অন্দরসজ্জায় ধরা পড়ে বাসিন্দার অন্তরমহল। বলে থাকেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনাররা। তাঁদের হাতেই থাকে সেলেবদের ঘর সাজানোর পর্ব। তাঁরা সাজালেও শেষ কথা বলেন গৃহকর্তাই। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ফ্ল্যাটও যেন তাঁর-ই মনের আয়না।
সেলেবদের সাজানো বাড়ি নিয়ে মাঝে মাঝেই ভিডিয়ো তৈরি করে এশিয়ান পেন্টস। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বান্দ্রার বাড়ি নিয়ে তৈরি এই রং প্রস্তুতকারী সংস্থার ভিডিয়ো।
রাতের আকাশ দেখতে ভালবাসতেন সুশান্ত। বান্দ্রার জগার্স পার্কের কাছে বেছে নিয়েছিলেন সমুদ্রমুখী বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাংলো, ‘মঁ ব্লঁ’।
আল্পস পর্বতের উচ্চতম শৃঙ্গের নামে নামকরণ হওয়া বাংলোটিকে সাজিয়েছিলেন মনের মতো করে। শোনা যাচ্ছে, প্রতি মাসে তাঁর বাড়িভাড়া ছিল সাড়ে চার লাখ টাকা।
আর পাঁচজন বলিউডি তারকার থেকে সুশান্তের অন্দরমহল অনেকটাই আলাদা। তারকার দ্যুতি থেকে তাঁর বাড়িতে আধিপত্য ছিল মেধার।
বাড়িতে থাকলে সুশান্তের বেশিরভাগ সময় কাটত লিভিং রুমে। তিনি বলতেন এটা তাঁর সময়সফরের ঠিকানা। খোলা জানালার পাশে রাখা থাকত অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ।
এমনও হয়েছে, রাতভর তাতেই চোখ রেখে বসে থাকতেন সুশান্ত। দেখতেন শনির বলয়, বৃহস্পতির চাঁদ অথবা কালপুরুষের পায়ের কাছে থাকা শিকারি লুব্ধককে।
অল্প কিন্তু রুচিসম্মত জিনিস দিয়ে ঘর সাজাতে পছন্দ করতেন তিনি। প্রচুর আসবাবে ঠাসা ঘরের বদলে ভালবাসতেন ছিমছাম ও প্রশস্ত সৌন্দর্য।
টেলিস্কোপ ছাড়া তাঁর বৈঠকখানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল বই আর পেন্টিং।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করতে ভালবাসতেন সুশান্ত। লিভিং রুমের দেওয়াল জুড়ে বুকশেল্ফ। সযত্নে সাজানো পেপারব্যাক ও হার্ডকভার।
শুধু সাজিয়ে রাখা নয়। ব্যস্ত অভিনেতা গোগ্রাসে পড়তেনও বই। মনের মতো বই আর কফির কাপ হাতে কেটে যেত সুশান্তের সময়।
বাছাই করা পেন্টিং দিয়ে সাজিয়েছিলেন নিজের বাংলো। কোনও ছবি মহাকাশ অভিযানের। কোথাও ভিন্টেজ বাহন। কোথাও আবার ফ্রেমবন্দি পুরনো সিনেমার পোস্টার।
ছকভাঙা ভাস্কর্য থেকে মধ্যযুগীয় নাইটদের শিরস্ত্রাণ। সবই ছিল সুশান্তের ঘর সাজানোর উপকরণ।
উজ্জ্বলতার বদলে তাঁর অন্দরসজ্জায় প্রাধান্য পেয়েছে মাটি ঘেঁষা রং। প্রিয় রঙ ছিল হলুদ। সেই রঙই ছিল টেবিলে। তবে সেখানেও ম্যাট ফিনিশিংয়ের লুক।
শৌখিন সুশান্ত অসম্ভব ভালবাসতেন বিলাসবহুল গাড়ি। তাঁর কাছে ছিল মূল্যবান বিএমডব্লু কে ১৩০০ আর মোটরসাইকেল। পছন্দের বাহন ছিল বিলাসবহুল স্পোর্টসকার মাসেরাতি কোয়াত্রোপোর্তে এবং ল্যান্ডরোভার রেঞ্জ রোভার এসইউভি। গাড়ির মিনিয়েচার থাকত ঘরসজ্জাতেও।
যখন বইয়ের পাতায় বা রাতের আকাশের ছায়াপথেও চোখ রাখতে ইচ্ছে করত না, তখন গিটার হাতে বসতেন সোফায়।
সমুদ্র বেয়ে আসা সকালের রোদ আর পূর্ণিমার জ্যোৎস্না ছিল সুশান্তের নিভৃতকোণের সঙ্গী।
ঘরের আলোর ব্যবহারও করেছিলেন ভেবেচিন্তে। উজ্জ্বল আলোর বদলে তাঁর পছন্দ ছিল আলো আঁধারির কারুকাজ।
কিছুটা ম্লান রঙের শৈল্পিক জিনিস দিয়েই সাজিয়ে রাখতেন ঘরের প্রতিটি কোণ।
ছ’ হাজার বর্গফুটের এই বিশাল বাংলোয় পরিচারকদের সঙ্গে একাই থাকতেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। খেলার সঙ্গী ছিল আদরের পোষ্য।
তবু কোথা থেকে যেন এই সুসজ্জিত ঘরেই ঢুকে পড়েছিল মনখারাপের মেঘ। একটু একটু করে অবসাদে তলিয়ে গিয়েছিলেন সুশান্ত। পর্দার সত্যান্বেষী খুঁজে পাননি নিজের মনের বিষণ্ণতার ওষুধ।
কেরিয়ারে মনের মতো উত্থান অধরা থেকে যাওয়া? নাকি, মনের মানুষের সঙ্গে দূরত্ব? কোন অভিমানে মাত্র ৩৪-এই চলে গেলেন তিনি? সঠিক উত্তর হয়তো কোনওদিনই জানা যাবে না।
শূন্য ঘরে বই, কফিমাগ, গিটার, জানালার পাশে টেলিস্কোপ, পড়ে রইল সব। দোসরদের ফেলে সুশান্ত পাড়ি দিলেন দিকশূন্যপুরে।