‘বান্টি অওর বাবলি টু’ ছবির দৃশ্য
বান্টি অওর বাবলি টু
পরিচালক: বরুণ ভি শর্মা
অভিনয়: সেফ, রানি, সিদ্ধান্ত, শর্বরী, পঙ্কজ
৫/১০
বিজয়, রাহুল, প্রেম-এর মতোই বান্টি আর বাবলিও বলিউডের দুই ‘ব্র্যান্ড নেম’। সেই নামের ওজন কম নয়, যখন যশ রাজ ফিল্মসের ঘর থেকে তৈরি হয় সেই ব্র্যান্ড। আর তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ষোলো বছর পরেও লক্ষ-কোটি টাকার লগ্নি করেন প্রযোজক আদিত্য চোপড়া। এবং প্রায় দেড় বছর ধরে অপেক্ষা করেন, অতিমারি-শেষে ছবিটা যাতে সিনেমা হলে মুক্তি পায়। রানি মুখোপাধ্যায়-অভিষেক বচ্চনের বান্টি-বাবলিকে যাঁরা ভালবেসেছিলেন, তাঁরা তো বটেই, এখনকার কলেজপড়ুয়াদেরও আগ্রহ তৈরি হয়েছে এই সিকোয়েল ঘিরে। সে প্রত্যাশা কতটা পূরণ করলেন নতুন বান্টি-বাবলি? নাকি বহুবচনে বলাই ভাল?
এ ছবিতে এক জোড়া বান্টি-বাবলি। রাকেশ, ওরফে বান্টির চরিত্রে অভিষেকের জায়গায় এসেছেন সেফ আলি খান। বাবলি ওরফে ভিম্মির (রানি মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে বিয়েও হয়ে গিয়ে ছেলেকে নিয়ে ভরা সংসার তাদের। এই জুটি এখন ছাপোষা মধ্যবিত্ত। অন্য দিকে, কুণাল আর সোনিয়ার (সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী ও শর্বরী) জুটির উদয় হয় আচমকাই। যে দুই কন আর্টিস্ট হুবহু বান্টি-বাবলিরই কায়দায় লোক ঠকানোর ব্যবসায় নামে। কাজের শেষে রেখে যায় বিখ্যাত ‘বি-বি’ লোগো! এখানে দশরথ সিংহের (অমিতাভ বচ্চনের চরিত্র) বদলে আসেন জটায়ু সিংহ (পঙ্কজ ত্রিপাঠী)। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার উদ্দেশ্যে এই জোড়া বান্টি-বাবলির চার হাত এক করার কাজে নামে জটায়ু। বাকিটা গল্প। যে গল্পের গরু কখনও-সখনও গাছে উঠেছে, হড়কে নেমেওছে। তবে মোটের উপর বিনোদন জুগিয়ে গিয়েছে।
অভিষেকের জায়গায় সেফকে মেনে নেওয়া গেলেও বেশি বয়সের বান্টি-বাবলির বয়স কমানোর উগ্র চেষ্টা বেশ চোখে লাগে। ছবিতে সেফ-রানির কমিক টাইমিং যতটা ভাল, পোশাক পরিকল্পনা ততটাই বিসদৃশ। বিশেষ করে রানির ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক! ছবির প্রথমার্ধ টানটান। চুরির সবক’টি ছক তেমন না জমলেও শর্বরী আর সিদ্ধান্তের জুটি কাহিনির গতিতে অক্সিজেন জুগিয়েছে যেন। বিদেশি লোকেশন, আইটেম ডান্স বা সাধারণ দৃশ্যেও এই জুটিকে একসঙ্গে দারুণ দেখিয়েছে! রানি-সেফের কেমিস্ট্রি আবার অন্য জায়গায়— যাকে বলে ‘পোড় খাওয়া’ জুটি। পঙ্কজ ত্রিপাঠী এখানেও স্বমহিমায়। তবে মেনস্ট্রিম বলিউড এখনও তাঁকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।
গল্পে একটু একটু করে ভারতামাতা, কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা সংস্কার প্রকল্প, নেত্রীর জন্মদিনে চাঁদা আদায়ের জুলুম, বান্টি-বাবলির ‘রবিনহুড’ অবতার... সবই ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবটাই উপর-উপর যদিও। এক দিকে ‘হ্যাভ নটস’দের গল্প, অন্য দিকে আবু ধাবির বিলাসবহুল এমিরেটস প্যালেস দেখে মনে পড়তে পারে বীর দাসের সাম্প্রতিক ‘টু ইন্ডিয়াস’ মোনোলগ। শেষে গিয়ে চিত্রনাট্যের হিসেব জোর করে মেলানোর চেষ্টাই নড়বড়ে করে দেয় গোটা প্লট।
যশ রাজের কার্পণ্যহীন, বড় বাজেটের ছবি মানেই চোখের আরাম। তবে সেটাই সব হয়ে ওঠার আশঙ্কা এখানে কিছুটা হলেও সত্যি হয়েছে। আবু ধাবির অংশের গল্পটুকু হারিয়ে গিয়েছে সেখানকার জৌলুসেই। ‘লাভ জু’ ছাড়া বাকি গানগুলি মনে রাখার মতো নয়। ছবিটি মাঝে মাঝে নির্ভেজাল কমেডি উপহার দিয়েছে। কোনও দৃশ্যে আবার রানির ‘মর্দানী’র ঝলক পাওয়া গিয়েছে কয়েক মুহূর্ত। ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে শেষ হয় ছবি। তবে দর্শক অপেক্ষা করবেন তো?