট্যাগ করে তিনি লিখেছেন, ‘‘''আমি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের দিদি। আমি অনুরোধ করব, এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হোক। দেশের আইনি প্রক্রিয়ার উপর আমার ভরসা আছে। তাই আমার ভাইয়ের মৃত্যুর সঠিক বিচার আশা করি।’’ এখানেই থামেননি শ্বেতা। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি লিখেছেন, ‘‘কেন জানি না, আমার মনে হচ্ছে, আপনি সত্যের সঙ্গে ও পক্ষে থাকবেন। আমরা খুবই সাধারণ পরিবারের মানুষ। আমার ভাই সুশান্ত যখন বলিউডে কেরিয়ার শুরু করে, তখন ওর কোনও গডফাদার ছিল না। আর আমাদের এখনও নেই। আপনি দয়া করে নজর রাখুন, এই ঘটনার তদন্তে যেন স্বচ্ছতা বজায় থাকে। কোনও প্রমাণ যেন নষ্ট করা না-হয়।’’
আরও পড়ুন: সংক্রমণ বাড়ছে, চিন্তাও বাড়ছে টেলিপাড়ায়