রাজবাড়িতে ভূতের কেত্তন!
ভাগীরথীর তীরে এক টুকরো মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ। বাংলার নবাবদের এলাকায় ছবির শ্যুটিংয়ের বন্দোবস্ত। এমন এক প্রাচীন, গা ছমছমে এলাকায় একবারও ভূত দেখা না দিলে হয় নাকি! সায়নদীপ চৌধুরীর প্রথম ছবি ‘আসমানী ভোর’ ছবির শ্যুটিংয়ে দেখা দিলেন তাঁরাও। সাক্ষী খোদ ছবির নায়িকা পূজারিণী ঘোষ।
আজিমগঞ্জের এক রাজবা়ড়িতে সেট ফেলা হয়েছে। তিন দিন সেখানেই কাজ চলবে।
প্রথম দিন
বিকেল। রাজবাড়ির এক ঘরে বিশাল এক খাট। পূজারিণীকে সেখানে উঠে বসতে হবে। তার পরে সংলাপ বলার কথা তাঁর। খাটে উঠে বসার কয়েক মুহূর্ত পরে এক পায়ের নূপুর খুলে গেল। তখন অবশ্য কোনও অস্বস্তি হয়নি নায়িকার। হতেই তো পারে। নূপুরের গিঁটে কোনও সমস্যা আছে হয়তো। নিজেই ফের নুপূর পরে নিলেন পূজারিণী। শট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আবার পরের শটও সেই খাটের উপরেই।
আবার এক কাণ্ড! কিন্তু এ বার অন্য পায়ের নূপুর খুলে গেল। তিন চার বার একই ঘটনা। এক বার ডান পা, এক বার বাঁ পা। বুঁক কেঁপে উঠল পূজারিণীর। কেন এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে? উত্তর নেই। মনের ভিতরে ভয়টাকে গেঁড়ে বসতে দেওয়া যাবে না। আরও দু’দিনের কাজ বাকি এই বাড়িতে।
অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন পূজারিণী
দ্বিতীয় দিন
ফের একই ঘটনা পরের দিন। বার বার পূজারিণীর দু’পায়ের নূপুর খুলে প়়ড়ছে। ছবির শিল্প নির্দেশক এবং রূপটান শিল্পী দু’জনে মিলেই আলাদা আলাদা করে নূপুর পরিয়ে দিলেন পূজারিণীকে। শক্ত করে বেঁধে দিলেও পায়ে থাকতে চাইছে না যেন। এমনই ভাবে এক বার সকলের চোখের সামনে ঘটনাটি ঘটে। পূজারিণী খাটে উঠে বসেন। পা সামনের দিকে ছড়িয়ে রাখা। সব ঠিক ছিল। আচমকা নিজে নিজেই একটি পা থেকে নুপূর খুলে পরে যায়। এটা দেখার পর অস্বস্তি বাড়তে থাকে প্রত্যেকের মধ্যেই। কিন্তু কাজের ক্ষতি হতে পারে, এই ভাবনা থেকে কেউই তখনও মুখ খুলছেন না।
তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিন সকলের সহ্যের বাঁধ ভেঙে দিলেন সেই অশরীরীরা! শ্যুটিংয়ের শেষ দিন বলে কথা, ভূতেদের উপদ্রবও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছল সে দিন। শ্যুটিং চলাকালীন আচমকা পূজারিণী তাঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন, একটি পায়ে নূপুর নেই! এ দিকে সেই দৃশ্যে দু’পায়ের নূপুর ক্যামেরায় দেখা যাবে। সকলে মিলে সেটের মধ্যে নূপুর খুঁজতে লাগলেন। আধ ঘণ্টা কেটে গেল। এমনই সময়ে হঠাৎ পূজারিণী নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন, নূপুর রয়েছে নূপুরের জায়গাতেই। ধড়াস করে ওঠে বুক! অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে ওঠেন নায়িকা! সকলেই বুঝতে পারেন, এই ঘটনাটি স্বাভাবিক নয়। এর পর গোটা দিন পূজারিণী আর একা একা কোথাও যাওয়ার সাহস পাননি।
এই ঘটনার পরেই সেই রাজবাড়ির কর্মচারীরা জানান, দিন কয়েক আগে সেই রাজবাড়ির বৃদ্ধা রানিমার মৃত্যু হয়েছে। বয়স হয়েছিল ৯৬। যদিও তিনি সেখানে থাকতেন না। কলকাতায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
আজিমগঞ্জে একটি ঝিলের পাড়ে চাঁদের আলোয় বসে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন পূজারিণী। তখনই এই গল্পটি বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রানিমার মৃত্যুর সঙ্গে হয়তো নূপুরের ঘটনার কোনও মিল নেই। কিন্তু সেই মুহূর্তে নানা কিছু তত্ত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছিল আপনা আপনি।’’ কিন্তু এমন একটি ঘটনায় দমে যাননি অভিনেত্রী। আবার দরকার পড়লে সেই রাজবাড়িতে ঘুরতে যেতে চান পূজারিণী। দরকারে শ্যুটও করতে পারেন। ১৫ দিন ধরে টানা একটি জায়গায় থাকা, এমন কয়েকটি অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে তবেই তো অভিজ্ঞতা বাড়ে!