সাদাকালো যুগের এই নায়িকার ইচ্ছে ছিল তাঁর ছেলেও অভিনয় জগতে আসুক। কিন্তু মায়ের স্বপ্ন পূরণ হল না। বড় হয়ে বাবার মতো ব্যবসায়ী হল ছেলে। মায়ের বায়োস্কোপ নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল না। কিন্তু বেশ কয়েক দশক পরে অতীতের নায়িকা চাঁদ বার্কের ইচ্ছে পূর্ণ করেছিলেন তাঁর নাতি, বিট্টু। বলিউডের প্রথম সারির নায়ক রণবীর সিংহ হয়ে।
পরিবারের ঘনিষ্ঠরা বলেন, অভিনয় প্রতিভার পাশাপাশি প্রাণবন্ত স্বভাবও রণবীর পেয়েছেন ঠাকুমা চাঁদের কাছ থেকেই। চাঁদের জন্ম হয়েছিল ১৯৩২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, অবিভক্ত ভারতের ঝুমরাহ-তে। এখন এই অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্গত। চাঁদের বাবা মা ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
বারো জন ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে ছোট চাঁদ ছোট থেকেই সপ্রতিভ। লেখাপড়া হোক, বা নাচগান। সব কাজই তাঁর নিখুঁত ভাবে করা চাই। কৈশোর থেকেই তাঁর খুব অভিনয় করার শখ। শখ পূর্ণ করার জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৯৪৬ সালে চোদ্দ বছর বয়সে প্রথম পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। সে ছবির নাম ছিল ‘কহাঁ গ্যয়ে’।
কয়েক দিনের মধ্যেই প্রথম ছবির পরিচালক নিরঞ্জনকে বিয়ে করলেন চাঁদ। বিয়ের পরে বেশ কয়েকটি পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তিনি ছিলেন পঞ্জাবি ছবির পরিচিত মুখ। অভিনয়ের সঙ্গে নাচেও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। তাঁকে বলা হত ‘ডান্সিং লিলি অব পঞ্জাব’।
হিন্দি ছবিতে তাঁকে প্রথম ব্রেক দেন রাজ কপূর। রাজ কপূরের পরিচালনায় চাঁদের প্রথম হিন্দি ছবি ‘বুট পলিশ’ মুক্তি পায় ১৯৫৪ সালে। সে বছরই চাঁদের সঙ্গে তাঁর প্রথম স্বামীর বিয়ে ভেঙে যায়।
রাজ কপূরের কাছে গিয়ে অভিনয়ের সুযোগ চেয়েছিলেন। চাঁদের সপ্রতিভতায় খুশি হয়েছিলেন পরিচালক রাজ কপূর। ‘বুট পলিশ’-এ এক মুখরা তরুণীর ভূমিকায় চাঁদের অভিনয় নজর কেড়েছিল দর্শকদের।
এছাড়াও ‘বসন্তবাহার’, ‘লাজবন্তী’, ‘আদালত’-সহ বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে পার্শ্বনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন চাঁদ। ১৯৫৭ সালে তিনি বিয়ে করেন আর্কিটেক্ট তথা ব্যবসায়ী সুন্দর সিংহ ভবনানীকে। দ্বিতীয় বিয়ের পরে ছবিতে অভিনয় করা কমিয়ে দিয়েছিলেন চাঁদ। তাঁর শেষ ছবি ‘পরদেশাঁ’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৯ সালে।
চাঁদ চেয়েছিলেন তাঁর ছেলে যুগজিৎ যেন অভিনয়কে পেশা করেন। কিন্তু মাকে নিরাশ করেন যুগজিৎ ওরফে ছোটু। তিনি বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। যুগজিৎ সিংহ ভবনানী এখন মুম্বইয়ের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। সুন্দর ও চাঁদের মেয়ে টোনিয়া বিয়ের পরে এখন থাকেন আমেরিকায়।
যুগজিতের স্ত্রী অঞ্জুও ফিল্ম দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁদের ছেলে রণবীরের জন্ম হয় ১৯৮৫-র ৬ জুলাই। তিনি প্রথম অভিনয় করেন ২০১০ সালে, ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’ ছবিতে। বলিউড তারকা রণবীর অবশ্য পদবিতে ‘ভবনানী’ ব্যবহার করেন না। নামের পাশে শুধু সিংহ লেখেন।
নাতির নায়ক হওয়া অবশ্য দেখে যেতে পারেননি। রণবীর অভিনয় শুরু করার দু’ বছর আগে ২০০৮ সালে প্রয়াত হন অতীতের তারকা চাঁদ। তাঁর বিশ্বাস ছিল, আদরের নাতি ‘বিট্টু’ একদিন সফল তারকা হবেন। সেই বিশ্বাস বাস্তবায়িত হয়েছে।
চাঁদের স্বামী সুন্দর সিংহ এবং অনিল কপূরের শ্বশুরমশাই অর্থাৎ সোনম কপূরের দাদু সম্পর্কে দুই ভাই। সে দিক দিয়ে রণবীর সিংহ আত্মীয় হন অনিল কপূরের পরিবারের।
জীবনের খারাপ সময়েও হাসিমুখে থাকতে ভালবাসতেন চাঁদ। বলতেন, জীবনে যা পাননি, সেটা স্বপ্ন। আর যা পেয়েছেন, সেটা স্বপ্নের থেকেও সুন্দর। সুপারস্টার নাতি ও নাতবৌয়ের হাত ধরে তাঁর পরিবারে আবার ফিরে এসেছে লাইট সাউন্ড ক্যামেরার পরিবেশ।