নামের পাশে যতই দীর্ঘ হোক অপরাধের ছায়া, মহিলাদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তায় তার আঁচ লাগেনি। কেরিয়ারের প্রথম থেকেই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন রঙিন হয়েছে বিভিন্ন প্রেয়সীর সান্নিধ্যে।
নিজের ‘প্লে বয়’ ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি খুশি। নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সুনীল-পুত্র। এমনকি, তাঁর স্বীকারোক্তি, তিনি একইসঙ্গে তিন জন বান্ধবীর সঙ্গেও ডেটিং করেছেন!
সঞ্জয় দত্ত এবং টিনা মুনিম ছিলেন ছোটবেলার বন্ধু। পরে টিনার বিপরীতেই জীবনের প্রথম ছবি ‘রকি’-তে অভিনয় করেন সঞ্জয়। সে সময় থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে পরিণত হয়।
মা নার্গিসের গভীর প্রভাব ছিল সঞ্জয়ের জীবনে। নার্গিসের মৃত্যুর পরে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটা অনেকটা পূরণ করেছিলেন টিনা। পরে জানান সঞ্জয়। বান্ধবী টিনা যে তাঁর জীবনে চলার পথে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন। কিন্তু কোনওদিন হস্তক্ষেপ করেননি সঞ্জয়ের কেরিয়ারে।
এমনকি, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে জুটি বেঁধে সঞ্জয়ের অভিনয় করাতেও কোনও আপত্তি করতেন না টিনা। অন্যদিকে নায়িকা টিনাকে ঘিরেও একাধিক সম্পর্ক গুঞ্জরিত হয়েছিল। সে সব শুনে সঞ্জয় নাকি মেজাজ হারাতেন। টিনাকে ঘিরে এতটাই তীব্র ছিল তাঁর অধিকারবোধ।
কিন্তু সঞ্জয়-টিনা সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শোনা যায়, সঞ্জয়ের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন মেনে নিতে পারেননি অভিনেত্রী। আবার ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে এও শোনা যায়, সঞ্জয়কে ছেড়ে টিনা মুনিম সে সময় রাজেশ খন্নার ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন।
রিচা শর্মার ছবি সঞ্জয় প্রথম দেখেছিলেন পত্রপত্রিকায়। তখন থেকেই তিনি রিচায় মুগ্ধ। পরে এক ছবির মহরতে দু’জনের আলাপ হয়। রিচার টেলিফোন নম্বর যোগাড় করে সঞ্জয়ই তাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপ করেন।
বেশ কয়েক বার অনুরোধের পরে রিচা রাজি হন সঞ্জয়ের সঙ্গে আলাপ করতে। ধীরে ধীরে সেখান থেকেই প্রেমের সূত্রপাত। ১৯৮৭-তে উটিতে ‘আগ হি আগ’ ছবির শুটিংয়ে রিচাকে প্রোপোজ করেন সঞ্জয়। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হতে সময় চেয়েছিলেন রিচা।
কিন্তু তিনি যত ক্ষণ ‘হ্যাঁ’ বলেননি, তত ক্ষণ সঞ্জয় হাল ছাড়েননি। অবশেষে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন রিচা। ১৯৮৭-তেই বিয়ে করেন সঞ্জয়-রিচা। পরের বছর জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র মেয়ে, ত্রিশলার।
কিন্তু আচমকাই সুর কাটল তাঁদের দাম্পত্যে। জানা গেল রিচা আক্রান্ত ব্রেন টিউমারে। যখন ধরা পড়ে, তখন অসুখ পৌঁছেছে জটিলতার শেষ সীমায়। চিকিৎসক এবং কাছের জনদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রিচা প্রয়াত হন ১৯৯৬-র ডিসেম্বরে। আমেরিকায় তাঁর চিকিৎসা চলছিল। জীবনের শেষ কয়েকটা মাস তিনি কাটিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে, তাঁর বাবা মায়ের বাড়িতেই। মৃত্যুর আগে তাঁর এবং সঞ্জয়ের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল।
রিচা যে সময় অসুস্থ, সেই সময় থেকে সঞ্জয়কে নিয়ে নতুন গুঞ্জন। এ বার তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন মাধুরী দীক্ষিত। ১৯৯১ সালে ‘সাজন’ সিনেমার সময় থেকেই নাকি তাঁরা একে অন্যের প্রতি অনুরক্ত। ১৯৯৩ সালে নিজের কাছে বেআইনি অস্ত্র রাখার অপরাধে টাডা আইনে গ্রেফতার হন সঞ্জয়। তার পরই সম্পর্ক থেকে সরে যান মাধুরী। যদিও সঞ্জয় বা মাধুরী, দু’জনের কেউ এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি।
এরপর সঞ্জয়ের জীবনে আসেন রিয়া পিল্লাই। ১৯৯৮ সালে মডেল রিয়াকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। কিন্তু এই দাম্পত্যও ভেঙে যায় কয়েক বছর পরেই। শোনা যায়, দু’জনের জীবনেই পরকীয়া তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের কারণ। ২০০৫-এ ডিভোর্স হয়ে যায় সঞ্জয়-রিয়ার।
যাঁর জন্য রিয়ার থেকে দূরে সরে যান সঞ্জয়, তিনি নাকি নাদিয়া দুরানি। কোথায় তাঁদের আলাপ হয়েছিল, জানা যায় না। তবে শোনা যায়, ‘কাঁটে’ সিনেমার সময় আমেরিকায় শুটিং স্পটে পৌঁছে গিয়েছিলেন নাদিয়া। এরপরই রিয়া ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন।
নাদিয়ার সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্ক এরপর ভেঙে যায়। যে ভাবে উল্কার মতো এসেছিলেন, সে ভাবেই সঞ্জয়ের জীবন থেকে হারিয়ে যান নাদিয়া। সে সময় নাকি কিছু দিনের জন্য লিজা রে-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল সঞ্জয়ের। কিন্তু তাঁদের সেই সম্পর্ক ছিল খুবই অল্প সময়ের জন্য।
তবে লিজা এই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন বরাবর। সঞ্জয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নাকি ছিল অভিনেত্রী রেখারও। একসঙ্গে শুটিং করতে গিয়েই দু’জনের আলাপ। গুঞ্জন, দু’জনে পালিয়ে গিয়ে বিয়েও করেছেন। কিন্তু এই গুঞ্জনের পক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। রেখার জীবনীকার ইয়াসিন উমরও এই দাবি অস্বীকার করেছেন। সঞ্জয় নিজেও রেখার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।
কিমি কাতকর এবং রতি অগ্নিহোত্রীর সঙ্গে সঞ্জয়ের নাম জড়িয়ে গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। কিন্তু সে সবই খুব অল্প সময়ের জন্য। নায়িকাদের সঙ্গে সঞ্জুর প্রেমের গুঞ্জন বন্ধ হয় তাঁর তৃতীয় বিয়ের পরে।
মান্যতার সহজ সরল স্বভাব ভাল লেগেছিল সঞ্জয়ের। দু’বছরের প্রেমপর্বের পরে ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে মান্যতাকে বিয়ে করেন সঞ্জয়। ২০১০-এ জন্ম হয় তাঁদের যমজ সন্তানের। সঞ্জয়ের অতীতের অসংখ্য সম্পর্কের কোনওটাই ছায়া ফেলেনি তাঁর তৃতীয় দাম্পত্যে। জীবনের কঠিন সময়েও তাঁর পাশে স্তম্ভের মতো আছেন স্ত্রী, মান্যতা।