সমালোচনা-প্রশংসা, বিপরীত মেরুর প্রতিক্রিয়ায় জর্জরিত সৃজিতের ‘রে’
এক দিকে প্রশংসা, আর এক দিকে তিরস্কার। দুই বিপরীত মেরুর প্রতিক্রিয়ার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বাংলার প্রথম সারির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘রে’। চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির সংকলন। তার মধ্যে দুটো বানিয়েছেন সৃজিত। সত্যজিতের ছোটগল্প 'বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম’ অবলম্বনে ‘ফরগেট মি নট’, এবং ‘বহুরূপী’ অবলম্বনে ‘বহুরূপিয়া’। সেই ছবি দু’টিই এখন নেটমাধ্যমে মূল আলোচ্য বিষয়। কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসছে?
সত্যজিৎ রায়ের গল্প কেন সৃজিতের হাতে তুলে দেওয়া হল, এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বাংলা ছবির দর্শকদের মধ্যে। তার প্রমাণ নেটমাধ্যমে। কেউ দীর্ঘ লেখা লিখে তাঁর দুটো ছবিরই সমালোচনা করছেন। কখনও আবার মিম ভিডিয়ো ও ছবিতে ভরে যাচ্ছে ফেসবুক, টুইটার। আবারও প্রমাণিত, বাঙালির কাছে সত্যজিৎ রায় আসলে আবেগের প্রতিরূপ।
নেটমাধ্যমে তৈরি হওয়া অধিকাংশ মিমে হাজির করা হয়েছে স্বয়ং সত্যজিৎ রায়কে। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন, সৃজিতের বানানো দু’টি ছবি দেখে কী বলতেন? মিম স্রষ্টারা নিজেদের মতো করে তাঁদের উত্তর বানিয়ে নিয়েছেন। কোথাও হাজির করা হয়েছে সত্যজিতের পুত্র পরিচালক সন্দীপ রায়কেও। বাবার কাছ থেকে ধমক খাচ্ছেন ছেলে। ‘আমি বুঝতে পারছি না, ওরা তোর থেকেও খারাপ বানালো কী করে!’ সত্যজিতের মুখে এই বাক্য বসানো হয়েছে দেখে হাসি রোল নেটদুনিয়ায়। সেই নির্দিষ্ট মিম ভিডিয়োয় এক চরিত্রকে সন্দীপ রায় বানিয়ে তার মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, ‘নাও, আমাকে করো আরও গালাগাল’। তাতে সত্যজিতের প্রশ্ন, ‘আমি বলেছিলাম গল্পগুলো দিতে?’ সন্দীপের অভিমান, ‘আমার দিকে তাকিয়ে আর লাভ নেই। সৃজিতকে ধরো।'
সৃজিতের ছবি নিয়ে মিম
কোথাও আবার দেখা যাচ্ছে, ‘ফেলুদা’ সিরিজের বিখ্যাত খলনায়ক ‘মগনলাল’ রূপী উৎপল দত্তও সন্দীপ রায়কে আধা বাংলা, আধা ইংরেজি এবং আধা হিন্দি মিশিয়ে একই প্রশ্ন করছেন। তিনিও যেন সৃজিতের ছবি দেখে অসন্তুষ্ট। তাঁর প্রশ্ন, ‘সন্দীপবাবু, আপনি তো আপনার ফাদারের কাহানীর রাইটস কাউকে দিতেন না।’ সন্দীপের উত্তর, ‘সে রকমই তো জানতাম।’ ফের মগনলাল জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ছিলো যোদি, তো আপনি মাইন্ড চেঞ্জ করলেন কেন?’
কিন্তু একইসঙ্গে প্রশংসাতেও ভরে উঠেছে নেটমাধ্যম। সৃজিত ফের নিজের ঘরানা ভাঙলেন দেখে আপ্লুত বিরাট অংশের দর্শক। সৃজিতের দু’টি ছবির প্রতিক্রিয়া মাথায় রাখলে দেখা যাবে, সম্পূর্ণ দুই বিপরীত মেরু লক্ষ করা যাচ্ছে। একইসঙ্গে সমালোচনার ঝড় বইছে, অন্য দিকে প্রশংসার মিঠে বাতাসও।
সত্যজিৎ রায় অবলম্বনে একেবারে অন্য ধরনের ছবি দেখে খুশি বিরাট অংশের দর্শক। কেউ কেউ বলেছেন, ‘আপনি অস্কার পাননি ঠিকই, কিন্তু জনতার কাছ থেকে পেয়ে গিয়েছেন।’ জনৈক নেটাগরিক বাংলার পরিচালককে হলিউডের পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। অনেকে জানিয়েছেন, ‘রে’-র অন্য দু’টি ছবির তুলনায় সৃজিতের ছবি দু’টিই তাঁদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পছন্দের তালিকায় সেই দু’টিই বেশি স্থান পেয়েছে।