গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বয়স তখন আঠারোর কোঠায়। প্রথম ভোট দিতে গিয়েছিলাম বেহালায়। মনে হয়েছিল, আমি স্বাবলম্বী হয়ে গিয়েছি। দশমিক শূন্য শতাংশ হলেও আমার ভোটের গুরুত্ব রয়েছে। উত্তেজনা ছিলই, পাশাপাশি এই ভাবনাটাও মাথায় এসেছিল যে, দেশের আমাকে প্রয়োজন। ভোট দেওয়ার সময় মোটামুটি দশ বার দেখেছিলাম, ঠিক বোতামে চাপ দিচ্ছি তো! যে দলকে ভোট দিতে চাইছি, সেই দলের বোতাম তো এটা? অন্য দিকে, ভোট না চলে যায়! অবশ্য গোড়ার দিকে কাকে ভোট দেব না দেব, সেই প্রসঙ্গে খুব একটা মাথা ঘামাতাম না। বাড়ি থেকে যে দলকে ভোট দিতে বলত, সেই দলকেই ভোট দিতাম। বাবা বলে দিতেন, “দেখে নিবি বাবা। ওখানেই ভোট দিস। লোগোর ছবি দেখে নিবি। ভুল না হয়ে যায় যেন!” ফলে অস্বীকার করার জায়গা নেই, বাড়ির একটা প্রভাব ছিলই।
ক্রমে পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব বোধ ও চিন্তাশক্তির উপর নির্ভর করে নিজেই সিদ্ধান্ত নিই। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমি কাকে ভোট দিচ্ছি, তার নেপথ্যে পরিবারের হাত থাকে না। ঠিক সে রকমই পরিবারের অন্য সদস্যেরা যখন ভোট দেন, আমিও হস্তক্ষেপ করি না। আমি বরাবর একটি দলেই বিশ্বাসী। হঠাৎ করে নতুন কোথাও ঢুকে পড়ি না। এক বার এখানে ঝাঁপ দেব, এক বার ওখানে ঝাঁপ দেব, এই পন্থায় বিশ্বাসী নই আমি। আমি আগে থেকেই আমার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল যে, আমি কী করতে চলেছি।
ঈশ্বরের কৃপায় একটু টাকাপয়সা হলে রাস্তার ভিক্ষুকদের সহায়তা করতে চাই। হ্যাঁ, আমরা সকলেই জানি, ভিক্ষাবৃত্তির সার্কিট চলে শহরের বুকে। কিন্তু আমি বলছি, যাঁরা সত্যিই ভিক্ষা করে ক্ষুধানিবৃত্তি করেন, যাঁদের সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই। যতটুকু আমার সাধ্যের মধ্যে থাকবে, ততটুকুই করব। এই তো দু’দিন আগে স্ত্রী দর্শনার সঙ্গে আইসক্রিম খেতে গিয়েছিলাম একটা জায়গায়, পাশে এক জন ভিক্ষুক বসেছিলেন। এই সব দেখে আমি এখন যখনই বাইরে যাই পকেটে কয়েকটা ১০০ টাকার নোট রেখে দিই। জানি, এই ধরনের প্রয়োজন পড়বে। এটা সত্যিই খুব দরকার। আমার সামর্থ্য যখন আরও খানিকটা বেড়ে যাবে তখন আরও বড় পরিসরে এই কাজটা করতে পারব। তার জন্য কোনও রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতার প্রয়োজন নেই আমার। ইচ্ছে থাকলে, সেই ইচ্ছে বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নিলে বাকিটা এমনিই হয়ে যায়। তা ছাড়া আমি মনে করি, দান করলে সম্পদ বাড়ে। আর এটা ঘটেছে আমার সঙ্গে। যখনই কাউকে টাকা দিয়েছি, পরের দিন কাজের টাকা ঢুকে গিয়েছে আমার কাছে। বার বার এই ধরনের ঘটনার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কী জানি, এটা হয়তো ধীরে ধীরে কুসংস্কারের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা এলে ভিক্ষুকদের জন্য আরও বৃহৎ ভাবে কাজ করতে পারব।
মানুষ যাতে খুশি থাকতে পারেন, সেই চেষ্টা করে যাব। আমার আশপাশে অনেক লোক রেখে দেব। তাঁদের বলব, চারিদিকে শুধু খুশি ছড়িয়ে দাও। মানুষের কাছে গিয়ে নাচ, গান যা ইচ্ছে করো, কিন্তু তাদের হাসিখুশি রাখো। আরও একটি বিষয়, আমি সমস্ত বৃদ্ধাশ্রম ফাঁকা করে দিতে চাই। এই মুহূর্তে যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন, তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেব। তাঁদের ছেলেমেয়ে বা বাড়ির লোকজন, যারা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছিল, তাদের কানে চাঁটি মারব। বর্তমানে শুটিংয়ের কাজে এতটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছি না। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে মাত্র এক দিন যেতে পেরেছি। একটু ফাঁকা হলে, সময়-সুযোগ পেলে আবার হাজির হয়ে যাব নির্বাচনী প্রচারে।