Exclusive Celebrity Interview

কম বয়সে ভাবতাম, কোনও গডফাদার থাকলে ভালই হত! তবে ছিল না বলেই এখন আমি এত আত্মবিশ্বাসী: ঋতাভরী

গডফাদার ছাড়াই ১৫ বছর দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছেন টলিউডে। সমাজমাধ্যমের গুরুত্ব বুঝেছিলেন অনেক আগেই। শারীরিক জটিলতা কাটিয়ে এখন ঋতাভরী চক্রবর্তীর জীবন ‘ফাটাফাটি’, বললেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Advertisement

পৃথা বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ১৪:১৯
Share:

বাঙালির ভাল গল্পের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কি সব সময় ছবি বাছেন ঋতাভরী ? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: একটা ছবির জন্য ২০ কেজি ওজন বাড়িয়ে ফেলা এক জন নায়িকার পক্ষে সহজ নয়। রাজি হলেন কেন?

Advertisement

ঋতাভরী: আমার দ্বিতীয় সার্জারির পর এমনিতেই ৫-৬ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিল। সেই চেহারা দেখেই অরিত্র (মুখোপাধ্যায়, পরিচালক) আমায় ছবির প্রস্তাব দেয়। সঙ্গে আরও ১৯-২০ কেজি বাড়াতে বলে। হাতে তখন আমার দু’টো ছবি ছিল। তার মধ্যে একটা চরিত্র পুলিশ অফিসারের। তাই সেটা ছাড়তে হয়েছিল। তা-ও এই ছবিটাই করার সিদ্ধান্ত নিই, কারণ কিছু ছবির বিষয়বস্তুই সবার উপরে হয়। ছবির বক্স অফিস, স্যাটেলাইট রাইট্‌সের আয়— সব কিছু ছাপিয়ে যায় গল্প। আর বাঙালি ভাল গল্প চায়। সেই গল্পের জোরেই এখনও মানুষ ‘ওগো বধূ..’-র কথা বলে, ‘ব্রহ্মা..’-র কথা বলে। তাই আমার মনে হয়েছিল, এই ছবিটা আমার ২৫ কেজি ওজন বাড়ানোর চেয়ে অনেক বড়।

প্রশ্ন: মোটা হওয়া নিয়ে নানা কথা আপনাকে ব্যক্তিগত জীবনেও শুনতে হয়েছিল। তাই কি ছবির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পেরেছিলেন?

Advertisement

ঋতাভরী: দু’বার সার্জারির পর যখন আমার ওজন বাড়ে, আমি প্রথম বুঝি সমাজ কতটা নির্মম। ওই কয়েক মাস আমি এত খারাপ কথা শুনেছি যে রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলাম। আসলে রোগা-মোটার কিছু গতে বাঁধা ধারণা আমাদের মনে এমন ভাবে ঢুকে গিয়েছে যে, মানুষ কোনটা ভালর জন্য বলা আর কোনটা অপমান করা— সেটাই গুলিয়ে ফেলে। আমার মা যদি বলেন, ‘‘পলিন, খুব পিৎজ়া-পাস্তা খাওয়া হচ্ছে, এ বার একটু বাড়ির খাবার খাও, নয়তো শরীর খারাপ হবে,’’ সেটা সত্যিই আমার ভালর জন্য বলছেন। কিন্তু কেউ যদি আমায় বলেন, ‘‘দিদি কী ঢেপসি হয়েছ, এ বার তো আর কোনও সিনেমার রোল পাবে না,’’ তা হলে সেটা অপমান। আমি চিরকাল ছিপছিপে। তাই বুঝতেই পারিনি, কত মেয়ে সারা জীবন এ সব অপমান মুখ বুজে সহ্য করে যায়। অথচ তাঁর মোটা হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। পিসিওডি, থাইরয়েড, পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা জিনগত কারণে মোটা হলে সেটা কারও হাতে থাকে না। আর কেউ মোটা মানেই কিন্তু অসুস্থ নয়। সেটাই যদি হত, তা হলে এত জন জিম করতে করতে হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতেন না। আমি নিজে এগুলোর মধ্যে দিয়ে গিয়েছি বলে বুঝেছি, এই ছবিটা কতটা জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইনে খোলামেলা আড্ডায় ঋতাভরী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: সমাজমাধ্যম থেকে আপনার আয় অনেকটাই। ২০ কেজি ওজন আবার কী ভাবে কমাবেন, সে বিষয়ে কখনও আপনার ভয় হয়নি?

ঋতাভরী: অনেকটাই ভয় ছিল। শরীর নিয়ে আমি বরাবরই খুব সচেতন। আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, কোনও দিন মোটা হয়ে গেলে কী হবে। কিন্তু অতটা মোটা হওয়ার পরও যখন আবার ঝরিয়ে প্রায় আগের চেহারার কাছাকাছি চলে এসেছি, এখন মনে হয়, আমি জীবনে সব কিছু জয় করতে পারব।

প্রশ্ন: ‘ব্রহ্মা জানেন...’-এর পর মেয়ে পুরোহিতদের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বেড়েছে। ‘ফাটাফাটি’ দেখে মানুষের রোগা-মোটার ধারণা আদৌ কি বদলাবে বলে মনে হয়?

ঋতাভরী: আমি চেষ্টা করছি, এই ছবি দেখে বডি পজ়িটিভিটি নিয়ে একটা আলোচনা তৈরি হোক। সকলেরই নিজের জীবন নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার রয়েছে। তবে আমি এ-ও জানি যে, কিছু মানুষ সব সময়ই থাকবেন, যাঁরা কটু কথাই বলবেন।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: বাঙালির ভাল গল্পের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই কি সব সময় ছবি বাছেন?

ঋতাভরী: আমি খুব বেছে কাজ করি। তিনটে জিনিস দেখি। গল্প আর স্ক্রিপ্ট। কারণ শুধু বিষয় ভাল হলেই হবে না, স্ক্রিপ্টও ভাল হতে হবে। দুই, আমার চরিত্র। অনেকে এখন ধরে নিচ্ছেন, আমি বোধহয় শুধু নারীকেন্দ্রিক ছবিতেই কাজ করব। কিন্তু তেমন নয়। আমার ১৫ মিনিটের চরিত্র হলেও চলবে। কিন্তু সেটা যেন প্রপ হয়ে না থাকে। যেন আমার গোটা ছবিতে আমার চরিত্রটার কিছু মূল্য থাকে। বছরে আমার হাতে কতগুলো ছবি আছে, সেই তালিকা বাড়ানোর জন্য আমার ছবি করার প্রয়োজন নেই। আমি এমনিই যথেষ্ট প্রচারের আলোয় থাকি। সমাজমাধ্যমেও আমার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তিন, আমি প্রযোজনা সংস্থাটাও দেখি। কারণ প্রত্যেকটা ছবির পিছনে আমি খুব খাটি। ‘ব্রহ্মা..’-র জন্য আমি পৌরোহিত্য শিখেছিলাম, ‘ফাটাফাটি’-র জন্য আমি ২০ কেজি ওজন বাড়িয়েছি। একবারে একটাই ছবির শুটিং করি। প্রচারও মন দিয়ে করি। এত কিছু করার পরও যদি সেই ছবি দর্শকের কাছে ঠিক করে না পৌঁছয়, তা হলে আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ি।

প্রশ্ন: প্রচুর ছবি যেমন দর্শকের কাছে ঠিক মতো পৌঁছয় না, তেমনই টলিউডে অনেক ছবি পৌঁছেও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারে না। ইন্ডাস্ট্রির হাল কি ভাবাচ্ছে?

ঋতাভরী: না না, পুরো ইন্ডাস্ট্রির ভার আমার উপরে নাকি? আমি একদমই ভাবছি না। বলিউড-টলিউড— সব জায়গাতেই হিটের সংখ্যা কমে গিয়েছে। ফোনে যখন ইচ্ছে যে কোনও ধরনের কনটেন্ট দেখা যায়। তা হলে একই ছবি বানালে দর্শক কেন দেখবেন? সকলকে নতুন চিন্তাভাবনা করতে হবে। ‘পাঠান’ বা ‘ব্রহ্মাস্ত্র’-এর গল্পে কী আছে বলুন? কিন্তু ওই ছবিগুলো বড় পর্দায় দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। তাই মানুষ হলে গিয়ে দেখেছেন।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এখন তারকাদের কাছে সমাজমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ বিষয়ে টলিউডে আপনিই তো ট্রেন্ডসেটার?

ঋতাভরী: তখন লোকে কত কথা শুনিয়েছিল। সবাই বলাবলি করত, কোনও কাজ না করে খালি ইনস্টাগ্রামের জন্য শুট করে। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে, সেটা পুরোপুরি না বুঝলেও আমি সে সময়ে বুঝেছিলাম, এটাই ভবিষ্যৎ। এটাই একমাত্র মাধ্যম, যেখানে আমার নিজের কনটেন্টের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। আর দেখুন, সেটা করেই এখন আমি লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করি। এটা ভাঙিয়েই আমি প্রচুর ছবি ‘না’ করতে পারি। আমি এখনও পর্যন্ত যে যে ছবি করেছি, প্রত্যেকটা নিয়েই গর্ব করতে পারি। আর সে সময় সমাজমাধ্যমকে গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলেই এখন ফ্লপ ছবির পাহাড়ে বসে নেই।

প্রশ্ন: এর ভরসাতেই কি এতগুলো বছর টলিউ়ডে কোনও গডফাদার বা বড় প্রযোজনা সংস্থার উপর নির্ভর না করেই কাটিয়ে দিলেন?

ঋতাভরী: যখন কেরিয়ার শুরু করি তখন দেখতাম, সকলেরই কেউ না কেউ আছে। হয় মেন্টর, নয় গডফাদার, না হলে প্রেমিক বা স্বামী। তখন ছোট ছিলাম তো, আমারও মনে হতো, এগুলো না থাকলে বোধহয় পথটা খুব কঠিন। একটা কেউ থাকলে ভালই হত। আসলে সব সময় নিজের মতো চলেছি। কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, কেউ বলে দেওয়ার ছিল না। তবে এখন মনে হয়, ভালই হয়েছে। ১৫ বছরের কেরিয়ারে যখন কাউকে লাগেনি, যখন নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করে প্রথম সারিতে থাকতে পেরেছি, তখন ভবিষ্যতেও পারব। যে হেতু পথটা সম্পূর্ণ নিজের, তাই আমার আগে-পিছনে কেউ নেই। এবং জানি ১০ বছর পরও পারব। যদি সব সময় কারও উপর ভরসা করে থাকতাম, তা হলে এখন এতটা আত্মবিশ্বাস পেতাম না।

প্রশ্ন: আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বরাবরই লেখালিখি হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি আপনার বিচ্ছেদ নিয়ে কিছু প্রতিবেদন দেখে এত বেশি রেগে গেলেন কেন?

ঋতাভরী: এমনিতে আমার কিছু যায়-আসে না, আমার সম্পর্ক নিয়ে কী লেখা হচ্ছে তাতে। কিন্তু আমি আমার পরিবার নিয়ে খুব প্রোটেক্টিভ। কিছু প্রতিবেদনে আমার আর তথাগতর (চট্টোপাধ্যায়) পরিবার নিয়ে কিছু কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়, যেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সেটা নিয়েই আমি রেগে যাই।

প্রশ্ন: তথাগত পেশায় চিকিৎসকইন্ডাস্ট্রির বাইরের বলেই কি নানা রকম কটাক্ষে বেশি প্রভাবিত হন?

ঋতাভরী: বরং উল্টোটা। ও খুবই ঠান্ডা মাথার। কিন্তু আমি যখনই ওর সঙ্গে কোনও ছবি পোস্ট করেছি, দেখেছি উল্টোপাল্টা মন্তব্যে ভরে গিয়েছে। বিশেষ করে, ওর চেহারা নিয়ে নানা রকম কটু কথা বলা হত। ওর কিছু মনে না হলেও আমি সেগুলো নিতে পারতাম না। আমি তো রক্ত-মাংসের মানুষ। তাই আমি পোস্ট করা বন্ধ করে দিই। ঠিক করেছিলাম, যে দিন কোনও রকম মন্তব্য আমায় প্রভাবিত করবে না, সে দিন আবার ছবি পোস্ট করব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement