Aarya

থ্রিলার আর আবেগের মিলমিশে পোক্ত কাঠামো

রাম মাধবানী, সন্দীপ মোদী, বিনোদ রাওয়ত পরিচালিত ‘আরিয়া’ ছকে বাঁধা হলেও বেশি নম্বর পাবে।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০০:১০
Share:

আরিয়া ছবির একটি দৃশ্যে সুস্মিতা সেন।

আরিয়া (ওয়েব সিরিজ়)

Advertisement

পরিচালনা: রাম মাধবানী, সন্দীপ মোদী, বিনোদ রাওয়ত

অভিনয়: সুস্মিতা, চন্দ্রচূড়, নমিত, মণীশ

Advertisement

৬.৫/১০

কোনও ফর্মুলা কাজে লেগে গেলে সেই ধাঁচ অনুযায়ী চলার একটা প্রবণতা থাকে। ভারতীয় ওয়েব সিরিজ়ে যে কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, সেখানে পুলিশ-মাফিয়া ধরপাকড়, খুন, ড্রাগের কারবার প্রায় বাধ্যতামূলক। তার সঙ্গে খানিক পুরাণ-ধর্মতত্ত্ব গুঁজে দিলে কাহিনিতে একটা ‘দেসি’ ফ্লেভারও চলে আসে। এ বার তা কতটা উপাদেয় ভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে, তার উপরেই ভাল-মন্দ নির্ভর করছে।

রাম মাধবানী, সন্দীপ মোদী, বিনোদ রাওয়ত পরিচালিত ‘আরিয়া’ ছকে বাঁধা হলেও বেশি নম্বর পাবে। কখন কাহিনির সুতো ছাড়তে হবে আর কখন গোটাতে, সেই হিসেব ঠিক মতো কষতে পারলে সিরিজ় হিট। চোর-পুলিশ, পেশাগত শত্রুতার ট্র্যাকে চললেও একজন মহিলার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানোর ফলে যাবতীয় ক্লিশে এড়াতে পেরেছেন নির্মাতারা। মুম্বই, দিল্লি বা ইউপি-র বদলে রাজস্থানকে প্রেক্ষাপট করাটা ভাল স্ট্রোক।

আরিয়ার (সুস্মিতা সেন) পরিবারের ড্রাগসের ব্যবসা। সেটার দায়িত্বে আরিয়ার স্বামী তেজ (চন্দ্রচূড় সিংহ), ভাই সংগ্রাম (অঙ্কুর ভাটিয়া) এবং বন্ধু জওহর (নমিত দাস)। আসল ওষুধের ব্যবসার আড়ালে চলে আফিম মেশানো ওষুধের বিক্রিবাটা। নিজেদের ক্ষেতে চাষ হয় ওপিয়ামের, যা থেকে আফিম, হেরোইন দুই-ই তৈরি করা যায়। লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও হেরোইনের ব্যবসায় পা বাড়ায়নি আরিয়ার পরিবার। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু... সংগ্রাম একদিন হেরোইনের কারবারি শেখাওয়াতের (মণীশ চৌধুরী) ৩০০ কোটি টাকার মাল কব্জা করে। এখান থেকেই জটিলতার শুরু। খুন হয় তেজ। তাকে কে মেরেছে, কেন মেরেছে? এই হিসেব বারবার গুলিয়ে যেতে থাকে। ঘরে-বাইরে শত্রু, বন্ধুর বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে... কোণঠাসা আরিয়ার লড়াই শুরু হয়। যে ব্যবসার হাত থেকে সে পালাতে চাইত, শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্ব নিতে হয় তাকে।

কেঠো লড়াইয়ের পাশাপাশি ছবির প্রতিটি চরিত্রের ব্যক্তিগত দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। থ্রিলার আর আবেগ এখানে হাত ধরাধরি করে চলে, যা কাহিনির কাঠামোকে মজবুত করে। যে পরিবারের জন্য আরিয়ার এত লড়াই তারা কি সেটা পাওয়ার সত্যিই যোগ্য? খানিক আগে যে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরেছিল, সেই মৃত্যুদূত পাঠাবে না তো? চরিত্রদের একাধিক পরত, কাহিনির মোচড় ন’এপিসোডের সিরিজ়কে ঢিলে দেওয়ার জায়গা দেয়নি। আরিয়ার বাড়ির সামনে খানের নামাজ পড়া, কিডন্যাপ করা আরুকে স্যানিটারি ন্যাপকিন এনে দেওয়া সম্পত... ছোট ছোট ন্যুয়ান্স নজর কাড়ে। প্রতিটি চরিত্র তৈরির পিছনে যে যত্নের ছাপ রয়েছে, তার জন্য নির্মাতাদের ধন্যবাদ। চমক দেওয়ার অভিপ্রায়ে অনেকেই নির্মাণে যত্নের কথা ভুলে যান। এই সিরিজ় কিছু পুরনো অভিনেতা আর গান মনে করিয়ে দিল। ‘বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়’, ‘কিসকা রাস্তা দেখে’-র মতো পুরনো গান টাটকা বাতাসের মতো।

‘আরিয়া’ আগাগোড়া সুস্মিতার সিরিজ়। অনেক দিন পরে একটা জোরালো চরিত্র পেয়েছেন তিনি। সিরিজ়ের বাকি অভিনেতারা নিজেদের কাজে এতটাই দড় যে, সুস্মিতাকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়েছে। কোনও দিনই তাঁকে উচ্চমানের অভিনেত্রী হিসেবে গন্য করা হয়নি। সুস্মিতা লড়ে গিয়েছেন তাঁর স্ক্রিন প্রেজ়েন্স দিয়ে। তবে কোণঠাসা, বিধ্বস্ত অবস্থার দৃশ্যগুলোয় তাঁর অভিব্যক্তিতে স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব বোধ হয়। যেটা মায়ার (মায়া সারাও) মতো ছোট চরিত্র করা অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে হয়নি। চন্দ্রচূড় সিংহকে এত দিন পরে পর্দায় দেখে ভাল লাগে। নমিত দাস, জয়ন্ত কৃপালিনী, মনীশ চৌধুরী, বিকাশ কুমারেরা নিজেদের কাজটা দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। দৌলতের (সিকন্দর খের) চরিত্রটা এই সিজ়নে স্পষ্ট হল না। তবে আগামী সিজ়নের ইঙ্গিত তো দেওয়াই আছে।

ডাচ সিরিজ় ‘পেনোজ়া’র আধারে তৈরি ‘আরিয়া’র মৌলিকত্ব নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। তা ছাড়া ‘গডফাদার’-এর ছাপ নেই এমন মাফিয়া সিরিজ় বোধহয় খুব কম। তা সত্ত্বেও স্রেফ পরিবেশনার গুণে ছকের গল্প, ছক ভেঙেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement