লাইট-সাউন্ড-ক্যামেরা বা পিস্তল। দুই ধরনের শ্যুটিঙেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। শিরোপাজয়ী হয়েছিলেন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মঞ্চেও। টেলিভিশনে ‘চন্দ্রকান্তা’-র চরিত্রকে পর্দার বাইরেও রূপকথার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া অভিনেত্রী শিখা স্বরূপ এখন বিস্মৃতির আড়ালে।
শিখার জন্ম ১৯৭০ সালের ২৩ অক্টোবর, দিল্লিতে। কলেজজীবন থেকেই শুরু করেন মডেলিং। ১৯৮৮ সালে শিখা বিজয়িনী হন ‘মিস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল’-এর মঞ্চে।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ১৯৮৮ সালেই শিখা খেতাব পান ‘অল ইন্ডিয়া পিস্তল শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’-এও।
দীর্ঘাঙ্গী শিখা ছিলেন বেশ কিছু পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। অংশ নিয়েছেন বহু ফ্যাশন শো-তেও।
মডেলিং, অভিনয়, পিস্তল চালনার সঙ্গে ব্যাডমিন্টনেও তিনি ছিলেন দক্ষ। খেলেছেন জাতীয় স্তরেও।
তবে শেষ অবধি খেলার ময়দান ছেড়ে সরে আসেন অভিনয়েই। নয়ের দশকে তাঁকে নায়িকা হিসেবে পায় বলিউড।
প্রায় ১১টি ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। সেগুলির মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বহু তারকাখচিত। শিখার ফিল্মোগ্রাফির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘তহলকা’, ‘পুলিশওয়ালা গুন্ডা’, ‘পুলিশ পাবলিক’, ‘কায়দা কানুন’, ‘প্যায়ার হুয়া চোরি চোরি’ এবং ‘আওয়াজ দে কঁহা হ্যায়ঁ’।
তবে শিখার নামের সঙ্গে যে চরিত্রটি একাত্ম হয়ে গিয়েছে, সেটি হল ‘চন্দ্রকান্তা’। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ অবধি দূরদর্শনে সম্প্রচারিত এই ধারাবাহিকে তিনিই ছিলেন রাজকুমারি চন্দ্রকান্তার চরিত্রে।
চন্দ্রকান্তারূপী শিখার বিপরীতে কুমার বীরেন্দ্র বিক্রম সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শাহবাজ খান। সুপারহিট এই ধারাবাহিকে বাকি কুশীলবদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জাভেদ খান, মুকেশ খন্না, পঙ্কজ ধীর, ইরফান খান, পরীক্ষিৎ সাহনি, ক্রুতিকা দেশাই, দুর্গা যশরাজ এবং বর্ষা উসগাঁওকর।
‘অমর প্রেম’, ‘অন্দাজ’, ‘অনুপমা’, ‘যুগ’, ‘কহাঁ সে কহাঁ তক’-সহ আরও কিছু ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছিল শিখাকে। কিন্তু কোনওটাতেই তিনি চন্দ্রকান্তার জনপ্রিয়তাকে স্পর্শ করতে পারেননি।
এর পর ধীরে ধীরে অভিনয় জগৎ থেকে হারিয়ে যান শিখা। লম্বা বিরতি কাটিয়ে ফিরে আসেন এক দশকেরও পরে। ২০১১ সালে একটি বেসরকারি চ্যানেলে তিনি অভিনয় করেন ‘কহানি চন্দ্রকান্তা কি’ ধারাবাহিকে।
কিন্তু এই দ্বিতীয় দফার চন্দ্রকান্তায় তিনি প্রথম বারের সাফল্যের ধারকাছেও পৌঁছতে পারেননি।
অভিনয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে আরও একটি আইকনিক চরিত্রে অভিন করেন শিখা। সেটি হল রামায়ণে কৈকেয়ীর চরিত্র।
২০১২ সালে জি টিভিতে সম্প্রচারিত হয়েছিল ‘রামায়ণ: সব কে জীবন কা আধার’। মূলত তুলসীদাসের ‘রামচরিতমানস কাব্য’ অবলম্বনে এই ধারাবাহিকে শিখা ছিলেন কৈকেয়ীর চরিত্রে।
সে সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, নেগেটিভ শেডের কৈকেয়ী চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে তিনি খুশি। কিন্তু দূরদর্শনে রামানন্দ সগরের আটের দশকের ‘রামায়ণ’-ই চিরস্থায়ী হয়ে থেকে গিয়েছে দর্শকের স্মৃতিতে।
বিনোদন দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চে শিখা স্বরূপের দ্বিতীয় ইনিংস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। রাজীব লালের সঙ্গে তাঁর বিয়েও ভেঙে গিয়েছিল দাম্পত্যের কয়েক বছরেই। অতীতের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার ‘চন্দ্রকান্তা’ এখন বিস্মৃতির পর্দার আড়ালে।