রিয়েলিটি শো-এর মরসুম জুড়ে তিনি-ই সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। পেয়েছিলেন দ্বিতীয় স্থান। আজ, সে সব পুরনো দিনের কথা ফেলে এসে নতুন স্বপ্ন বুনে চলেছেন দর্শন রাভাল। নতুন প্রজন্মের কাছে অন্যতম জনপ্রিয়তম গায়ক এই সুদর্শন তরুণ।
দর্শনের জন্ম ১৯৯৪-এর ১৮ অক্টোবর, গুজরাতের আমদাবাদে। তাঁর বাবা রাজেন্দ্র রাভাল একজন লেখক। মা, রাজল গৃহবধূ। আমদাবাদের শ্রী স্বামীনারায়ণ গুরুকুল থেকে পড়াশোনা করেন দর্শন।
ছোটবেলায় আবাসিক স্কুলে থাকার সময় দর্শনের বাড়ির জন্য খুব মনখারাপ করত। মনখারাপ হলেই তিনি স্কুলের মিউজিক রুমে গিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন। সে সময় বন্ধুরা হয়তো সাঁতার কাটতে যেত। অথবা ঘোড়সওয়ারি করত। কিন্তু দর্শনের ভাল লাগত গান শুনতে। সুরের ছন্দে মনখারাপ ধীর ধীরে কমে যেত।
মনখারাপের ওষুধ হিসেবেই গানের প্রতি ভালবাসা। সে ভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়নি কোনওদিন। স্কুলের পরে দর্শন ভর্তি হয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। কিন্তু ক’দিনেই বুঝলেন ওই কাজ তাঁর জন্য নয়। কলেজের পড়াশোনাতেও তথৈবচ অবস্থা। শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে বরাবরের জন্য চলে এলেন গানের দুনিয়ায়।
ভাল লাগে সোনু নিগম, অরিজিৎ সিংহের গান। কিন্তু গান করার সময় তিনি সবসময় চান ‘দর্শন রাভাল’ হতে। বজায় রাখতে চান নিজস্বতা। সঙ্গে চলে গান লেখা এবং সুর দেওয়ার কাজও। তাঁর গান ইউটিউবে শুনে একজন রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়াজ র’স্টার’-এর কথা জানান।
২০১৪ সালে এই শো-এ দর্শনের পারফরম্যান্স খুবই জনপ্রিয় ছিল। তাঁর নিজের গান ‘পহেলি মহব্বত’ শ্রোতাদের মনে দাগ কেটেছিল। কিন্তু ফাইনালে তিনি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ঋতুরাজ মহান্তি। ছেলে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারায় ভেঙে পড়েছিলেন দর্শনের মা। কিন্তু তাঁর বাবা বলেছিলেন, আরও বড় কিছু ভবিষ্যতে অপেক্ষা করে আছে।
সত্যি হয়েছে দর্শনের বাবার কথা। ওই রিয়েলিটি শো-এর পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছেলের গানের জনপ্রিয়তা ও চাহিদা আকাশছোঁয়া। তবে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়। তিনি এর বাইরেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
২০১৪ সালেই প্রথম ছবিতে গানের সুযোগ। গুজরাতি ছবি ‘হুইস্কি ইজ রিস্কি’-তে তাঁর গান প্রশংসিত হয়। সে বছরই দর্শন বলিউডে প্রথম গান করেন। হিমেশ রেশমিয়ার সুরে ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ তাঁর হিন্দি ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক। দর্শন গেয়েছিলেন ‘যব তুম চাহো’ গানটি।
এরপর ‘তেরা সুরুর’, ‘সমন তেরি কমস’, ‘মিত্রোঁ’ ছবিতে দর্শনের গান শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণ করে। তবে সব হিসেব উল্টেপাল্টে যায় ‘লভযাত্রী’ ছবিতে। ২০১৮ সালে সলমন খান প্রোডাকশন্সের এই ছবিটি মুক্তি পায়। বক্স অফিসে সে রকম সাফল্য না পেলেও ছবিতে দর্শনের গলায় ‘চোগাড়া’ গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
‘লভযাত্রী’-র ‘চোগাড়া’ এবং ‘মিত্রোঁ’-র কামারিয়া গান দু’টিকে দর্শনের কেরিয়ারে মাইলফলক বলা যায়। এই গানের সুবাদে ইউটিউবে দর্শনের শ্রোতাসংখ্যা ছাড়িয়েছে কয়েক কোটি। কিশোরীদের তিনি হার্টথ্রব।
জনপ্রয়িতার ধারা বজায় আছে এ বছরেও। ‘এক লেড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লগা’ ছবিতে দর্শনের গান এখন জনপ্রিয়তার প্রথমসারিতে। সারা বছর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ। দর্শন এখন বলিউডের ব্যস্ত গায়কদের মধ্যে অন্যতম।
আকাশছোঁয়া খ্যাতির পরেও দর্শন তাঁর ‘ডাউন টু আর্থ’ ইমেজ ধরে রেখেছেন। সহজেই তাঁর নাগাল পেতে পারেন অনুরাগীরা। অটোগ্রাফ থেকে সেলফি, ভক্তদের নিরাশ করেন না চব্বিশ বছর বয়সী এই তারকা।
গানের পাশাপাশি আছে বাজনার শখও।দর্শন গিটার বাজাতে ভালবাসেন। তবে গানের মতো এখানেও তাঁর প্রথাগত শিক্ষা নেই। ইউ টিউব দেখে গিটার বাজাতে শিখেছেন দর্শন। আর ভালবাসেন বেড়াতে যেতে, বাড়িতে থাকলে পোষ্য কুকুরের সঙ্গে সময় কাটাতে।
এখনও নিজের কেরিয়ারকে একটা যাত্রাপথ হিসেবেই দেখতে পছন্দ করেন দর্শন। নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্য নেই। গান গাইতে গাইতে, নিত্যনতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ করাতেই এই তরুণ তুর্কীর পথ চলার আনন্দ। (ছবি: ফেসবুক)