ফের মানবিক রাজ।
ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত ‘মানুষ মানুষের জন্য’ গানে আছে— ‘বলো কী তোমার ক্ষতি/ জীবনের অথৈ নদী /পার হয় তোমাকে ধরে / দুর্বল মানুষ যদি?’ সেই লিরিককে সত্যি প্রমাণ করে একটি ঘটনায় দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং ব্যারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী।
জুন মাসের গোড়ায় ঘটনার সূত্রপাত। ৬ জুন একটি ফেসবুক পেজ থেকে অনিন্দিতা ঘোষের সংগৃহীত একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়। যেখানে দেখা যায়, লকডাউনের কলকাতার রাস্তায় দক্ষ হাতে বেহালা বাজিয়ে চলেছেন একজন বৃদ্ধ। মলিন বেশ, উস্কোখুস্কো চুল দাড়ি। বেহালা বাজিয়ে ইনি কি ভিক্ষা করছেন? লকডাউনে পথঘাট সব তো ফাঁকা!
ভিডিয়োটি নেটমাধ্যমে চোখে পড়ে রাজ চক্রবর্তীর। ৯ জুন রাজ চক্রবর্তী পোস্টটি শেয়ার করে জানান, শিল্পীর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করিয়ে দিলে ভাল হয়। ঘটনাচক্রে বিশ্ব সঙ্গীত দিবসেই রাজের সঙ্গে দেখা হয় এই শিল্পীর। জানা যায়, তাঁর নাম ভগবান মালি। কয়েক জন শুভানুধ্যায়ীর মাধ্যমে ভগবান মালির সঙ্গে রাজের সাক্ষাৎ হয়। রাজ শোনেন অতিমারি সময়ের আরেক করুণ কাহিনি।
ভগবান মালদহের মানুষ। গত বছর সদ্যোজাত নাতনিকে দেখতে অসুস্থ স্ত্রীকে সঙ্গে করে কলকাতায় আসেন। কিন্তু আটকা পড়ে যান লকডাউনে। বাড়ি ফিরতে পারেননি। এ দিকে কষ্টে থাকা মেয়ের সংসার লকডাউনে আরও শোচনীয়। নিরুপায় ভগবান মালি বেহালা নিয়ে নেমে পড়েন পথে। গিরিশ পার্ক অঞ্চলের ফুটপাথে বেজে চলে রোজ বেহালার মর্মস্পর্শী সুর। যদিও লকডাউনে রাস্তাঘাটে লোকজন কম, তবু সারাদিনে দু-পাঁচজন মুগ্ধ শ্রোতা যেটুকু তাঁর হাতে দেন, তাই দিয়েই চালাতে হয় সব কিছু।
শিল্পীকে দুরবস্থার হাত থেকে যতটা সম্ভব মুক্তি দিতে সক্রিয় হন রাজ। স্থানীয় বিধায়ক, মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে কথা বলে রাজ চক্রবর্তী তাঁর থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পেশাদার সঙ্গীত জগতে ভগবানকে বেহালা বাজানোর সুযোগ করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর ছোট্ট নাতনির জন্যও সাধ্যমতো করবেন রাজ, এ কথা শুনে ভগবান মালি বেশি খুশি।
রাজ অবশ্য কৃতিত্ব নিতে রাজি নন। তিনি বলেন, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো সকলেরই কর্তব্য। রাজ চক্রবর্তীর ভক্তরা অবশ্য বার বার তাঁর মানবিক আচরণে মুগ্ধ।