Anirban Chakrabarti

ভোটের দিন সতর্ক একেন, ফেলুদার জন্য সন্দেশ নিয়ে হাজির জটায়ু, কল্পনায় চরিত্রাভিনেতা অনির্বাণ

চলতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘ভোটের দিব্যি’। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন আপনাদের পরিচিত মুখেরা। এ বারে ভোট নিয়ে লিখলেন অনির্বাণ চক্রবর্তী।

Advertisement

অনির্বাণ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৮:০১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

লোকসভা নির্বাচন চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই চারিদিকে এখন ভোট নিয়েই আলোচনা। ‘ভোট’ শব্দটা শুনলে আলাদা করে আমার যে বিশেষ একটা উত্তেজনা হয়, তা নয়। ভোটের পর সব কিছু বদলে যাবে, সে রকম কোনও ভাবনাও আমার থাকে না। কিন্তু একটা বিশ্বাস রয়েছে যে, ভোটের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নাগরিক হিসেবে আমাদের অংশ নেওয়া উচিত। তাই আমি ভোট দিই।

Advertisement

আমার শৈশব কেটেছে বজবজে। পরিবারে প্রত্যেকেই চাকরিজীবী। প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তাঁদের নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল। বড়রা রাজনীতি প্রসঙ্গে কথা বলতেন। মন দিয়ে তাঁদের কথা শুনতাম। বোঝার চেষ্টা করতাম বিষয়টা। পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে আমার ধারণা আরও স্পষ্ট হয়। তবে কলেজ জীবনে আমি কখনও ছাত্র রাজনীতি করিনি। আমি পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, আমার পরিবারে কেউ কিন্তু কখনও কারও উপরে কোনও মতাদর্শ চাপিয়ে দিতেন না। পড়াশোনা, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল খুবই ভাল ছিল। কে কোন দলকে ভোট দেবেন, তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল।

আমার ভোটকেন্দ্র যাদবপুর। আমার কেন্দ্রে যাঁরা প্রার্থী, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার পরিচিত। সায়নী (ঘোষ), সৃজন (ভট্টাচার্য) বা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়— সম্প্রতি একটা অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে দেখা হল। কথা হয়েছে, কিছু প্রশ্নও রেখেছিলাম। আসলে বলতে চাইছি, রাজনীতি নিয়ে আমি সচেতন। চারপাশে কী হচ্ছে, তার খোঁজখবর রাখি। নির্বাচনে যাঁরা জিতবেন, তাঁদের কাছেও আমার একটা বিশেষ অনুরোধ রয়েছে। যিনি যত ভোটে জিতবেন, তিনি যদি ততগুলো বৃক্ষরোপণ করেন তা হলে আমি খুব খুশি হব।

Advertisement

যে ভাবে গরম বাড়ছে, তার মধ্যে সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়া বেশ কষ্টকর। পাশাপাশি, টিভিতে বা সংবাদপত্রে দেখছি, কী ভীষণ কষ্ট করে সকলে নির্বাচনের প্রচার সারছেন! ভোটের প্রচার করে তাঁরাও তো চাইছেন আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে হয়তো মানুষ সেই ভাবে রাস্তায় প্রার্থীদের দেখতে আসতেও পারেন না। এখানে আমার নিজের একটা মতামত বা সুপ্ত বাসনা রয়েছে। বেশির ভাগ সময়ে এই গরমের সময়েই নির্বাচন কেন হয়, এটা আমি বুঝি না। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কি শীতকালে করা সম্ভব? আমরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বসবাস করি। আর দেশের কল্যাণে যখন ভোট, তখন নাগরিকদের সুবিধার কথা ভেবে শীতকালে নির্বাচনের আয়োজন হলে খুব ভাল হয়।

এই লেখা লিখতে গিয়েই মনে হল, কিছু জিনিস স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত। আগেই বলেছি, কলেজে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। অদূর ভবিষ্যতেও আমার কোনও দিন রাজনীতির ময়দানে পা রাখার ইচ্ছে নেই। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, মানুষ কী কী করতে পারে, সেটা সে নিজে সব থেকে ভাল জানে। আর আমি জানি, রাজনীতি নিয়ে আমার কোনও গভীর জ্ঞান নেই। কাউকে নকল করেও কিছু করতে চাই না। কারণ, রাজনীতি একটা বড় দায়িত্ব। সবাই যেমন অভিনেতা বা গায়ক হতে পারবে না, তেমনই সকলেই আবার রাজনীতিক হতে পারবে না। তা ছাড়া রাজনীতিতে থাকলে একজন রাজনীতিকের যা যা করা উচিত, সেটা হয়তো আমি করতে পারব না। সেটা আমার জীবন দর্শন বা বিশ্বাসের সঙ্গে মিলবে না। আমি অভিনেতা হিসেবেই বেশ ভাল আছি।

১ জুন আমার লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। আমি সকাল সকাল ভোট দিতে পৌঁছে যেতে চাই। লিখতে লিখতেই একটা মজার বিষয় মাথায় এল। একেনবাবু চরিত্রটা আমাকে দর্শক মহলে পরিচিতি দিয়েছে। আট থেকে আশি— সব ধরনের অনুরাগীর থেকে নিয়মিত প্রতিক্রিয়া পাই। আবার আমি ফেলুদা ওয়েব সিরিজ়ে জটায়ু চরিত্রেও অভিনয় করে ফেলেছি। তাই ভাবছি, বাঙালির এই দুই প্রিয় চরিত্র ভোটের দিনটা কী ভাবে কাটাবে?

একেনবাবু মজাদার মানুষ। অথচ, রহস্য সমাধানে তার জুড়ি মেলা ভার। মজার ছলেই হয়তো কোনও ক্লু আবিষ্কার করে বসে। ভোট দিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জনের সঙ্গে মজাও করতে পারে। তবে একই সঙ্গে চারপাশে একেনবাবুর সতর্ক নজর থাকবে। কিছু সমস্যা হচ্ছে না তো? সন্দেহভাজন কোনও ব্যক্তিকে দেখা গেল কি? এ রকম কিছু প্রশ্ন তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতেই পারে। বাড়ি ফিরেও টিভি খুলে নির্বাচনের সারা দিনের খবরাখবরে চোখ রাখতে পারে একেন।

অন্য দিকে, জটায়ুও কিন্তু খুবই মজাদার অথচ সাধাসিধে মানুষ। তিনি আবার লেখক। তাই এ রকম একজন মানুষ খুব সাধারণ ভাবেই ভোট দিতে যাবেন। ভোটের দিন লালমোহনবাবু হয়তো ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ়ের উপন্যাস লিখতেও বসে পড়তে পারেন। তবে বিকালে সবুজ অ্যাম্বাস্যাডর গাড়িতে চেপে ফেলুদা ও তোপসের জন্য তিনি সন্দেশ নিয়ে হাজির হবেন। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে ফেলুদার থেকেই হয়তো নির্বাচনের বিশ্লেষণ বুঝে নেবেন জটায়ু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement