Ghoomketu

অনেক ছবি হারিয়ে যায়...

তাবড় অভিনেতাদের নিয়ে কী ভাবে এত দুর্বল চিত্রনাট্যের ছবিটি তিনি বানালেন, সেটা তাজ মহলের স্থাপত্যের চেয়েও কম আশ্চর্যের নয়!

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০০:০২
Share:

ঘুমকেতুর একটি দৃশ্য

ঘুমকেতু
পরিচালনা: পুষ্পেন্দ্র নাথ মিশ্র
অভিনয়: নওয়াজ়উদ্দিন, অনুরাগ, রঘুবীর, ইলা
৩/১০

Advertisement

মুম্বই এমন একটি শহর, যেখানে অনেক ভাল মানুষ হারিয়ে যায়। ঘুমকেতুর লেখা এই সংলাপ একটি ভেলপুরির ঠোঙায় পড়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে (ছবিতেও সুপারস্টার অমিতাভের চরিত্রে) নিজের ছবিতে সংলাপটি আওড়ে নেন অমিতাভ বচ্চন। গ্রামের সাদামাঠা থিয়েটারের পর্দায় এই সংলাপ শুনে ঘুমকেতু উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। তবে সেই উত্তেজনার রেশ দর্শককে স্পর্শ করবে না। কারণ শেষ হওয়ার বেশ অনেকক্ষণ আগেই ছবিটি হারিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে আপনার মনন, আপনার ভাবনা থেকে...

পুষ্পেন্দু নাথ মিশ্রের লেখা ও পরিচালিত ‘ঘুমকেতু’ ছবিটি লকডাউনের বাজারে হয়তো কিছু ফায়দা তুলতে চেয়েছিল। কারণ ছবিটির অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা ফ্যান্টম ফিল্মস, যা ভেঙে গিয়েছে বছর দুয়েক আগেই। নেটফ্লিক্সের অন্যতম জনপ্রিয় সিরিজ় ‘তাজ মহল ১৯৮৯’-এর পরিচালক পুষ্পেন্দু। কিন্তু সেই সিরিজ়ের পরিচালকের সঙ্গে এ ছবির পরিচালককে মেলাতে যাবেন না। তাবড় অভিনেতাদের নিয়ে কী ভাবে এত দুর্বল চিত্রনাট্যের ছবিটি তিনি বানালেন, সেটা তাজ মহলের স্থাপত্যের চেয়েও কম আশ্চর্যের নয়!

Advertisement

অনুরাগ কাশ্যপ ঘরানার মূল ভাবনা, স্বপ্ননগরী মুম্বইয়ের হাতছানি, হিন্দি ছবির প্রতি একনিষ্ঠ ভালবাসা এবং পিতা-পুত্রের দ্বন্দ্ব... এই তিনটিকে সত্তরের দশকের টাইমলাইনে রেখে ‘স্পুফ’জাতীয় কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু শুধু মাত্র সময় ও প্রতিভার অপচয় ছাড়া ছবিটি আর কিছুই দাঁড়ায়নি।

ছবির নামচরিত্রে নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি। ট্রেলারে-পোস্টারে তাঁর লম্বা চুল মনে করিয়ে দিচ্ছে, সময়টা কয়েক দশক পিছিয়ে। তাঁর নেমেসিসের চরিত্রে অনুরাগ কাশ্যপ, ইনস্পেক্টর বদলানি। নওয়াজ়ের বাবার চরিত্রে রঘুবীর যাদব এবং পিসির ভূমিকায় ইলা অরুণের অনেকটা জায়গা রয়েছে। ছবির গতি, ভাবনা, পরিবেশন ও গল্প নিয়ে এত অভিযোগ মাথায় আসবে যে, অভিনয়ের তারিফও করতে ইচ্ছে করবে না। তবে অনেক দিন পরে একটি বড় চরিত্রে ইলাকে দেখতে বেশ ভাল লাগে। নওয়াজ়-অনুরাগের চেয়ে তাঁর গ্রাম্য কথন এবং শরীরী ভাষা বেশি নজর কেড়েছে। নওয়াজ় এবং ইলার দৃশ্যগুলিই ছবির খুচরো ভাল লাগা।

হিন্দি ছবির একশো বছর উপলক্ষে নির্মিত ‘বম্বে টকিজ়’-এর অন্যতম পরিচালক ছিলেন অনুরাগ। ‘ঘুমকেতু’ সেই ভাবনারই একটি বর্ধিত অথচ নিম্ন-মেধার রূপায়ণ। ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’খ্যাত সুরকার স্নেহা খানওয়ালকারের সঙ্গীতও ছবিতে বাড়তি কিছু যোগ করে না।

নেটফ্লিক্সে ‘তাজ মহল...’ এর মতো পিরিয়ড ড্রামাও যখন ২০২০-এর দর্শকের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে, তখন এই ছবির ব্যর্থতা একটি প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করে। শুধু মাত্র বানানোর জন্য কোনও কিছু বানালে বা লিখলে তা কি সময়ের গর্ভে চিরস্থায়ী হয়? সময় যে মুম্বইয়ের চেয়েও নিষ্ঠুর ও ‘নাজ়ুক’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement