১৫ জুন থেকে আবার আপনার টিভির পর্দায় আসছে 'রাণী রাসমণি'।
অবশেষে টলিপাড়ায় জট কাটল। কাল, বৃহস্পতিবার থেকে টালিগঞ্জে শুরু হচ্ছে ধারাবাহিকের শুটিং। বুধবার মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের অফিসে আর্টিস্ট ফোরাম, প্রডিউসারস গিল্ড, ইম্পা-সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই কাল থেকে শুটিং শুরুর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, “টালিগঞ্জের সবাই আমরা পরিবারের মতো। এখানে ৮৩ দিন কাজ হয়নি। কাল থেকে কাজ শুরু হবে। আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন, প্রোডিউসার গিল্ড, চ্যানেল ব্রডকাস্টার— সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আমরা বৃহস্পতিবার থেকে শুটিং শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারও কথাও কাজ করতে গিয়ে কোনও অসুবিধে হলে আমরা সকলে সকলের হাত ধরব। চিন্তার কোনও কারণ নেই,’’
মন্ত্রীর আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গেই আর্টিস্ট ফোরামের সম্পাদক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,“বড় পরিবার হলে একটু মতপার্থক্য হয়। আর এই কোভিডের সময়টাই সম্পূর্ণ আলাদা। এই সময় নতুন কোনও কাজ শুরু করলে এত বড় পরিবারের মধ্যে তো মতপার্থক্য আসবেই। সেগুলো সব মিটে গিয়েছে। কাল থেকে কাজ আরম্ভ হচ্ছে। আর মন্ত্রী যেমন বললেন আমরা সকলে সকলের জন্য আছি।” পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন প্রোডিউসার গিল্ডের সভাপতি শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়: “কাজ করতে গেলে যেমন আমাদের টেকনিশিয়ানদের দরকার, তেমনই আর্টিস্টদের দরকার, আবার চ্যানেলকেও দরকার। আমরা একে অন্যের সঙ্গে বাঁধা। কিছু ইস্যু ছিল সেগুলো আজ সব মিটে গিয়েছে।কাল থেকে আমরা ফ্লোরে যাচ্ছি।”
এরই পাশাপাশি আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীও বলেন,“বিমা নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেটা মিটে গিয়েছে।মন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি সই হয়েছে। আমরা সকলে আছি। মনে হয় না কাজের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হবে।”
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই, টালিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত স্বরূপ বিশ্বাস আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, “সমস্ত সমস্যা শেষ। আগামিকাল থেকে আবার টালিগঞ্জ ব্যস্ত। আমার তরফ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ সমস্ত সংগঠনকে। সবাই মিলে বসে আলোচনা করে যা যা সমস্যা হয়েছিল তা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ রাতের মধ্যে আর্টিস্টরা কলটাইম পেয়ে যাবেন। ইন্সিওর্যান্স থেকে সুরক্ষা নির্দেশিকা, মানবেন সবাই। কেউ কোনও বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন এমন নয়। সবাই মিলে কাজ হবে। আগামী দিনে এভাবেই সবাই একে অন্যের পাশে থাকবেন ভাল-মন্দ দিনে।”
মতের অমিল, মান-অভিমান এবং অবশেষে মানভঞ্জন... এ সবই কিন্তু এক দিনের ব্যাপার নয়। 'বিশ্বাস ভাইদের' নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে যে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছে তা আনন্দবাজার ডিজিটাল প্রথম জানিয়েছিল। গত রবিবার প্রযোজক-পরিচালকদের মিটিংয়ে টলিপাড়ার এক নামজাদা পরিচালক সিনেমার শুটিং ইউনিটে মোট ৩৫ জন থাকতে পারার সিদ্ধান্তে সরাসরি বিশ্বাস ভাইদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সিনেমার প্রয়োজনে আমি ১০ জনকে নিয়েও শুটিং করতে পারি, আবার একশো জনকে নিয়েও শুটিং করতে পারি। কোনও কোনও দিন তো ১০ জনেও হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমায় কেন ৩৫ জনকে নিয়েই শুটিং করতে হবে?’অরূপ বিশ্বাস যদিও সে সময় সুরক্ষা বিধির কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তাতেও মন গলেনি অনেক পরিচালকের। ‘‘এই যে ৩৫ জন বেঁধে দেওয়া হল তা হলে কি এখন থেকে এ ভাবেই সিনেমার গল্প লেখা হবে?" এ তো গল্প বলার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ! ক্ষোভ উগরে বলেছিলেন ইন্ডাস্ট্রির একাংশ।
এ সবের মধ্যেই মরার উপর খাড়া ফোরামের সঙ্গে প্রযোজক-চ্যানেলের বিমা নিয়ে ঝামেলা। শুটিং শুরুর দু'দিন আগেই আর্টিস্টদের কাছে ফোরামের 'নিজের দায়িত্ব নিজে নিন' বার্তা আগুনে ঘি ঢেলেছিল। ফোরাম-চ্যানেলের এই তর্জায় শিল্পীদের একাংশ আবার পড়েছিলেন মহা ফ্যাসাদে। যে প্রযোজনা সংস্থা এবং চ্যানেলের হয়ে তাঁরা কাজ করেন তাঁদেরকেও সন্তুষ্ট রাখতে হবে ও দিকে ফোরামের বিপরীতে গিয়ে কথা বললে বিরাগভাজন হতে হবে ইন্ডাস্ট্রির একাংশর। ওদিকে আবার শুটিং বন্ধ হবার কথা প্রকাশ পেতেই টেকনিশয়ানদের একাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত রাগ উগরে দিচ্ছিলেন শিল্পীদের দিকেই। রাতারাতি 'ভিলেন' হয়ে যাওয়া শিল্পীকুলের তখন 'না পারছি গিলতে, না পারছি ওগরাতে' অবস্থা। ওদিকে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ডাব করা সিরিয়াল চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, সে কথা মঙ্গলবারই জানিয়েছিল আনন্দবাজার ডিজিটাল। এই ইগোর লড়াইয়ে (পড়ুন সুরক্ষা) শিল্পীকুলের একাংশ যখন দিশেহারা, তখনই নাবিকের মতো আবির্ভূত হলেন সেই বিশ্বাস ব্রাদারসই । জানিয়ে দিলেন, " কারও কোথাও কাজ করতে গিয়ে কোনও অসুবিধে হলে আমরা সকলে সকলের হাত ধরব। চিন্তার কোনও কারণ নেই।"
কাল থেকে আবার মেতে উঠবে টলিপাড়া। ১৫ জুন থেকে নতুন মোড়কে আসতে চলেছে পুরনো ধারাবাহিক।