তাঁর কণ্ঠে ‘পহেলা নেশা’র জাদুতে বুঁদ কয়েক প্রজন্ম। আট ও নয়ের দশকে বলিউডের প্লেব্যাক গানের অন্যতম শাসক তিনি। লোকশিল্পী গায়িকা মায়ের কাছ থেকেই শৈশবে গান শেখার উৎসাহ। তিনি উদিত নারায়ণ।
উদিতের জন্ম ১৯৫৫ সালের ১ ডিসেম্বর। তাঁর বাবা হরেকৃষ্ণ ঝা ছিলেন কৃষক। মা, ভুবনেশ্বরী লোকগান গাইতেন। কিন্তু উদিতের জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে।
উদিতের বাবা নেপালের নাগরিক। মা বিহারের মেয়ে। উদিতের দাবি, তাঁর জন্ম বিহারের সুপাউল জেলায় বৈশী গ্রামে, মামাবাড়িতে। ২০০৯ সালেতাঁকে যখন পদ্মশ্রী পুরস্কার দেওয়া হয়, তখন তাঁর জন্মস্থান ও নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। অনেকের মতে তাঁর জন্মস্থান নেপাল।
উদিতের পড়াশোনা বিহারের স্কুলে। তারপর নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত রত্ন রাজ্য লক্ষ্মী ক্যাম্পাস কলেজ থেকে ইন্টারমিটিয়েড। ১৯৭০ সালে প্রথম গান রেডিয়ো নেপালে। তখন তিনি নেপালি ও মৈথিলি ভাষার লোকগান গাইতেন।
তারপর লোকগান থেকে নেপালি আধুনিক গান। আট বছর নেপালি ভাষায় গানের পরে স্কলারশিপ। ভারতীয় দূতাবাসের দেওয়া সেই স্কলারপশিপ নিয়ে তিনি তখনকার বম্বে শহরে আসেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের পাঠ নিতে।
১৯৮০ সালে তাঁকে সুযোগ দেন সঙ্গীত পরিচালক রাজেশ রোশন। তাঁর ‘উনিশ বিশ’ ছবিতে গান গাওয়ার জন্য। এরপর কেরিয়ারের শুরুতেই ডুয়েট লতা মঙ্গেশকর, মহম্মদ রফি, কিশোরকুমারের মতো শিল্পীদের সঙ্গে।
১৯৮৮ সালে আনন্দ মিলিন্দ তাঁকে সুযোগ দেন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবিতে। সেখানেই শুরু ইতিহাস। তারপর ‘যো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে অলকা যাজ্ঞিকের সঙ্গে ‘পহেলা নেশা’ সুপারহিট।
হিন্দি ছাড়াও তিনি গান করেছেন ভোজপুরি, তেলুগু, তামিল, কন্নড়, ওড়িয়া এবং বাংলা ভাষায়। ২০১৬ সালে তিনি সম্মানিত হন ‘পদ্মভূষণে’। কেরিয়ারে মোট চারবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। তার মধ্যে তিনবার গায়ক হিসেবে। একবার প্রযোজকের ভূমিকায়।
কেরিয়ার সে ভাবে মজবুত হওয়ার আগেই দীপা ঝা-কে বিয়ে, ১৯৮৫ সালে। দীপাও নেপাল থেকে বলিউডে এসেছিলেন ভাগ্যান্বেষণে। ১৯৮৬ সালে জন্ম পুত্র আদিত্যর। বাবার মতো আদিত্যও সঙ্গীতশিল্পী।
সংসার ও কেরিয়ার, দু’দিকের পালেই যখন উন্নতির অনুকূল বাতাস, ঝড় এল ব্যক্তিগত জীবনে। ২০০৬ সালে নেপালের মহিলা রঞ্জনা ঝা দাবি করলেন উদিত নারায়ণ তাঁর স্বামী!
প্রথমে অস্বীকার করেন উদিত। এরপর রঞ্জনা প্রকাশ্যে আনেন বেশ কিছু ছবি ও নথি। তারপরে উদিতের আর অস্বীকার করার উপায় ছিল না। জানা যায়, তিনি রঞ্জনাকে বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৪ সালে।
কিন্তু তারপর বলিউডে এসে সম্পূর্ণ ভুলে যান প্রথম স্ত্রীকে। তাঁকে ডিভোর্স না করেই বিয়ে দীপাকে। অভিযোগ, মুখ খুললেই তিনি আত্মহত্যার করবেন, এরকম হুমকি রঞ্জনাকে দিতেন উদিত।
২০০৬ সালে রঞ্জনা সব গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়ায় ব্যাহত হয় উদিতের কেরিয়ারও। তবে রঞ্জনা দাবি করেন, তাঁর অর্থ চাই না। প্রয়োজন, স্ত্রী হিসেবে সম্মান ও স্বীকৃতি।
পরে রঞ্জনার সঙ্গে সব মিটমাট করে নেন উদিত। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী দীপাও জানান, তিনি সব জেনেই বিয়ে করেছেন। উদিতের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেন তাঁর প্রথম স্ত্রী রঞ্জনাও।
শোনা যায়, এখন দুই স্ত্রীর মধ্যেই সম্পর্ক বেশ ভাল। রঞ্জনা-দীপা, একসঙ্গে শপিংয়ে তো যান-ই। এমনকি, ছোটখাটো ছুটির অবসরেও উদিতকে দেখা যায় তাঁর দুই স্ত্রীর সঙ্গেই। (ছবি : সোশ্যাল মিডিয়া)